বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩
মেক্সিকো থেকে ত্রিশ বছর আগে তরুণ বয়সে মেক্সিকো থেকে টেক্সাস পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল ইরমা ও জেভিয়ার হার্নান্দেজ। তাদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার উদ্দেশ্য ছিল মেক্সিকোতে তার পরিবারকে সহায়তা করা। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে তাদের দেখা যায় লাগর্ডিয়া এয়ারপোর্টে ওয়ান ওয়ে টিকেটে নিউইয়র্ক থেকে মেক্সিকোর ওক্সাকাগামী বিমানের জন্য অপেক্ষা করতে। তারা তাদের চার আমেরিকান সন্তানকে পেছনে রেখে যাচ্ছেন, যাদের সবাই গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কর্মে প্রতিষ্ঠিত এবং তারা তাদের জন্মের দেশ যুক্তরাষ্ট্রকেই ভালোবাসতে শিখেছে।
দশকের পর দশ বৈধ স্ট্যাটাস ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের পর এই দম্পতি ভেবেছেন যে এখন তাদের নিজদেশে ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে। জেভিয়ার হার্নান্দেজের মায়ের বয়স এখন ৫৭ বছর এবং মেক্সিকোতে বসবাসকারী তার মায়ের বয়স ৯১ বছর। হার্নান্দেজ মনে করতেন যেকোনো সময় তার মায়ের মৃত্যু ঘটতে পারে এবং তার উচিত শেষ সময়ে মায়ের পাশে থাকা। কারণ তিনি তার পিতা এবং শ্বশুর শাশুড়ির মৃত্যুকালেও তাদের পাশে থাকতে পারেননি। তারা যুক্তরাষ্ট্রে যে আয় করেছেন, তা দিয়ে একটি ছোট বাড়ি তৈরি করেছেন এবং ব্যবসায়েও কিছু অর্থ ব্যয় করেছেন, যাতে তাদের অর্জিত অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন।
শুধু হার্নান্দেজ দম্পতি নয়, আরও অনেক ইমিগ্রান্ট, যারা বহু বছর অপেক্ষা করেও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের বৈধ অনুমোদন পাননি, তারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন বা অনেক যাওয়ার জন্য মনস্থির করেছেন। অবশ্য কিছু সংখ্যক আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পক্ষেই আছেন, কারণ যে সীমান্ত দিয়ে একবার তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, সেই একই সীমান্ত পথে তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে সাহসী হন না। তারা যখন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন তখন তারা ছিলেন তরুণ এবং তারা উদ্যমী ছিলেন, এখন তাদের দেহে বয়সের ভার, তারা পরিণত বয়স্ক এবং তারুণ্যের সাহস ও উদ্যম অনেকটাই হারিয়ে গেছে। তবুও যুক্তরাষ্ট্রে কোনো না কোনো কাজে নিজেদের শ্রম নিয়োগ করতে পারবেন। দেশে ফিরে তারা কি করবেন, সেই অনিশ্চয়তা তাদের পিছনে আটকে রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রান্ট কমিউনিটিতে সবচেয়ে বড় অংশই মেক্সিকান। কিন্তু এক দশক আগে থেকেই তাদের একটি অংশের মধ্যে দেশে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে মেক্সিকোর লক্ষ্যণীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং গত মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে ধস নামার কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতি এখনো সামলে না ওঠতে পারায় বহু মেক্সিকান অবৈধ ইমিগ্রান্ট অন্যান্যের মতই বেকার হয়ে পড়েছেন, অথবা আয় পরিস্থিতি আগের পর্যায়ে নেই। তারা দেশে চলে যেতে চান। কিন্তু সেক্ষেত্রেও অনেক সিদ্ধান্তহীনতা, অনিশ্চয়তা আছে। তা সত্বেও সাম্প্রতিককালে এই দেশে ফেরার পর্যায়ে অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ধড়পাকড় বৃদ্ধি এবং তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া ও ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখার মত উদ্যোগে তারা সার্বক্ষণিক ভীতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেছে এবং মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এদেশে আর নয়, এখন দেশে ফেরার সময় হয়েছে।
তবে বাইডেন প্রশাসনের সময় অনেকে সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। এর ফলে সামগ্রিক ইমিগ্রেশন চিত্রে যে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন এসেছে কেউ তা মনে করেন না। গত বছর দক্ষিণ সীমান্তে ইমিগ্রান্ট প্রবেশ, ধড়পাকড় সব মিলিয়ে বিশ লাখ লোককে হিসাব করেছে বর্ডার পেট্টল এজেন্সি। কিন্তু ফেরত যাওয়া ইমিগ্রান্ট সংখ্যা নতুন ইমিগ্রান্ট সংখ্যার সঙ্গে কোনোভাবেই তুলনীয় নয়। সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজের সিনিয়র ভিজিটিং ফেলো রবার্ট ওয়ারেন বলেছেন যে, সবাই যুক্তরাষ্ট্রে আসে, এবং কেউ ফিরে যায় না, এ ধারণা ভুল। বহু ইমিগ্রান্ট যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে তাদের দেশে চলে যায় এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে।
Posted ৭:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh