বাংলাদেশ রিপোর্ট : | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্টেটের মতো নিউইয়র্কেও এখন গাঁজা চাষ, গাঁজা বিক্রয় ও সেবন আইনসিদ্ধ। এর ফলে এই খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এবং শুধু নিউইয়র্ক গাঁজা ব্যবসায়ে ২০২৫ সালের মধ্যে আনুমানিক ৬৩,০০০ নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে ‘ক্যানাবিজটিম,’ এর জরিপের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। গাঁজার চাষ ও বিপনন এখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পের অন্তর্ভূক্ত। নিউইয়র্কে সম্প্রতি গাঁজাকে ‘বিনোদনমূলক’ বিক্রয়যোগ্য পন্য হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে, এই খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেতে থাকবে। গাঁজা খাত থেকে নিউইয়র্ক সিটি বছরে সিটি ৪০ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে। গত কয়েক মাসে সিটিতে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গাঁজার ডিসপেনসারি খোলা হয়েছে। যেখানে এইচআইভি ও এইডস আক্রান্তরা সহায়তা পাচ্ছেন। কিন্তু এসব বৈধ ব্যবসা অবৈধ ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।
নব্বইয়ের দশকে কার্ক লরেন্স কুইন্সের ফার রকওয়ের এক রেকর্ড স্টোরে গোপনে গাঁজা বিক্রয় করতেন। এজন্য তাকে বেশ কয়েক দফা গ্রেফতারও হতে হয়েছে এবং গাঁজা বিক্রয়ের কারণে তার জীবনের পরিণতিতে তিনি হতাশায় ভুগেছেন। লরেন্সের বয়স এখন ৪৫ বছর এবং ম্যানহাটানের এক রেস্টুরেন্টে বার্টেন্ডার হিসেবে চাকুরি নিয়েছেন, যেখানে তিনি প্রকাশ্যে গ্রাহকদের কাছে গাঁজা বিক্রয় করেন। ‘ক্যানাবিজটিম’ এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, আগামী দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলবর্তী নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটে গাঁজার বিক্রয় ও রাজস্বের পরিমাণ পশ্চিম উপকূলীয় স্টেটগুলোর রাজস্বকে ছাড়িয়ে যাবে। গাঁজা ব্যবসায়ে নতুন কর্মসংস্থান নিউইয়র্ক সিটিতে বেকারত্ব হ্রাসে ভূমিকা রাখবে, যেখানে দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোর চেয়ে বেকারত্ব হার অধিক এবং বিশেষ করে করোনা মহামারীকালে যেভাবে বেকারত্ব বেড়েছিল এখনো নিউইয়র্ক সিটির পক্ষে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
ম্যানহাটানের ইউনিয়ন স্কোয়ার ট্রাভেল এজেন্সি নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্ক স্টেটে খুচরা গাঁজা বিক্রয়ের চতুর্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন লাভ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানে চাকুরির জন্য আবেদন পড়েছিল প্রায় ১,৫০০। প্রতিষ্ঠানের মালিক মি: কনওয়ে আবেদনগুলো থেকে ৫৮ জনকে বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। জাতীয়ভাবে গাঁজা ব্যবসায়ে বৈধ কর্মী সংখ্যা গত ৫ বছরে তিন গুণ বেড়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত গাঁজা উৎপাদন ও বিপনন ফেডারেল আইনে অবৈধ। যেসব স্টেট গাঁজা উৎপাদন ও বিপননকে বৈধতা প্রদান করেছেন, সেসব স্টেটের প্রশাসন আশা করছে যে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ গাঁজা খাতকে অনুমোদন প্রদান করবে। গাঁজা ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে, গাঁজার চাহিদা কমবে না এবং এর বৈধ সরবরাহ সবসময় বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে গাঁজা ব্যবসায়ে ৫ হাজার লোক নিয়োজিত ছিল, যার মধ্যে নিউইয়র্কের সংখ্যা তেমন ছিল না। মেয়র এরিক অ্যাডামস আশা করেছেন যে আগামী তিন বছরে নিউইয়র্ক সিটিতে গাঁজা ব্যবসায়ে ২৪,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কিন্তু নিউইয়র্ক ভিত্তিক কর্মসংস্থান বিষয়ক জরিপ প্রতিষ্ঠান ‘জিপরিক্রুটার’ এর জরিপ অনুযায়ী নিউইয়র্কে এই খাতে কর্মসংস্থান ২০২৫ সালের মধ্যেই ৬৩ হাজারে উন্নীত হবে। বর্তমানে গাঁজা ব্যবসায়ে জড়িতদের অধিকাংশই গাঁজা চাষের পর্যায়ে নিয়োজিত, যা দ্রুত বিপনন পর্যায়ে সম্প্রসারিত হতে থাকবে। বর্তমানে একজন ফুলটাইম গাঁজা চাষী বার্ষিক ৪০ হাজার ডলার আয় করে এবং বার্টেন্ডাররাও এই পরিমাণ অর্থ আয় করে থাকে। কিন্তু গাঁজা বিপননে জড়িত ম্যানেজার পর্যায়ের পদে বার্ষিক বেতন গড়ে এক লাখ ডলার, যা শিগগিরই দুই লাখ ডলারে পৌছতে পারে এমন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ টি স্টেট ও ইউনিয়ন টেরিটরিতে রিক্রিয়েশনাল গাঁজা সেবন অনুমোদিত, সেগুলো হচ্ছে; নিউইয়র্ক, কলোরাডো, ওয়াশিংটন, আলাস্কা, ওরিগন, ওয়াশিংটন ডিসি, ক্যালিফোর্নিয়া, মেইন, ম্যাসাচুসেটস, নেভাদা, মিশিগান, ভারমন্ট, গুয়াম, ইলিনয়, অ্যারিজোনা, মন্টানা, নিউ জার্সি, ভার্জিনিয়া, নিউ মেক্সিকো, কানেকটিকাট, রোড আইল্যান্ড, মেরিল্যান্ড ও মিসৌরি।
নিউইয়র্কে গাঁজার অবৈধ দোকান উচ্ছেদের পরিকল্পনা
নিউইয়র্কে গাঁজার অবৈধ দোকান উচ্ছেদের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস। নিয়ম লঙ্ঘন করায় ইতোমধ্যে গাঁজার ৫৬৬টি অবৈধ দোকানকে জরিমানা করা হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে ৫৩টি স্থানে অভিযান চালিয়ে ৪ দশমিক ১ মিলিয়ন মূল্যমানের পণ্যসামগ্রী আটক করা হয়। এ ছাড়া চলতি সপ্তাহে ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস ৪০০ লাইসেন্সবিহীন ‘স্মোক শপ’কে চিঠি পাঠিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও দোকান উৎখাত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মেয়র অফিস এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়—কয়েক মাস ধরে অবৈধ গাঁজা ব্যবসায়ীরা এর বৈধকরণের সুযোগের অপব্যবহার করছে। শহরে তারা লাইসেন্সবিহীন ‘স্মোক শপ’ গড়ে তুলেছে। বাজার দখলের এই ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’ প্রবণতা সহ্য করা হবে না। নিউইয়র্ক সিটি আইন পরিবর্তন করেছে। এ আইন সমতার ভিত্তিতে সব জায়গায় কার্যকর হবে। গাঁজাসংক্রান্ত আইনে দীর্ঘদিন ধরে কৃষ্ণাঙ্গরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিগৃহীত হয়ে আসছিল। তাদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল। আমাদের কমিউনিটির ভাইবোনদের বিচারে সোপর্দ করা হচ্ছিল। এ অবস্থার অবসানের জন্য সোচ্চার ব্যক্তিরা কঠোর লড়াই করে গাঁজাসংক্রান্ত আইনে একটি সমতা প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছেন। সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, বৈষম্য দূর করা ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে সিটিতে গাঁজাকে বৈধ করা হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, নতুন আইনে গাঁজাসামগ্রীর অনিয়ন্ত্রিত বিক্রির অবাধ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ গাঁজা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। তাদের বিরুদ্ধে শেরিফ মিরান্ডা ও নিউইয়র্ক পুলিশ ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।
Posted ১:১১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh