বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
কানাডা থেকে বেআইনি পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের হার ২০০১ সালের তুলনায় গত বছর ৭৪৩% বেড়েছে। নিউইয়র্ক, ভারমন্ট এবং নিউ হ্যামশায়ার স্টেট সংলগ্ন ইউএস বর্ডার পেট্টল এন্ড কাস্টমস এর প্রধান রবার্ট গার্সিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি নর্থ ডেকটা সীমানার ৪০ ফুটের মধ্যে বরফে আচ্ছাদিত একটি গাড়ির ভেতর থেকে শিশু, তরুণসহ ৪ ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের পর সীমান্ত রক্ষীরা কানাডা থেকে এ এলাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার সময় গ্রেফতারের এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। বর্ডার পেট্টল এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী দুর্গম পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার সময় গ্রেফতারকৃতরা ১৯ দেশের নাগরিকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশগুলোর নাগরিকরা রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষ ৩ মাসে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে ক্সাস-আরিজোনা-ক্যালিফোর্নিয়ায় বেআইনিভাবে ঢুকে পড়ার সময় ৭ লাখ বিদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইউএস বর্ডার পেট্রল এবং কাস্টমস’র এজেন্টরা জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে কানাডা থেকে নিউইয়র্কে ঢুকে পড়ার সময় ৪৪১ বিদেশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রার মধ্যে সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রওয়ানা দিয়েছিলেন। এ সময় মারা গেছে ১৪ জন। দুর্গম পথে সীমান্ত অতিক্রমের সময় কতজনের প্রাণ ঝরে তার সঠিক সংখ্যা কখনোই জানা সম্ভব হয় না। এই ১৪টি লাশ উদ্ধার করায় তা জানানো হয়েছে।
কানাডা থেকে গাড়িতে ভরে বেআইনি পথে যুক্তরাষ্ট্রে আদম আমদানির সাথে জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ফ্লোরিডায় থাকতেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ থেকে কানাডায় অবতরণের পর এই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিতেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রমে বাধা দেয়ায় সীমান্ত রক্ষীদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হন অন্তত ৯ জন বিদেশি। এদেরকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগের ২৭ মাসে এ ধরনের মারদাঙ্গা পরিস্থিতি একটিও ছিল না। এরমধ্যে একজন হচ্ছেন মেক্সিকান। তাকে গত সপ্তাহে আদালতে সোপর্দ করা হলে এক বছরের কারাদন্ড এবং এক লাখ ডলারের জরিমানা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। দন্ড ভোগের পর তাকে মেক্সিকোতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
কানাডা বর্ডার পেট্রোল এজেন্টরা আরো জানান, ২০২১ এবং ২০২২ সালে কানাডা থেকে বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনিভাবে ঢুকে পড়ার প্রবণতা চরমে উঠেছে। প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক বিদেশী ধরা পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার পরই। তারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেও খুব কম সংখ্যকেরই আবেদন মঞ্জুর করা হচ্ছে। কানাডা বর্ডার পেট্রোল কর্মকর্তারা সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে উল্লেখ করেছেন যে, কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের পুরোটাই বরফে আচ্ছাদিত। অসহনীয় ঠান্ডা। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ যাতে দুর্গমপথে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার চেষ্টা না করেন। বিশেষ করে শিশু-কিশোরসহ কেউ যেন পায়ে হেঁটে সীমান্ত অতিক্রমের কোনো উদ্যোগ না নেন। বর্ডার পেট্রোল এজেন্টরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, এক শ্রেণীর আদম পাচারকারি অর্থের লোভে মানুষকে মহাবিপদের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
ইমিগ্রেশন নীতি সংস্কারে সিনেট ব্যর্থ : যুক্তরাষ্ট্রের জটিল ইমিগ্রেশন নীতি সংস্কারে ব্যর্থ হয়েছে সিনেট। এ ঘটনায় আশা ভঙ্গ হয়েছে সিনেটের সংস্কারবাদীদের। ড্রিমারদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করার লক্ষ্যে ইমিগ্রেশন সংস্কারের জন্য কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেননি কংগ্রেসের নেতারা। যারা বছর শেষের আগে ইমিগ্রেশন সংস্কার নিয়ে একটি বিল পাস করতে চেয়েছিলেন গত ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার তাদের সেই আশা ভেস্তে গেছে। ডেমোক্র্যাটরা হাউসে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আগে গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করার শেষ সুযোগ হিসেবে নভেম্বরের নির্বাচন এবং নতুন কংগ্রেস শুরুর মধ্যেকার শেষ অধিবেশনকে দেখেছিলেন। তারা ২২ ডিসেম্বর সিনেটে পাস হওয়া ১.৭-ট্রিলিয়ন ডলার প্যাকেজের সাথে ইমিগ্রেশন সংস্কারকে সংযুক্ত করার আশা করেছিলেন।
আইনপ্রণেতারা বিলে খামার কর্মী, আফগান প্রত্যাবাসিত লোকজন ও ড্রিমারদের নাগরিকত্বের পথের প্রস্তাব করবে এমনটাই বিবেচনা করা হয়েছিল। আরেকটি প্রস্তাবে যেকোনো দেশের মানুষকে প্রতি বছর গ্রিন কার্ডের সংখ্যার ক্যাপ সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিও চিন্তা করেন।
কিন্তু এসব বিলের কোনোটিই আর অগ্রসর হয়নি। বরং অভিবাসন সংস্কারের সমর্থকদের নিজেদের প্রতিরক্ষার ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। ওই দিন সিনেটররা শুধুমাত্র সেন মাইক লির (রিপাবলিকার-উটাহ) একটি সংশোধনীকে সামান্য ভোটে পরাজিত করেন।
সিনেটর রিচার্ড জে. ডারবিন (ডেমোক্র্যাট-ইলি) গত সপ্তাহে ড্রিমারদের এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের উপর ছেড়ে দিচ্ছি না- আমার উপরও ছেড়ে দিও না। আমরা তোমাদের জয়ের জন্য লড়াই করতে যাচ্ছি।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ড্রিমারদেও জন্য কিছুই করতে পারেননি। ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার একটি সুযোগ এসেছিল। এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় যাওয়ায় কিছু আইন প্রণেতা হতাশ হয়েছেন।
সম্ভবত কংগ্রেসে তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত এবং সর্বোচ্চ-প্রোফাইলটি এসেছে অ্যারিজোনার ডেমোক্র্যাট সিনেটর কিরস্টেন সিনেমা এবং উত্তর ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর থম টিলিসের কাছ থেকে। তাদের আইনটি ড্রিমার হিসেবে পরিচিত প্রায় ২ মিলিয়ন অভিবাসীর নাগরিকত্বের পথের পরিবর্তে সীমান্ত নিরাপত্তা তহবিলকে জোরদার এবং আটক সুবিধার ব্যবহারকে প্রসারিত করবে। টিলিস এবং সিনেমা বিলটির বিষয়ে কয়েক মাস ধরে আলোচনায় ছিলেন।
কিছু ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি খসড়া আইন সম্পর্কে সতর্কতার সাথে আশাবাদী থাকলেও প্রতিনিধি লু কোরেয়াসহ (ডেমোক্র্যাট-সান্তা আনা) হাউস ডেমোক্র্যাটরা বলেছিলেন যে তারা এটিকে সমর্থন করতে পারবেন না। টেক্সাসের প্রতিনিধি চিপ রায়সহ হাউস রিপাবলিকানরা বলেছেন, নাগরিকত্বের কোনো পথের সাথে সীমান্ত সুরক্ষিত করাকে যুক্ত করা উচিত নয়। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় বিলের কথা কখনো প্রকাশ করা হয়নি এবং ফ্লোর ভোটের সময়ও শেষ হয়ে গেছে।
Posted ৬:২৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh