বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নে কংগ্রেসে দীর্ঘকালীন অচলাবস্থার মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘মানবিক প্যারোল কর্মসূচি’র আওতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ইমিগ্রান্টকে বৈধতা দেওয়ার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুদ্ধ ও রাজনৈতিক গোলযোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজ নিজ দেশ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন, তারা এই কর্মসূচির আওতায় আসবেন বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। গত বছর, বিশেষ করে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অসংখ্য ইউক্রেনীয় নাগরিক দেশ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের বৈধতা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
হাইতি ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে আগতরাও এর আওতায় পড়বে। তবে তারা যে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন এবং তাদের দায়িত্ব কোনো বেসরকারি উদ্যোক্তা গ্রহণ করবেন মর্মে প্রত্যয়নের মাধ্যমে তারা দ্রুত ওয়ার্ক পারমিট লাভের সুযোগ পাবেন, যাতে তাদেরকে আর্থিক সংকটে পড়তে না হয়। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির হিসাব অনুযায়ী চলতি মাসের (এপ্রিল ২০২৩) মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় ইউক্রেনের প্রায় ৩ লাখ নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। এই সংখ্যা গত ৫ বছরে ইউএস রিফিউজি প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আগত ইমিগ্রান্ট সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
ধারণা করা হচ্ছে যে ২০২৩ সালের শেষদিক পর্যন্ত ব্যক্তিগত স্পন্সরশিপের আওতায় প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার ভেনিজুয়েলান, কিউবান, নিকারাগুয়ান ও হেইশিয়ান যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌছবেন এবং এই হারে প্রতিবছর ওই দেশগুলো থেকে ইমিগ্রান্ট গ্রহণ করা হবে। দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ হ্রাস করার জন্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এই সংখ্যা এই চারটি দেশ থেকে গত ১৫ বছরে ইস্যুকৃত ইমিগ্রান্ট ভিসা সংখ্যার চেয়েও অধিক। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মেয়াদে ‘টেম্পোরারি প্রটেক্টেড স্ট্যাটাস’ এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী লোকজনকে তাদের দেশে প্রেরণ ও সংশ্লিষ্ট আইনটি বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা আদালতের নির্দেশে বাতিল হয়নি। পিউ রিসার্চ সেন্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর ট্রাম্পের আদেশ বাতিল করে ‘টেম্পোরারি প্রটেক্টেড স্ট্যাটাস’ এর আওতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করেছেন। এর আওতায় ১৬টি দেশের প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। বর্তমানে এই কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ ইমিগ্রেশনের সবচেয়ে বড় ও সম্প্রসারিত কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক বাইপার্টিজান পলিসি সেন্টারের সিনিয়র এডভাইজার তেরেসা কার্ডিনাল ব্রাউন বলেছেন, ইমিগ্রেশন নিয়ে আইন প্রণয়নে কংগ্রেস যত দীর্ঘসূত্রিতা করবে, নির্বাহী বিভাগ তত বেশি চেষ্টা করবে প্রেসিডেন্টের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে। এক্ষেত্রে কেবল আদালত চ্যালেঞ্জ করতে পারে যে, নির্বাহী বিভাগ যা করছে তা প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্ব বহির্ভূত অথবা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ। ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে যারা কট্টর, তারা ইতোমধ্যে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন যে, বাইডেন প্রশাসন অনিয়ন্ত্রিত স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। পরিবার ভিত্তিক ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে যে ছাড় রয়েছে, বাইডেন প্রশাসন তা চাকুরির নিশ্চয়তার অজুহাতে ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন, এ ব্যাপারে কংগ্রেসের ভূমিকা থাকা উচিত।
কারণ কংগ্রেস ছাড়া ইমিগ্রেশনের ব্যাপক সংস্কার সম্ভব নয়। বাইডেন যখন তার পুন:নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পেইনে নামতে যাচ্ছেন, ঠিক তখন রিপাবলিকানরা বাইডেনের অনুমোদনযোগ্য নমনীয় ইমিগ্রেশন নীতির বিরোধিতাকে সামনে রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টেক্সাস, ফ্লোরিডা, টেনেসি ও আরকানসাসসহ বিশটি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত স্টেট কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের জন্য প্যারোল প্রোগ্রাম স্থগিত করতে ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করেছে যে এই দেশগুলো থেকে বার্ষিক ৩ লাখ ৬০ হাজার করে লোক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আলাবামার এক আইনজীবী যুক্তি প্রদর্শন করেছেন যে, প্যারোল কর্মসূচির আগেই এই স্টেটে বৈধতা ছাড়াই ৭৩ হাজার ইমিগ্রান্ট বাস করছে, যাদের ৬৮ শতাংশের কোনো মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স নেই এবং ৩৪ শতাংশের আয় দারিদ্রসীমার নীচে। এর ফলে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের পেছনে আলাবামাকে বার্ষিক ৩২৪.৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে।
Posted ৩:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh