মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই ২০২১
টেক্সাসের এক আদালত ‘ডাকা’ (ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যরাইভ্যাল) কর্মসূচিকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং এ কর্মসূচিতে নতুন কোন আবেদন অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। গত ১৬ জুলাই (বাকি অংশ ৩২ পাতায়)
‘ডাকা’ কর্মসূচি অবৈধ ঘোষণা
(প্রথম পাতার পর) শুক্রবার টেক্সাসের ব্রাউন্সভিলের ইউএস ডিষ্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টের বিচারক এন্ড্রু হ্যানেন তার রায়ে উল্লেখ করেছেন যে, ওবামা প্রশাসন ২০১২ সালে ‘ডাকা’ কর্মসূচি চালু করতে গিয়ে ফেডারেল প্রশাসনিক আইন অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তিনি এ কর্মসূচি সহসা বাতিল না করে, যারা এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে বিষয়টি বিচারিকভাবে নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে তা বহাল রাখার কথাও বলেছেন।
আদালতের এই রায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইমিগ্রেশন নীতির উপর বড় ধরনের ধাক্কা বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা এবং প্রেসিডেন্ট নিজেও ফেডারেল আদালতের রায়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি ড্রিমার হিসেবে পরিচিত ‘ডাকা’র আওতাধীন ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেয়ার পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং পাশপাশি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথাও জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি ডাকা কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্তদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন। এজন্য এখন বাইডেন প্রশাসনকে আপিল আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পাশাপাশি কংগ্রেসের উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে হবে ডাকা’র আওতাধীনদের সমস্যা নিস্পত্তির জন্য আইন পাশ করার জন্য।
টেক্সাসের আদালতের রায়ের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আমি দারুনভাবে হতাশ। একমাত্র কংগ্রেসই পারে এ ব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে ও ড্রিমারদের বৈধতা দিয়ে তাদের নাগরিকত্বের পথ সুগম করতে। তিনি আরো বলেন, তবে আমি খুবই আশাবাদী যে কংগ্রেস ড্রিমারদের রক্ষা করতে একটি নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করবে। নিউ জার্সির সিনেটর বব মেনেনডিজ বলেছেন, জজ হ্যানেনের এ ধরনের নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তে আমি আদৌ অবাক হইনি। ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারী আলেজান্দো মেয়রকাস গত শনিবার বলেন, জজ হ্যানেনের সিদ্ধান্তে আমি নিজেও হতাশ। তবে আমার ডিপার্টমেন্ট ডাকা সুবিধাভোগীদের ওয়ার্ক পারমিট রিনিউ করে যাবে। তিনি বলেন, তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য কংগ্রেসকে এগিয়ে আসতে হবে। জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হয়েছে যে টেক্সাসের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আপলি করা হবে। তবে ইমিগ্রেশন এডভোকেসি গ্রুপগুলো ডাকা বিষয় নিয়ে ফেডারেল আালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে জয়ের ব্যাপারে সন্দিহান। তারা মনে করেন, প্রথমে একটি আপিল করা হবে সার্কিট কোর্টে। সেখানে জয় পরাজয়ের উপর ভিত্তি করে পুরো ব্যাপারটি সুপীম কোর্টে গড়াবে। কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের নয়জন বিচারপতির মধ্যে ছয় জনই রিপাবলিকান প্রশাসন কর্তৃক মনোনীত। অতএব ছয়জন রক্ষণশীল বিচারপতির মাঝে বাইডেন প্রশাসন বা ইমিগ্রান্টদের পক্ষের গ্রুপগুলোর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জজ হ্যানেনের রায়ের পর সিনেট মেজরিটি লিডার চাক শ্যুমার ও হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা ড্রিমারদের নাগরিকত্বের পথ সৃষ্টি করার লক্ষে নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের মধ্যে ১৬ বছরের নিচে বয়স ছিল এ ধরনের শিশু, যারা তাদের অবিভাবকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল, তারা ডাকা কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ শতাংশ বৈধভাবে কাজ করছেন। প্রায় অর্ধেক সংখ্যক স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং তাদের অনেকে তাদের জন্মভূমির ভাষা বা সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুই জানে না। এধরনের ইমিগ্রান্ট সংখ্যা প্রায় আট লাখ। গত বছর ইউএস সুপ্রীম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন এ কর্মসূচিকে বাতিল করার জন্য যে চেষ্টা করছে তা অবৈধ। সুপ্রীম কোর্টের ৫-৪ রায়ে বলা হয় যে, সরকার কেন এ কর্মসূচি বাতিল করতে চায় তার পক্ষে পর্যাপ্ত কারণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ২০১২ সালে প্রশাসনিক সুরক্ষা আইনের আওতায় ডাকা (ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল) কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। অপ্রাপ্ত বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসা লোকজনকে (ড্রিমার) অভিবাসনের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল এ কর্মসূচির মাধ্যমে। ফলে প্রায় আট লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী এই কর্মসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়ে কাজের অনুমতি পান। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্মসূচিটি বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। উচ্চ আদালত রায়ে ট্রাম্পের সে উদ্যোগ আটকে গেলেও ডাকা কর্মসূচির নতুন আবেদন গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন ড্রিমারদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ নানা সুবিধা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।
কিন্তু শুরু থেকেই ডাকা প্রকল্পের তীব্র বিরোধী রিপাবলিকান নেতারা। তাই প্রকল্পটি বন্ধ করতে অনেক দিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। প্রকল্পটি বন্ধ চেয়ে টেক্সাসের আদালতে করা আবেদনটিও টেক্সাসসহ নয়টি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত স্টেটের। এন্ড্রু হানেনের আদেশের বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে গড়াবে। সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতি এই বিষয়ে আদেশ দেবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই কার্যকর হবে। ড্রিমারদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ সৃষ্টি করতে ডেমোক্র্যাটরা ইতিমধ্যে কংগ্রেসে একটি বিল উপস্থাপন করেছেন। সেই বিলটি দুই কক্ষের কংগ্রেসে পাস হতে হবে। এই বিলের পক্ষে দূতিয়ালিও শুরু করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। আদালতের আদেশের পর কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ড্রিমারদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ নিশ্চিত করতে বিলটির পক্ষে ভোট দিতে রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, বিলের পক্ষ নিলে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানো হবে।
Posted ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh