শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি-রাজনীতিতে নতুন ভীতি

বাংলাদেশ প্রতিবেদন :   |   শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি-রাজনীতিতে নতুন ভীতি

যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য ঘোষিত ভিসা নীতি ব্যাপক ভীতির সঞ্চার করেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে যারা বাধা সৃষ্টি করবে, তাদের বিধিনিষেধের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে ভিসা নীতিতে। ঘোষিত ভিসা নীতির বিধিনিষেধ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রযোজ্য এবং একটা সতর্কবার্তা।

বিষয়টা আওয়ামী লীগ ও সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর ঢাকায় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক তোলপাড় হচ্ছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জনপ্রশাসনে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিহিংসা পরায়ন, দুর্নীতিবাজ ও গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক ঠুকে দেয়া রাজনীতিক ও তাদের সহায়ক শক্তির মাঝে।


বিশেষ করে সামরিক-বেসামরিক আমলা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা যারা রাষ্ট্র ও জনগণের সাথে বেইমানী করে ধ্বংস করেছে সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থ সম্পদ পাচার করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অভয়াাশ্রম মনে করে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য সেকেন্ড হোম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন দেশটিতে। অবৈধ অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে আবাসন গড়া কিংবা সন্তানদের পড়াতে পাঠিয়ে এতোদিন যারা নির্বিঘ্নে ছিলেন ঘুম হারাম হয়ে গেছে তাদের।

এই তালিকায় দেশের একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ও বুদ্ধিজীবীদের যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে পরিবার পরিজন ও অর্থ সম্পদ। নতুন ভিসা নীতি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তাদের মাঝেও। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন ঘোষিত ভিসা নীতি ছিলো একটি নজিরবিহীন ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর এর আগে উগান্ডা, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও বেলারুশের মতো দেশের জন্য এধরণের ভিসানীতি ঘোষণা করে। কিন্তু বাংলাদেশকে এ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে এমনটি ভাবতে পারেননি কেউ।


গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যকর করতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারা বাঁধা সৃষ্টি করবে তারাই পড়বে এই ভিসা নীতির আওতায়। অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যত তিনটি সময়কালের জন্যই প্রযোজ্য হবে এই নীতি। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট ঘোষিত এই ভিসা নীতি ব্যক্তি বিশেষের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার চেয়েও কঠোর একটি সিদ্ধান্ত। ব্লিংকনের ঘোষণার তিন সপ্তাহ পূর্বেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটনে অবস্থানকালে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয় সিদ্ধান্তটি। কিন্তু সরকার তা আমলে না নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার নীতি আদর্শ নিয়ে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব ও প্রতিষ্ঠানটির ৬ কর্মকর্তার উপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের আরো অনেকের উপর নিষেধাজ্ঞা আসন্ন এমন সংবাদ সোস্যাল মিডিয়ায় চাউর হচ্ছে প্রতিদিনই। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান উন্নয়ন সহযোগী। ভিসা প্রথা তুলে দিলে একদিনেই গোটা দেশ সয়লাব হয়ে যাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষে।


যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের অভিবাসনের ইতিহাস সুদীর্ঘ দিনের নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উচ্চ শিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে এসে স্থায়ীভাবে থেকে যান অনেকে। এছাড়া জাহাজে কাজ করতেন এমন অনেকে বন্দর থেকে পালিয়ে বসতি গড়েছেন। পরবর্তীতে ওপি-ওয়ান ও ডিভি লটারির মাধ্যমে মোটা দাগে বাংলাদেশীদের সুযোগ হয় বৈধ অভিবাসনের। ফ্যামিলি ভিসায় তাদের পরিবারের সদস্যরা আসছেন এখনো। বন্ধুর পথ পেরিয়ে অবৈধভাবেও যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন অনেক বাংলাদেশী। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়েছে । এর বাইরে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশী যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করছেন স্টুডেন্ট ভিসায়। যাদের সিংহভাগ শিক্ষা ব্যয় মেটায় বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত অর্থে। এদের অধিকাংশের অভিভাবকই বাংলাদেশের রাজনীতিক, সামরিক, বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সহ উচ্চবিত্ত পরিবারের।

সাম্প্রতিককালে এর বাইরে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন ও পাচারকারীরা ঢুকেছে নানাভাবে যুক্তরাষ্ট্রে। এদের কারো পরিবার বসত করছে স্থায়ীভাবে। বাকিরা নানা উছিলায় প্রতিবছর বার কয়েক বিলাস ভ্রমণে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রে। একসময় ছিলো আমেরিকান ডলারে বাংলাদেশে থাকা সবচেয়ে আরামদায়ক। এখন দেখা যাচ্ছে উল্টোটা বাংলাদেশী টাকায় আমেরিকায় বসবাসের মহোৎসব। এসব লুটেরাদের সাথে খেটে খাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা পাল্লা দিতে পারছেন না। আবার আরেক শ্রেনীর প্রবাসী আছেন যাদের দিন অতিবাহিত হতো অতিকষ্টে, তারা দেশে গিয়ে রাজনৈতিক আনুকূল্যে ব্যাংক, শিল্প কারখানা ও অন্যান্য ব্যবসায় বাণিজ্যের নামে দেশের অর্থ নিয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রে।

যাপন করছেন বিলাসী জীবন। তারাও নানাভাবে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাঁধা সৃষ্টিকারীদের তালিকায় নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করেছেন। নতুন ভিসানীতিতে তারাও ফেঁসে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আর যাদের এক পা বাংলাদেশে এবং অপর পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে, মানসিক অস্থিরতায় ব্যাকুল তারা। অতীতে জাতীয় সংসদের তিনটি নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন সাবেক কর্মকর্তারাও নতুন ভিসানীতির আওয়তায় পড়বে। আগামী নির্বাচনে জোড়- জুলুম জালিয়াতি করে দেশের মানুষকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করার নীল নকশা যারা প্রণয় করেছিলেন তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ ঘটেছে। এখন তারা চেষ্টা করছেন যেকোন মূল্যে কি করে ভিসানীতির আওতামুক্ত থেকে পাচারকৃত অর্থ সম্পদ ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে রাখা যায়।

আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ আমলা ও সরকারদলীয় নেতাদের মাঝে এমন আচরণ ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর নতুন মোড় নিয়েছে দেশের রাজনীতি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে লাভ-ক্ষতির সমীকরণ। মার্কিন ভিসা নীতির প্রভাবে পাল্টে যাচ্ছে এতদিনের হিসাব-নিকাশ। রাজনৈতিক শিবিরগুলোতে এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জনপ্রশাসনে।

অনেকে নিজে থেকে নিরপেক্ষ থাকার ভান করছেন। কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, তারা কোনো পক্ষে নেই। তাদের একমাত্র পরিচয় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। এদিকে রাতারাতি রং পরিবর্তন করে সুযোগসন্ধানীদের মধ্যে গত ১৫ বছর যারা নানাভাবে সুবিধা নিয়েছেন, সরকারের ইমেজ নষ্ট করে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন, তারা এখন ভোল পালটানোর চেষ্টা করছেন। এসব মহলে এখন মূল আলোচ্য বিষয় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিষয়টি এখন পরিণত হয়েছে ‘টপ দ্যা কান্ট্রি’।

advertisement

Posted ১২:২০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.