বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৩
নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোর প্রায় দুই লাখ ইমিগ্রান্ট ছাত্র বসবাসের স্থায়ী কোনো স্থান নেই। এ সংখ্যা নিউইয়র্ক সিটিতে হোমলেস হিসেবে বিবেচিত সর্বকালের সর্বোচ্চ সংখ্যা উল্লেখ করে নিউইয়র্ক টাইমসের গত বুধবার এক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশকারী ইমিগ্রান্টদের টেক্সাস স্টেট সরকার নিউইয়র্কে পাঠিয়ে দেওয়ার কারণে ইতোমধ্যে সিটিতে নতুন ইমিগ্রান্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় লাখ। নবাগত ইমিগ্রান্টদের মধ্যে যারা শিশু, তাদের মধ্যে ৪২ হাজারের বেশি সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে ভর্তি হয়েছে, যারা তাদের পরিবারের সঙ্গে অস্থায়ী আবাসে বসবাস করছে, যেখানে পড়াশোনার অনুখূল পরিবেশ নেই।
নিউইয়র্ক টাইমস সিটির পরিসংখ্যান উল্লেখ করে জানিয়েছে যে, এসব শিশু সিটির শেলটার হোম, সিটির পক্ষ থেকে নবাগত ইমিগ্রান্টদের জন্য ভাড়া করা হোটেল, আত্মীস্বজনের বাড়ি এবং অন্যান্য সাময়িক আশ্রয়ে রয়েছে। হোমলেস ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রশাসনের জন্য বড়ো ধরনের একটি চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। এসব ছাত্রের অবস্থান নাজুক, তারা প্রায়ই স্কুলে আসতে পারে না। অনেক ছাত্র যে স্কুল ডিষ্ট্রিক্টে ছিল, সেখান থেকে অন্যত্র শিফট হওয়ার কারণে স্কুল ডিষ্ট্রিক্ট পরিবর্তন নিয়েও বিড়ম্বনার মধ্যে আছে। স্কুল কর্তৃপক্ষও অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে, কারণ নবাগত ইমিগ্রান্টরা এখনো নিশ্চিত নয় যে, তারা যে স্কুলে তাদের সন্তানদের ভর্তি করেছে, সেখানে তারা আদৌ থাকতে পারবে কিনা। কারণ এখনো তারা কোনো স্থায়ী কাজ খুঁজে নেওয়ার পর্যায়ে নেই। প্রথমে তাদেরকে এসাইলামের জন্য আবেদন করতে হবে, এরপর নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর ওয়ার্ক পারমিট ও সোস্যাল সিকিউরিটি কার্ড পেয়ে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি পাওয়ার পরই তাদের সন্তানদের নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় সেখানকার স্কুল ডিষ্ট্রিক্ট বেছে নেয়ার মতো অবস্থায় আসবে।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে নিউইয়র্ক সিটির হোমলেস ছাত্র সংখ্যা পাশ্ববর্তী পেনসিলভেনিয়ার বড় সিটি ফিলাডেলফিয়ার পুরো পাবলিক স্কুল সিস্টেমের চেয়ে বেশি। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির প্রায় ৯ জনের মধ্যে ১ জন ছঅত্র হোমলেস। একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে ছাত্রসংখ্যা যেভাবে হ্রাস পেয়েছে, এখন পর্যন্ত তা মহামারী পূর্ব পরিস্থিতিতে ফিরে যায়নি। এ অবস্থায় হোমলেস ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যাটিকে আরো জটিল করেছে। তবে শহরের কিছু এলাকা, যেমন ব্রঙ্কস, সেখানে ছাত্ররা বিশেষভাবে সমস্যাগ্রস্ত ছিল, সিটির হিসাব অনুযায়ী একটি পর্যায়ে ব্রঙ্কসের একটি স্কুল ডিষ্ট্রিক্টে ২২ শতাংশের বেশি ছাত্র হোমলেস ছিল। সংখ্যা বেড়ে উঠছে, কারণ সিটির আবাসন ঘাটতি ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং স্কুলগুলোও আর্থিক চাপে রয়েছে।
আর্থিক স্কংটের কারণে সিটি স্কুলের বাজেট কাট করায় হোমলেস ছাত্ররা সেই সেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হবে। ‘এডভোকেটস ফর চিলড্রেন অফ নিউইয়র্ক’ নামে এক নন-প্রফিট সংস্থার নেতৃবৃন্দ হোমলেস ছাত্রদের ওপর গত এক দশকের ডাটা সংগ্রহ করেছেন এবং বর্তমানে উদ্ভুত পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বর্ণনা করে বলেছেন যে, পরিস্থিতি বিপজ্জনক রূপ নিতে যাচ্ছে। ম্যানহাটানের এক পাবলিক স্কুলের প্রিন্সিপাল নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে, ইমিগ্রান্ট ছাত্রদের বিষয় দেখাশোনার জন্য এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের পৃথক একটি অফিস চালু করা প্রয়োজন। অফর এক প্রিন্সিপাল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ইমিগ্রান্ট শিশুদের অধিকাংশের ইংরেজি প্রথম ভাষা না হওয়ার কারণে তারা পাঠক্রম সহসা বুঝে উঠতে পারছে না। এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জেনা লাইল ইমিগ্রান্ট ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্কুলের আর্থিক সংস্থানে দিকে জোর দেন এবং বলেন যে, আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে তাদেরকে সহায়তা করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উল্লেখ্য, গত বছর সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে হোমলেস ছাত্রসংখ্যা ছিল ১১৪,০০০ এবং ২০১৭-১৮ সালে ছিল ১০৪,০০০ জন। হোমলেস ছাত্রদের একটি বড় অংশ হিসপানিক এবং সিটির স্কুলগুলোতে ১,৭০০ শিক্ষক আছেন যারা ইংরেজির পাশাপাশি স্পেনিশ ভাষায় দক্ষ। কিন্তু অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রে স্কুলে শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে।
Posted ১২:৩৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh