ঢাকা | শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
স্বতন্ত্ররা সমর্থন দেওয়ায় জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের ভাগ আরও বেড়েছে। ফলে মনোনয়নের সম্ভাবনাও বেড়েছে। এতে বেড়েছে প্রত্যাশীদের তদবির আর দৌড়ঝাঁপও। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, আগের তিনবারের মতো এবারও দলের তৃণমূল প্রাধান্য পাচ্ছে। পুরোনোরা বেশির ভাগ বাদ পড়ে আসতে পারে অনেক নতুন মুখ। তাঁদের মধ্যে দু-একজনের মন্ত্রিসভায় যুক্ত হওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত তিনবারে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে দেখা গেছে জাতীয় রাজনীতি এবং সামাজিকভাবে পরিচিত মুখের তুলনায় তৃণমূলের নেতা ও রাজনীতির জন্য যেসব নেতা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে। আমরা ভুলে গেলেও দলীয় সভাপতি তাঁদের ঠিকই খুঁজে বের করেন। এবারও তিনি সেটাই করবেন বলে মনে করি।’
সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগের পাওয়ার কথা ছিল ৩৮টি। তবে ৬২ স্বতন্ত্র এমপি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮। আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টিও। তাই বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ভাগে পড়ছে মাত্র ২টি আসন।
সংরক্ষিত মহিলা আসনে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যের মধ্যে হাতে গোনা দু-তিনজন ছাড়া সবাই বাদ পড়তে পারেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, তাঁদের জায়গায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ৭-১০ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে সুশীল সমাজ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাট্য ও তারকা ছাড়াও সরাসরি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েও জোটগত সমঝোতার কারণে যাঁরা সরে দাঁড়িয়েছেন কিংবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নানা হিসাব-নিকাশে যাঁরা মনোনয়ন পাননি, তাঁদের এবার বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে তৃণমূলের রাজনীতিতে পোড় খাওয়া পরিবারের সদস্য, জেলা পর্যায়ে ত্যাগী নেত্রীরা।
গত ২৮ জানুয়ারি স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ইচ্ছা পোষণ করেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানিয়েছিলেন। তাঁদের একজন জানান, শেখ হাসিনা তাঁদের বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী পরিবার রয়েছে। অনেক নেতা অকালে মারা গেছেন। তাঁদের স্ত্রী-সন্তানেরা আছেন। পেশাজীবীদের মধ্য থেকেও কাউকে কাউকে সংসদ সদস্য করা দরকার। এর মাধ্যমে ত্যাগীদের একটা স্বীকৃতি দেওয়া যাবে।
এদিকে সংরক্ষিত আসনে নিজ নিজ অবস্থানের কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং স্বতন্ত্র এমপিরা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। তফসিল ঘোষণার পরে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবে আওয়ামী লীগ। প্রথমে আগ্রহীদের কাছে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে। সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে কাজ করছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম বলেন, ‘সংরক্ষিত মহিলা এমপি নির্বাচনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। উনি সবাইকে চেনেন।’
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন স্বাস্থ্য সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, মারুফা আক্তার পপি, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা। সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি আলোচনায় আছেন। তারকাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নাট্যব্যক্তিত্ব লাকী ইনাম, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহানের নাম। একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা এমপিদের মধ্যে আরমা দত্ত এবারও আলোচনা আছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পরেও জাতীয় পার্টি ও জাসদের সমর্থনে তিনজনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হয়। এঁদের মধ্যে দলটির কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীকে সংরক্ষিত আসনের এমপি করা হতে পারে। মাহবুব আরা গিনিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংযুক্ত করা না হলে আবারও এমপি করা হতে পারে। অন্যদিকে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ইতিবাচক বলে জানা গেছে। নির্বাচনের আগে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকেও সংরক্ষিত আসনে এমপি বানানোর বিষয়ে কথা হয়েছিল। জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপসহ ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের ২টি আসনে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপিদের শপথের পরে মন্ত্রিসভায় কয়েকজন সদস্য সংযোজন হতে পারে। এর মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা এমপিদের একাধিক সদস্য সংযুক্ত হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকা শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে তখন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একজন শিল্পীর বিষয়ে জোর আলোচনা চলছে আওয়ামী লীগে। এ ছাড়া সংসদের হুইপ পদে মহিলা এমপিদের দায়িত্ব দেওয়া সম্ভাবনা আছে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থিতা নির্ধারণ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই করে থাকেন বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘উনি অনেকগুলো বিষয় দেখেন। বিশেষ করে রাজনীতিতে কার অবদান আছে, তৃণমূলের রাজনীতিতে অবদান আছে—এমন পরিবারের সদস্য, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে মূল্যায়ন করে থাকেন। একই সঙ্গে যেসব নারী নেতা নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেনি কিংবা জোটের কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছে, তাঁদের মূল্যায়ন করা হবে।’
Posted ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh