বাংলাদেশ রিপোর্ট : | শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৯ মে সোমবার পালিত হয়েছে ‘মেমোরিয়াল ডে’। দিনটি সম্পর্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ বহু ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির মধ্যে সংশয় রয়েছে। কারণ, একই ধরনের আরো দুটি দিবস- ‘ভ্যাটারানস ডে’ ও ‘আর্মস ফোর্সেস ডে’ যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়। ‘মেমোরিয়াল ডে’ সম্পর্কে আলোকপাত করতে আমেরিকান গৃহযুদ্ধের দিকে ফিরতে হয়।
উত্তর ও দক্ষিণ, দাসপ্রথা, কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের ঘৃণা-বিদ্বেষ ছিল এই দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের কারণ। আঠারশো ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্র রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত ‘মেমোরিয়াল ডে, যা পালনের সূচনা হয় ১৮৬৮ সালের মে মাসের ৩০ তারিখে। তখনো মানুষের মনে তাদের প্রিয়জন হারানোর ব্যথা তাজা ছিল। তখন দিবসটি পরিচিত ছিল ‘ডেকোরেশন ডে’ নামে।
ইউনিয়নের পক্ষের সেনাপতি জেনারেল জন এ. লোগান ৩০ মে দিনটিকে গৃহযুদ্ধে নিহত ৬,২০,০০০ বা তারও বেশি সংখ্যক আমেরিকান সৈন্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। সৈন্যদের বিপুল সংখ্যা ছিল ওই সময়ের আমেরিকার জনসংখ্যার কমপক্ষে ২ শতাংশ। এর মাত্র অর্ধশতাব্দী পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত দিনটি ‘ডেকোরেশন ডে’ ছিল, যা পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মেমোরিয়াল ডে’। তখন থেকে দিবসটিকে যুক্তরাষ্ট্রের সকল যুদ্ধে সর্বত্র নিহতদের স্মরণে পালন করা হয়ে আসছে। দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক আমেরিকান মারা যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, যে সংখ্যা ৪ লাখেরও বেশী।
মেমোরিয়াল ডে পালনের শুরু থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দিবসটি পালিত হতো মে মাসের ৩০ তারিখে। কিন্তু ১৯৭০ সালের পর এই ধারায় পরিবর্তন ‘মেমোরিয়াল ডে’ নির্ধারণ করা হয় মে মাসের শেষ সোমবার। যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের সম্মান জানাতে মোট তিনটি জাতীয় দিবস পালন করা হয়। ‘মেমোরিয়াল ডে’ ছাড়াও বাকি দু’টি দিবস হলো যথাক্রমে ‘ভ্যাটারানস ডে’ ও ‘আর্মস ফোর্সেস ডে’।
এরমধ্যে ভ্যাটারানস ডে পালন করা হয় সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সম্মান জানাতে এবং আর্মস ফোর্সেস ডে পালন করা হয় সশস্ত্রবাহিনীর কর্মরত সদস্যদের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে। তিনটি দিবসই জাতীয়ভাবে সরকারি ছুটির দিন। ১৯৭১ সালের পর থেকে ‘মোমোরিয়াল ডে’ জাতীয় ছুটির দিনের তালিকাভূক্ত হয়।
মেমোরিয়াল ডে উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্যারেড ও স্মৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। এসব অনুষ্ঠানে ২৪৭ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার জন্য বিভিন্ন যুদ্ধে যে হাজার হাজার নাম না জানা বীর আত্মোৎসর্গ করেছেন তাঁদেরকে স্মরণ করা হচ্ছে। আমেরিকার স্বাধীনতা এবং বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমেরিকার ভূমিকা পালন করতে গিয়ে সেসব আমেরিকান নারীপুরুষ যারা ইতিহাসের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, সবই তারা করেছেন তাদের পিতৃভূমি আমেরিকার জন্য।
যুদ্ধক্ষেত্র এবং যুদ্ধের আগুনের মধ্য দিয়ে আমেরিকা গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিবছর ‘মেমোরিয়াল ডে’তে আমেরিকানরা তাদের ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, যে ত্যাগ স্বীকার করেছে মাত্র অল্প কিছুসংখ্যক অকুতোভয় মানুষ, কিন্তু তারা কল্যাণ সাধন করেছেন সমগ্র আমেরিকান জাতির ও বিশ্ববাসীর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা এবং তার আদর্শের প্রতি তাদের অবদানের স্বীকৃতি ‘মেমোরিয়াল ডে’।
দিনটিকে একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে গ্রীষ্মকালের সূচনা হিসাবে ধরা হয়। এ দিবস উপলক্ষে আমেরিকার ছোটবড় সকল সিটিতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেক সৈনিকের সমাধিতে এদিন স্বেচ্ছাসেবকরা আমেরিকার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সমাধি-সৌধ পরিদর্শনসহ মৃত সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আরও নানা রকম আয়োজন থাকে।
Posted ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh