নিউইয়র্ক : | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
শোক-কে শক্তিতে পরিণত করে ব্যাপক আয়োজনে দেশের ন্যায় প্রবাসের এবার অমর একুশে ফেব্রুয়ারী, মহান শহীদ দিবস তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে নিউইয়র্ক সহ উত্তর আমেরিকায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। মঙ্গলবার ছিলো অমর একুশে ফেব্রুয়ারী। দিবসটির প্রথম প্রহর থেকে অর্থাৎ সোমবার থেকেই শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেট ছাড়াও বাংলাদেশ সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএসএ, নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালী’র চেতনা মঞ্চ, জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসেসিয়েশন-জেবিবিএ, কুইন্স লাইব্রেরী ও জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি, বাফা, সিলেট বিভাগীয় সংগঠন প্রভৃতি সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে একুশের কর্মসূচী পালিত হয়। এছাড়াও প্রতি বছরের মতো বাফা ব্রঙ্কসে প্রভাত ফেরীর আয়োজন করে।
জালালাবাদ সমিতির মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
গত ২০ ফেব্রুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি হলে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র উদ্যোগে সম্মিলিত শহীদ দিবস ও মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি বদরুল খানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের পরিচালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের বোর্ড অফ ট্রাস্টি অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, বদরুন নাহার খান মিতা, ছাইদুন নূর, সাবেক বাংলদেশ সোসাইটি সভাপতি ও জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও সাবেক বোর্ড অফ ট্রাস্টি আজমল হোসেন কুনু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ মজিদ, মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটি সভাপতি তোফাজল হোসেন আহমেদ ও হবিগঞ্জ জেলা কল্যাণ সমিতি ইউএসএ ইনক সভাপতি মোঃ আজদু মিয়া তালুকদার।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সংগঠনের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক হোসেন আহমেদ । বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও আমেরিকার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের ক্লোজআপ শিল্পী রাজিব। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব জাহিদ আহমদ খান, প্রধান সম্মানকারী সংগঠনিক কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলিম, সভাপতি শফিউদ্দিন তালুকদার, সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী,সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন, সাবেক সাহিত্য সংসদের সম্পাদক শরিফুল হক মন্জু, মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটির সাবেক সভাপতি সোহান আহমেদ টুটুল, বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএস-ইনকের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক মাহবুব, মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটি এর সাধারণ সম্পাদক জাবেদ উদ্দিন, প্রফেসর কামাল চৌধুরী, লাখাই উপজেলা এসোসিয়েশন অফ আমেরিকার সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ টিপু, ওসমানীনগর অ্যাসোসিয়েশন ইউএসএ ইনক এর সাবেক সভাপতি বশির উদ্দিন, বিশিষ্ট কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আবদুল আহাদ, মেইনস্যটিম পলিটিশিয়ান ও রিয়েলটর সাইফুর রহমান হারুন, কমিনিটি এক্টিভিস্ট সাহান খান, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের অফ আমেরিকা ইনক’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেড চৌধুরী জুয়েল প্রমুখ।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক সোসাইটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ রুহুল আলী, সহ-সভাপতি সৈয়দ আবুল কাশেম, জিল্লুর রহমান খান সদস্য শাহিন হাসানাত, জিল্লুর রহমান, এমদাদ আহমদ, কয়েজ আহমদ, ও রোকন আহমেদ, জালাবাদের সাবেক সভাপতি সাব্বির হোসেন, সৈয়দ নোমান, জোসেফ চৌধুরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক আহমেদ, লাখাই উপজেলা অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা ইনক’র সহ সভাপিত সিদ্দিকুর রহমান, কমিনিটি এক্টিভিস্ট নাজমুল গনি,বি ডি ফ্রেশ সুপারমার্কেট এর শত্বাধিকারী আবু চৌধুরী, তরুণ ব্যবসায়ী আনজু খান, সাফাত আহমেদ, নাজমুল আলম, এস্টোরিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইউএসএ ইনক সহ সভাপতি কয়েস আহমেদ, বিশিষ্ট কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ জনাব হারুন মিয়া, জনাব কিনু চৌধুরী, জনাব দুদু মিয়া, আই হোপ প্রিন্টিং এর শতাদিরকারী বদরুজ্জা সাগর আহমেদ, বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ ইনক ফয়েস মিয়া, আব্দুল হান্না দুকু, এটিএম তালহা, আব্দুল হামিদ , আব্দুর নূর, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট সাব্বির উদ্দিন, এমদাদুল হক দুদু, সায়েদ আহমেদ, ও সাংবাদিক মিসবা উদ্দিন ও প্রমুখ।
রাত ১২.০১ ঘটিকায় শহীদের প্রতি পুস্পস্তবক প্রদান শুরু হয়, প্রথমে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের অফ আমেরিকা ইন্ক্ এর সভাপতির নেতৃত্বে কার্যকরী পরিষদ ও বোর্ড অফ ট্রাস্ট্রি পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এর পর একে একে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন সুনামগঞ্জ জেলা সমিতি ইউএসএ ইনক, হবিগঞ্জ জেলা কল্যাণ সমিতি ইউএসএ ইনক, যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ জেলা সমিতি ইউএসএ ইনক, মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট সোসাইটি অফ ইউএসএ ইনক , বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ ইনক, ফেঞ্চুগঞ্জ অর্গানাইজেশন ইউএসএ ইনক, ওসমানীনগর এসোসিয়েশন ইউএসএ ইনক, বিশ্বনাথ প্রবাসী কল্যাণ সমিতি ইউএসএ ইনক, নিউইয়র্ক গোলাপগঞ্জ সোসাইটি ইউএসএ ইনক, নবীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইউএসএ ইনক, রাজনগর সোসাইটি ইউএসএ, লাখাই উপজেলা অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা ইনক, শ্রীমঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা ইনক, ছাতক সমিতি ইউএসএ ইনক, খাসাড়ি পাড়া সোসাইটি ইউএসএ ইনক, গোলাবশাহ এসোসিয়েশন অফ আমেরিকা ইনক, এস্টোরিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইউএসএ ইনক, বৈরাগী বাজার এসোসিয়েশন অফ ইউএসএ ও বাংলাদেশী ক্লাব সিটি কলেজ ইউএসএ।
জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে টানা ৭ম বারের মত যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন করা হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের যৌথ অংশীদারিত্বে ইভেন্টটির আয়োজন করে ডেনমার্ক, গুয়াতেমালা, হাঙ্গেরি, ভারত, মরক্কো ও পূর্ব তিমুর। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের সভাপতি সাবা কোরেশি। বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষায় গোটা অনুষ্ঠানটি অনুবাদের সুব্যবস্থা রাখা হয়। নিউইয়র্ক ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রী চিন্ময় কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম সংগীত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানটির আলোচনা পর্বে সকল সহযোগী দেশগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধিগণ, জাতিসংঘের জেনারেল এ্যাসেম্বলি ও কনফারেন্স ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, নীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, ইউনেস্কো নিউইয়র্ক অফিসের প্রতিনিধি এবং নিউইয়র্ক শহরের মেয়রের প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন। তাছাড়া, স্প্যানিশ ভাষাভাষী ফ্রেন্ডস্ গ্রুপের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে নিযুক্ত কিউবার উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ভাষা বিষয়ক এনজিও কমিটির সভাপতি বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম, যার চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মাধ্যমে। মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশীর উদ্যোগকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পূর্ণ স্বীকৃতি আদায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিউটের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও অবদানের কথা স্মরণ করেন তিনি। এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাকে সম্মান জানিয়ে নতুন বাংলা ইউনিকোড ফন্ট প্রকাশ করার জন্য ইউএনডিপিকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন স্থায়ী প্রতিনিধি। তাছাড়া, বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম একটি দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাও অব্যাহত রেখে যাবেন বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মুহিত।
সাধারণ পরিষদের সভাপতিসহ অন্যান্য বক্তাগণ জাতিসংঘে বহুভাষাবাদ ও মাতৃভাষার প্রচারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘বহুভাষায় শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা’। মাতৃভাষাকে ভিত্তি করে বহুভাষায় শিক্ষা প্রদান করা হলে তা সারা বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতিসংঘ চেম্বার মিউজিক সোসাইটি, শ্রী চিন্ময় গ্রুপ এবং ভারতের স্নেহ্ আর্ট নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন এতে অংশগ্রহণ করে।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি, অন্যান্য কূটনীতিক, জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে মুখর ছিল অনুষ্ঠানটি। জাতিসংঘ ওয়েবটিভিতে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আগে সকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের আয়োজন করা হয়। মান্যবর রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধির নেতৃত্বে মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ মিশনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানটিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। সবশেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দ এবং মহান একুশের ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে গত ২১ মঙ্গলবার “মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৩” উদযাপন করা হয়। অমর একুশের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটিতে বাংলাদেশী-আমেরিকান নাগরিকবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, নতুন প্রজন্ম ও কমিউনিটি সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক লোক উপস্থিত ছিলেন। একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ০১ মিনিটে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম কনস্যুলেটের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দকে নিয়ে কনুস্যলেটে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর শহিদ মিনারে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক ও কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। ৫২’র ভাষা শহিদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর নির্মিত একটি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
কনসাল জেনারেল ড. ইসলাম তার বক্তব্যে নিউইয়র্ক শহরে একটি স্থায়ী শহিদ মিনার স্থাপনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আরো সুন্দর ও সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলার আহবান জানান। অনুষ্ঠানে ৫২’র সকল ভাষা শহিদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদ সদস্য, ৭১-এর সকল শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
উল্লেখ্য, দিবসটি উপলক্ষে গৃহিত কর্মসূচীর দ্বিতীয় পর্বে ২১ শে ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় কনস্যুলেটে নিউইয়র্ক স্টেটের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিনেটর ও এ্যাসেম্বলী মেম্বরসহ বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেল ও বিদেশী কুটনীতিকদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ, কাজাখস্তান ও পেরুসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরেবেশনার মধ্য দিয়ে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হবে।
জেবিবিএ: গিয়াস আহমেদ ও তারেক হাসান খান নেতৃত্বাধীন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন (জেবিবিএ) সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাতে স্থানীয় ডাইভারসিটি প্লাজায় অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মান করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এবং অমর একুশে পালন করে।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন: অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষ্যে জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারী) সন্ধ্যায় জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি হলে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। এখানে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। জালালাবাদ এসোসিয়েশন, মৌলভীবাজার ডিষ্ট্রিক্ট সোসাইটি অব ইউএসএ, বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সমিতি ইউএসএ, এস্টোরিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইউএসএ প্রভৃতি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই শহীদ মিনারে পুস্পষÍবক অর্পণ করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুলহেন খান এবং একুশের অনুষ্ঠান সফল করায় সংশ্লিস্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম।
নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষ্যে নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে জ্যামাইকার ইকরা পার্টি হলে একুশের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ এবং একুশের অনুষ্ঠান সফল করায় সংশ্লিস্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: শফিউল আলম শফিক।
এছাড়াও সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইন আমেরিকার উদ্যোগে সোমবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেস্টুরেন্টে মহান একুশ উদযাপনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এখানেও নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদেও স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। অন্যান্য অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অপরদিকে কানাডা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী রাজ্যের পেটারসনে, ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্যের লস এঞ্জেলেসে নির্মিত স্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশী অধ্যুষিত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, টেক্সাস, মেরিল্যান্ড, পেনসেলভেনিয়া, মিশিগান, কানেকটিকাট প্রভৃতি রাজ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উীদ্দপনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়।
Posted ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh