করোনা মহামারী পরবর্তী বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় সিটির অসংখ্য বাসিন্দা তাদের প্রিয় সিটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। শুধু বাড়ি ভাড়া নয়, বাড়ির মূল্যও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় যারা আগে বাড়ি কেনার কথা ভাবতেন, এখন আর তা ভাবছেন না। কারণ বাড়ির মূল্য এবং মর্টগেজ রেট দুটিই অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিউইয়র্ক সিটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল সিটি এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেরও প্রধান ক্ষেত্র। নিউইয়র্ক সিটিতে লোকসংখ্যার তুলনায় বাড়ির সংখ্যা যথেষ্ট কম হওয়ায় বাড়ি ভাড়া ও মূল্য অস্বাভাবিক গতিতে বেড়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ম্যানহাটানে মাঝারি মানের একটি বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেত বার্ষিক ১৯ শতাংশ হারে।

করোনা পরবর্তী সময়ে ভাড়া বেড়েছে বার্ষিক ২০ শতাংশ। কিন্তু সে তুলনায় নাগরিকদের বেতন বৃদ্ধি পায়নি। নিউইয়র্কাররা যা আয় করে তার প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িভাড়ার জন্য ব্যয় করে বলে বিভিন্ন সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে।

নেভাদার লাস ভেগাস ‘প্রমোদ নগরী’, এমনকি ‘পাপের নগরী’ হিসেবেও খ্যাত। এই সিটির বাড়ি ভাড়ার অকল্পনীয় বৃদ্ধি সকলের চোখে পড়ার মতো। ২০২৪ সালের মার্চে এই সিটিতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে করোনা পূর্ব সময়ের ৬০ শতাংশ বেশি। বাড়ি ভাড়া আদায় করতে ব্যর্থ বাড়ি মালিকদের দায়ের করা এভিকশন বা উচ্ছেদ মামলা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ফিনিক্স সিটিতে করোনার আগে যে বাড়ির ভাড়া মাসিক ৯০০ ডলার ছিল, তা গত এক বছর আগে বেড়ে দাড়িয়েছিল ১,১৭৬ ডলার এবং বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৫৮৫ ডলার।

আটলান্টায় বাড়ি ভাড়া ২১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। টেক্সাসের ডালাসে ভাড়া বেড়েছে মহামারী পূর্ব সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। টেনেসির ন্যাশভিলে বাড়ি ভাড়া বেড়ে করোনাকালে চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া সিটিতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি হার ৩০ শতাংশ, শিকাগোতে বৃদ্ধি ১৭ শতাংশ। পশ্চিম উপকূলের ওয়াশিংটন স্টেটের সিয়াটল সিটিতে গত বছর পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ১৩ শতাংশ, কিন্তু বর্তমানে সিয়াটলে বাড়িভাড়া বেড়েছে গত বছরের চেয়ে ১৫ থেকে ২১ শতাংশ বেশি।

ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ফ্রান্সিসকো সিটিতে সাধারণ মানের একটি বাড়ি ভাড়া ৩,০০০ ডলারের কম নয়। সীমিত আয়ের লোকজনের পক্ষে এই সিটিতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং অনেকে দূরের ছোট সিটিগুলোতে চলে গেছে এবং সেখান থেকে কর্মস্থলে যাতায়ত করছে। ওয়াশিংটন ডিসি’র বাড়ি ভাড়া করোনার আগের সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও ভাড়া নেয়ার জন্য সেখানে বাড়ি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের লোকজনের সিটি ছেড়ে যাওয়ার রিপোর্ট দিয়েছে সংবাদপত্রগুলো।

ফ্লোরিডার মায়ামি সিটিতে আবাসন সমস্যা প্রকট না হলেও পর্যটনের জন্য লোকসমাগম বেশি হয় বলে সেখানে বাড়িভাড়া বেশি। বহু ভাড়াটেকে তাদের আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি ভাড়ার পেছনে ব্যয় করতে হয়। বোস্টন সিটিতে সাধারণ বাড়ি ৩,০০০ ডলারের নিচে পাওয়া দু:সাধ্য হয়ে পড়েছে। বহু ভাড়াটে উচ্ছেদের কবলে পড়েছে গত ব্ছরগুলোতে।