বুধবার, ৮ মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

উন্মুক্ত বক্ষ বা খোলা মন

জাফর আহমাদ   |   বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

উন্মুক্ত বক্ষ বা খোলা মন

আরবী ‘শরহে সদর’ মানে উন্মুক্ত বক্ষ বা খোলা মন। ইসলামী পরিভাষায় পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনাবলীর দ্বারা শিক্ষা গ্রহণ এবং ইসলামকে অতকাট্য ও নির্ভূল সত্য বলে মেনে নেয়ার যোগ্যতাকে উন্মুক্ত বক্ষ বলে। এটি সম্পুর্ণভাবে আল্লাহর এক বিশেষ দান। কোন ব্যাপারে মানুষের বক্ষ উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া মূলত এমন একটি মানসিক অবস্থার নাম, যখন তার মনে উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোন দুশ্চিন্তা বা দ্বিধা-দ্বন্ব কিংবা সংশয় থাকে না এবং কোন বিপদের আভাস বা কোন ক্ষতির আশংকাও তাকে ঐ বিষয় গ্রহণ করতে বাধা দিতে পারে না। বরং সে পূর্ণ মানসিক তৃপ্তির সাথে এ সিদ্ধান্ত করে যে, এ জিনিসটি ন্যায় ও সত্য। তাই যাই ঘটুক না কেন আমাকে এর ওপরই চলতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন ব্যক্তি যখন ইসলামের পথ অবলম্বন করে তখন আল্লাহ ও রাসুলের পক্ষ থেকে যে নির্দেশই আসে তা সে অনিচ্ছায় নয় বরং খুশি ও আগ্রহের সাথে মেনে নেয়। কিতাব ও সুন্নাহ থেকে যে আকাঈদ ও ধ্যান ধারণা এবং যে নীতিমালা ও নিয়ম কানুন তার সামনে আসে তা সে এমনভাবে গ্রহণ যেন সেটাই হৃদয়ের প্রতিধ্বনি। কোন অবৈধ সুবিধা পরিত্যাগ করতে তার কোন অনুশোচনা হয় না। সে মনে করে ঐগুলো তার জন্য কল্যাণকর কিছু ছিল না। বরং তা ছিল একটি ক্ষতি যা থেকে আল্লাহর অনুগ্রহ রক্ষা পেয়েছে। অনুরূপ ন্যায় ও সত্যের ওপর কায়েম থাকার কারণে তার যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে সে সেই জন্য আফসোস করে না, ঠাণ্ডা মাথায় বরদাশত করে এবং আল্লাহর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরিবর্তে তার কাছে ঐ ক্ষতি হালকা মনে হয়। বিপদাপদ আসলে তার এ একই অবস্থা হয়। সে মনে করে আমার দ্বিতীয় কোন পথই নেই- এ বিপদ থেকে বাঁচার জন্য, যে পথ দিয়ে আমি বেরিয়ে যেতে পারি। আল্লাহর সোজা পথ একটিই। আমাকে সর্বাবস্থায় ঐ পথেই চলতে হবে। বিপদ আসলে আসুক।
এই নিয়ামত সকলকেই আল্লাহ দান করেন না। হযরত মুসা আ: কে যখন ফিরাউনের কাছে পাঠানো হয়েছিল, তিনি আল্লাহর কাছে ‘উন্মুক্ত বক্ষ’ এর জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,“রাব্বিসরাহলি ছদরি” হে আমার রব! আমার বুককে প্রশস্ত করে দাও বা খুলে দাও।”(সুরা ত্বহা:২৫) অর্থাৎ আমার মনে এ মহান দায়িত্বভার বহন করার মতো হিম্মত সৃষ্টি করে দাও। আমার উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়িয়ে দাও। যেহেতু হযরত মুসা আ: কে একটি বড় কাজের দায়িত্ব সোপর্দ করা হচ্ছিল যা করার জন্য দুরন্ত সাহসের প্রয়োজন তাই তিনি দু’আ করেন, আমাকে এমন ধৈর্য, দৃঢ়তা, সংযম, সহনশীলতা, নির্ভিকতা ও দুর্জয় সংকল্প দান করো যা এ কাজের জন্য প্রয়োজন। সুতরাং প্রতিটি মুসলিমদেরকে শরহে সদর বা উন্মুক্ত বক্ষের জন্য দু’আ করতে হবে। যদি আল্লাহ দয়া করে কাউকে একটি উন্মুক্ত বক্ষ বা খোলা মন দান করেন, তাহলে সেই ব্যক্তি দীনের পথে চলার জন্য তার মন কখনো সংকীর্ণ হবে না। হাজারো বিপদ জেনেও সে সেই পথ থেকে বিরত হবে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,“আল্লাহ তা’আলা যে ব্যক্তির বক্ষ ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং যে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত আলোতে চলছে, সেকি (সে ব্যক্তির মত হতে পারে যে এসব কথা থেকে কোন শিক্ষাই গ্রহণ করেনি?) ধ্বংস সে লোকদের জন্য যাদের অন্তর আল্লাহর উপদেশ বাণীতে আরো বেশী কঠোর হয়ে গিয়েছে। সে সুষ্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে ডুবে আছে।”(সুরা যুমার: ২২)
‘শরহে সদর’ মানে উন্মুক্ত বক্ষ বা খোলা মন এর বিপরীত শব্দ হলো, ‘দ্বীকে সদর’ মানে বক্ষ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া, মন সংকীর্ণ হয়ে যাওয়া। এ অবস্থার মধ্যে মনের মধ্যে ন্যায় ও সত্য প্রবেশের কিছু না কিছু অবকাশ থাকে। কিন্তু আয়াতে উল্লেখিত ‘কাসওয়াতে ক্বালব’ উল্লেখ করা হয়েছে, যার অর্খ মন কঠিন হয়ে যায়। এ অবস্থায় মনের মধ্যে ন্যায় ও সত্য প্রবেশের কোন সুযোগই থাকে না। এ অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: যে ব্যক্তি এ পর্যায়ে পেীঁছে গিয়েছে তার জন্য সর্বাত্মক ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই নেই। এর অর্থ হচ্ছে, মনের সংকীর্ণতার সাথে হলেও কেউ যদি একবার ন্যায় ও সত্যকে কোনভাবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়ে যায় তাহলেও তার জন্য রক্ষা পাওয়ার কিছু না কিছু সম্ভবনা থাকে। আয়াতের বর্ণনা ভঙ্গি হতে এ বিষয়টি আপনা থেকেই প্রকাশ পায়। যারা রাসুলুল্লাহ সা: এর বিরোধীতায় জেদ ও হঠকারিতা করতে একপায়ে দাঁড়িয়ে ছিল এবং এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছিল যে, কোনমতেই তাঁর কোন কথা মানবে না, আয়াতের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে সাবধান করা। তাদেরকে এ মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের এ জিদ ও হঠকারিতাকে অত্যন্ত গর্বের বিষয় বলে মনে করে থাকো। কিন্তু আল্লাহর যিকির এবং তাঁর পক্ষ থেকে আসা উপদেশ বাণী শুনে বিনম্্র হওয়ার পরিবর্তে কেউ যদি আরো বেশী কঠোর হয়ে যায় তাহলে একজন মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় অযোগ্যতা ও দুর্ভাগ্য আর কিছুই নেই।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ হে নবী! আমি কি তোমার বক্ষদেশ তোমার জন্য উন্মুক্ত করে দেইনি?”(সুরা আলাম নাশরাহ:১) আল কুরআনের যেসব জায়গায় বক্ষদেশ উন্মুক্ত করে দেবার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিলে সেগুলোর দু’টি অথ জানা যায়। এক, সুরা আন’আমের ১২৫ আয়াতে বলা হয়েছে,“ কাজেই যে ব্যক্তিকে আল্লাহ হেদায়াত দান করার সংকল্প করেন তার বক্ষদেশ উসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।” শুরুতে উল্লেখিত সুরা যুমারের ২২ আয়াত। এই উভয় আয়াতে মুফাসসিরগণ বক্ষদেশ উন্মুক্ত করার অর্থ বলেছেন, সব রকমের মানসিক অশান্তি ও সংশয় মুক্ত হয়ে এ কথার ওপর নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া যে, ইসলামের পথই একমাত্র সত্য এবং ইসলাম মানুষকে যে আকীদা-বিশ^াস, সভ্যতা-সংস্কৃতি ও নৈতিকতার যে মূলনীতি এবং হিদায়াত ও বিধিবিধান দান করেছে তা সম্পূর্ণ সঠিক ও নির্ভুল। রাসুলুল্লাহ সা: এর হাদীসখানিও এই একই অর্থ প্রকাশ করে, হুমাইদ ইবনে আব্দুর রহমান রহ: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়া রা: কে বক্তৃতারত অবস্থায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আমি তো কেবল বিতরণকারী, আল্লাহই দানকারী। সর্বদাই এই উম্মত (সত্যিকারের মুসলিম) কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না আল্লাহর হুকুম না আসা পর্যন্ত। (বুখারী:৭১, কিতাবুল ইলম, বাবু মাই ইউরিদিল্লাহ…)
দুই, সুরা শু’আরার ১২ ও-১৩ আয়াতে বলা হয়েছে:“আল্ল্হা যখন হযরত মুসা আ: কে নবুওয়াতের মহান দায়িত্ব নিযুক্ত করে ফেরাউন ও তার বিশাল সাম্রাজ্যের সাথে সংঘাত সংঘর্ষের হুকুম দিচ্ছিলেন তখন হযরত মুসা আ: আরয করেন: “হে রব! আমার ভয় হচ্ছে তারা আমাকে মিথ্যা বলবে এবং আমার বক্ষদেশ সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।” সুরা ত্বহার ২৫-২৬ আয়াতে বলা হয়েছে, “হে আমার রব! আমার বক্ষদেশ আমার জন্য খুলে দাও এবং আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও।” ্মুফাসসিরগণ এখানে সংকীর্ণতার অর্থ করেছেন, নবুয়তের মতো একটি মহান দায়িত্ব সম্পাদন করার এবং একটি অতি পরাক্রমশালী কুফরী শক্তির সাথে একাকী সংঘর্ষ মুখর হবার হিম্মত মানুষের হয় না। আর বক্ষদেশ প্রশস্ততার মানে হচ্ছে, হিম্মত বুলন্দ হওয়া, কোন বৃহত্তর অভিযান অগ্রসর হওয়া ও কোন কঠিনতর কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে ইতস্তত না করা এবং নবুওয়াতের মহান দায়িত্ব পালন করার হিম্মত হওয়া।
‘উন্মুক্ত বক্ষ বা খোলা মন’ মানে সকল প্রকার সংশয় দুর হওয়া, পূর্ণ মানসিক নিশ্চয়তা ও প্রশান্তি লাভ করা, দীনের পথে চলা ও দীন কায়েমের মনোবল, সাহস, সংকল্পের দৃঢ়তা এবং মানসিক উদারতা ও প্রশস্ততা লাভ করা। মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সা: কে এই প্রশস্ততা দান করেছিলেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“হে নবী! আমি কি তোমার বক্ষদেশ তোমার জন্য উন্মুক্ত করে দেইনি?” (আলাম নাশরাহ:১) তাঁর সামনে সঠিক পথ উন্মুক্ত করে এমনভাবে মেলে ধরেন, এর ফলে তিনি পূর্ণ মানসিক নিশ্চিন্ততা ও প্রশান্তি লাভ করেন। নবুওয়াত দান করার সাথে সাথে এই মহান দায়িত্বেও বোঝা উঠাবার জন্য যে ধরনের মনোবল, সাহস সংকল্পের দৃঢ়তা এবং প্রশস্ততার প্রয়োজন তা আল্লাহ তাঁকে দান করেন। এর ফলে তিনি আরো এমন বিপুল ও ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী হন, যা তিনি ছাড়া দ্বিতীয় কোন মানুষের মধ্যে স্থিতি লাভ করতে পারতো না। তিনি এমন বাস্তব বুদ্ধি ও কলাকৌশলের অধিকারী হন, যা বৃহত্তম বিকৃতি দূর ও সংশোধন করার যোগ্যতা রাখতেন। তিনি জাহেলিয়াতের মধ্যে আকন্ঠ ডুবে থাকা এবং নিরেট মুর্খ ও অজ্ঞ সমাজে কোন প্রকার সহায় সম্বল ও বাহ্যত কোন পৃষ্ঠপোষকতাহীন শক্তির সহায়তা ছাড়াই ইসলামের পতাকাবাহী হয়ে দাঁড়িয়ে যাবার, বিরোধীতা ও শত্রুতার বড় বড় তফিানের মোকাবেলায় ইতস্তত না করার এবং এই পথে যেসব কষ্ট ও বিপদ আপদ আসে সবরের সাথে তা সহ্য করার যোগ্যতা অর্জন করেন। কোন শক্তিই তাঁকে নিজের অবস্থান থেকে এক বিন্দু সরিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখতো না। এই বক্ষদেশ উন্মোচন এবং হৃদয়ের অংগন প্রশস্ত করার অমূল্য সম্পদ যখন তাঁকে দান করা হয়েছে তখন কাজের সূচনা লগ্নে যেসব সমস্যা সংকল্প-বিপদ-কষ্ট দেখা দিয়েছে তাতে তিনি মর্মাহত হননি।
যুগে যুগে যারা রাসুলুল্লাহ সা: এর এই সুন্নাহ পালনে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের অনেককেই এই নিয়ামতটি দান করেছেন। যার ফলে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সত্যের কথা বলেছেন। লোভনীয় অপারের সামনে বাতিল বা তাগুতী ব্যবস্থার সাথে আপোস করেননি। আর যাদেরকে তা দান করা হয়নি, তারা বাতিলের ভয়ে ভীত হয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়েছেন। তারা কল্যাণের পথ ছেড়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছেন। হুমাইদ ইবনে আব্দুর রহমান রহ: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়া রা: কে বক্তৃতারত অবস্থায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আমি তো কেবল বিতরণকারী, আল্লাহই দানকারী। সর্বদাই এই উম্মত (সত্যিকারের মুসলিম) কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না আল্লাহর হুকুম না আসা পর্যন্ত। (বুখারী:৭১, কিতাবুল ইলম, বাবু মাই ইউরিদিল্লাহ…)

 


Posted ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(685 বার পঠিত)

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.