বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

জ্যাকসন হাইটসে জিহানের আঁকা বাংলাদেশ ম্যুরাল

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩

জ্যাকসন হাইটসে জিহানের আঁকা বাংলাদেশ ম্যুরাল

বক্তব্য রাখছেন কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণাণ। পাশে জিহান ওয়াজেদ ও নওশীন খান

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নতুন প্রজন্মের শিল্পী জিহান ওয়াজেদ। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, ইউএস ওপেন স্টেডিয়াম সহ বহুজাতিক নিউইয়র্ক নগরীর বড় বড় স্থাপনায় শোভা পাচ্ছে তার আঁকা দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল। সম্প্রতি বাংলাদেশী আমেরিকান ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসে জিহানের আঁকা বাংলাদেশ ম্যুরাল ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে কমিউনিটিতে। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও জাতিগোষ্ঠির মানুষের পদচারণায় সবসময় মুখরিত থাকে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজা।

মেয়র ডি ব্লাজিওর সময়কালে নির্মিত ডাইভারসিটি প্লাজা নানা কারণেই অভিবাসী বাংলাদেশীদের নিকট হয়ে উঠেছে আকর্ষনীয়। ছোট ছোট সভা-সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অবসর সময় কাটানোর জন্য এই পার্কটিকে অধিকতর সুন্দর ও আকর্ষনীয় করতে স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও সিটি প্রশাসনের একটি উদ্যোগ ছিলো বরাবরই। সেই উদ্যোগটি সফল হয়েছে জিহান ওয়াজেদ’র শিল্পকর্ম বাংলাদেশ ম্যুরাল এর মধ্য দিয়ে। ডাইভারসিটি প্লাজার দক্ষিণের মুনলাইট গ্রিল রেস্টুরেন্ট ভবনটির প্রশস্থ দেয়ালে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ ম্যুরাল। পাল্টে গেছে স্থানটির চেহারা। অর্থ প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড, স্থানীয় সিটি কাউন্সিল মেম্বার শেখর কৃষ্ণান ও রেস্টুরেন্ট মালিক মোহাম্মদ মাসুম চৌধুরীর সম্মিলিত ভূমিকা রয়েছে বাংলাদেশ ম্যুরাল নির্মাণের নেপথ্যে।


গত ১৯ মে শুক্রবার অপরাহ্নে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশ ম্যুরাল উদ্বোধন করেন সিটি কাউন্সিল মেম্বার শেখর কৃষ্ণান। “সেলিব্রেশন অব ডাইভারসিটি: মেমোরি অব বাংলাদেশ” নামের ম্যুরালটি ফিতা কেটে উদ্বোধন করার সময় শিল্পী জিহান ওয়াজেদ, মূর‌্যালের স্পন্সরকারী প্রতিষ্ঠান ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড কর্মকর্তা নওশীন খান সহ নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলী মেম্বার মিঃ রাগাহ, সহ বিভিন্ন কমিউনিটির সাংবাদিক ও উৎসুক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জ্যাকসন হাইটসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অংকিত ম্যুরালটিতে বাংলাদেশের চিরায়ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তুলে ধরেছেন জিহান ওয়াজেদ।


বাংলাদেশের রূপ, গন্ধ সুষমার ছোঁয়া রয়েছে ম্যুরালটিতে। ভাসমান নৌকা থেকে ঝিলের পানিতে ফুটন্ত জাতীয় ফুল শাপলা তুলছে এক তরুণী। গ্রাম-বাংলার এমন দৃশ্য আপ্লুত করছে অনেককেই। উদ্বোধনের পর প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ভীড় করছেন ম্যুরালটি দেখতে। অনেকে ছবি তুলে সাটছেন ফেসবুকে।


ম্যুরালটির উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান, শিল্পী জিহান ওয়াজেদ, ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড’র কর্মকর্তা নওশীন খান, কান্ট্রি ম্যানেজার রিমি রশীদ, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান স্টিভেন রাগাহ, অ্যাসেম্বলী ওম্যান জেসিকা রোজাস, কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ। শেখর কৃষ্ণান শিল্পী জিহান ওয়াজেদ’র শিল্প কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ডাইভারসিটি প্লাজার এ মূর‌্যালটি যেমন জ্যাকসন হাইটস এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে তেমনি সমৃদ্ধ করেছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিকে। ট্যাপ ট্যাপ সেন্ড এবং মাসুম চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

জিহান ওয়াজেদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশ ম্যুরালটি তার অন্যান্য ম্যুরালের তুলনায় ব্যতিক্রমী একটি সৃষ্টি। তিনি বলেন, বাংলাদেশী আমেরিকান হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত এ ম্যুরালটি জ্যাকসন হাইটসের মতো জায়গায় আঁকতে পেরে। এই ম্যুরালের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও স্মৃতি ধরে রাখার প্রয়াস পাবো বলে মন্তব্য করেন জিহান।

নওশীন খান জিহানকে সৃষ্টিশীল শিল্পী বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ম্যুরাল নিউইয়র্ক সিটিতে আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। রিমা রশীদ বলেন, বাংলাদেশী কমিউনিটিকে কাছাকাছি আনতে এবং আমাদের সংস্কৃতিকে যুক্তরাষ্ট্রে তুলে ধরতে এটি একটি উদ্যোগ। অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগাহ বাংলাদেশ ম্যুরালের প্রশংসা করেন। নিউইয়র্কে ভবিষ্যতে এধরণের শিল্পকর্মকে আরো উৎসাহিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট মোফাজ্জল হোসেন বলেন, বাংলাদেশী আমেরিকান নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি জিহান ওয়াজেদ। আমাদের প্রথম প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্মৃতি ধরে রাখতে ম্যুরালটি ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করেন তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে উচ্ছসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন-জিবিবিএ’র প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াস আহমেদ বলেন, জিহান ওয়াজেদ’র বাংলাদেশ ম্যুরালটির জন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত। তার এ শিল্পকর্ম জ্যাকসন হাইটস এলাকায় বাংলাদেশী কমিউনিটির মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করেছে। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের সাউথ এশিয়ান উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান এধরণের কাজে সিটির সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। মুন লাইট গ্রীল রেস্টুরেন্ট’র স্বত্বাধিকারী মাসুম চৌধুরী বাংলাদেশ ম্যুরালের অংশীদার হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করেন। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা এখন তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী ছাড়াও বিভিন্ন কমিউনিটির মিডিয়া’র সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য জিহান ওয়াজেদের স্টুডিও ম্যানহাটানের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে। তার অন্যতম শিল্প কর্মের মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবন, নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স বিলি জিন কিং ন্যাশনাল টেনিস সেন্টার, এস্টোরিয়ায় ১৭৭ ফিট দীর্ঘ ম্যুরাল ‘ওয়েলকাম এস্টোরিয়া’ মুর‌্যালটি অন্যতম। এছাড়া নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন বরোতে বড় বড় মুরাল্য অঙ্কণ করেছেন জিহান ওয়াজেদ। মুর‌্যাল ছাড়াও নিউইয়র্কে ম্যানহাটানস্থ গ্যালারীতে তার বেশ কয়েকটি একক চিত্র প্রদর্শনী ব্যাপক সাড়া জাগায় মুলধারার দর্শকের মাঝে।

মিকৌলে অনারি জিহান ওয়াজেদ বারুখ কলেজ থেকে পারসেপচুয়াল সাইকোলজিতে গ্রাজুয়েশন করলেও তার মনোযোগ একমাত্র ছবি আঁকায়। স্টুডিওতে ছবি আঁকার পাশাপাশি তার নিজস্ব স্টাইলে ম্যুরাল আঁকছেন দেয়ালে। কারণ তার প্রাথমিক আগ্রহ ছিল গ্রাফিটি আঁকায়। কিন্তু গ্রাফিটি আঁকা আইনসিদ্ধ নয়।

তার গ্রাফিটি থেকেই তিনি খুঁজে নিয়েছেন ম্যুরালের নিজস্ব ও নূতন ধারা। তার এই ধারাকে পছন্দ করছে শিল্পের শহর নিউইয়র্কেও শিল্পবোদ্ধারা। বিশেষ করে তার উজ্জ্বল অথচ শুদিং রঙের ব্যবহার, কার্ভ ও স্ট্রোক যে নতুন মাত্রা তৈরি কওে তার চূড়ান্ত প্রকাশ দৃষ্টি আকর্ষণীীয়। এই সব ম্যুরালের দীর্ঘস্থায়ী মূল্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকলেও অন্তত কিছুকাল তা চোখ ও হৃদয়কে প্রশান্তি দেবে বা চেতনায় দোলা দেবে। জিহান ওয়াজেদ তার কাজে সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই লাল এবং সবুজ পাশাপাশি ব্যবহার করেন। কেন করেন? সকলের কাছেই তা বোধগম্য। তাহলো এই লাল ও সবুজ বাংলাদেশের পতাকার রঙ। বাংলাদেশ তাই তার ম্যুরালে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। নিউইয়র্ক সিটিতে এইভাবেই জিহান বাংলাদেশীদের গর্বিত করে চলেছেন।

নিউইয়র্ক সিটির হেলথ এন্ড হসপিটালস বিভাগ সম্প্রতি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন হাসপাতালগুলোতে ম্যুরাল আঁকার জন্যে ১০ জন শিল্পীকে নির্বাচন করেছে। নির্বাচিতদের মধ্যে একজন শিল্পী জিহান ওয়াজেদ। সিটির কুইন্সের হাসপাতালে মুর‌্যাল আঁকবেন জিহান। নিউইয়র্ক সিটি কেন্দ্রিক শিল্পী জিহান চিত্রাঙ্কন ছাড়াও ভাস্কর্য, কোরিওগ্রাফি এবং সৃজনশীল নতুন মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত। তিনি সিটির জ্যামাইকায় বেড়ে উঠেন। তার শিল্পকর্ম দেয়াল চিত্র ও নৃত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং তিনিই প্রথম অগ্রবর্তী বাস্তববাদী শিল্পী, যাকে হেলথ এন্ড হসপিটালস কমিউনিটি ম্যুরাল প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।

advertisement

Posted ৬:২০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.