বাংলাদেশ রিপোর্ট : | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
অধিক প্রক্রিয়াজাত সাদা চালের ভাত নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ডায়াবেটিসের মতো ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সাম্প্রতিক গবেষনা ফলাফল অনুযায়ী চিনি খাওয়ার কারণে মানবদেহে যে প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় সাদা চালের ভাতের প্রতিক্রিয়াও একই রকম, যা মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। গবেষকরা বলেছেন, ব্রাউন রাইস, যা ধূসর বা বাদামি রঙয়ের, অর্থ্যাৎ স্বল্প প্রক্রিয়াজাত চাল এর বিকল্প হতে পারে। কারণ বাদামি চাল অধিক পুষ্টি, প্রোটিন ও আঁশ সমৃদ্ধ। সাদা চালে অধিক মাত্রায় গ্লাইসেমিক উপাদান থাকে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে সাড়ে ৪৮ কোটি মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে সাদা চাল উৎপাদিত হয় বেশি, কারণ প্রতি একরে সাদা চাল উৎপাদনকারী ধানের ফলন অধিক। তবে সাদা চাল বা বাদামি চালের মধ্যে পার্থক্য শুধু প্রক্রিয়াজাত করার পদ্ধতির উপর। ধানের খোসা ছাড়ানোর পর বাদামি চালের উপর দুটি হালকা স্তর, যার একটি খাওয়ার উপযোগী স্তর, দ্বিতীয় স্তরটি হচ্ছে, যেটি ‘জার্ম’ বা ধান উৎপাদনে ভূমিকা রাখে যে স্তরটি। এই দুটি স্তর শুধু চালকে এর প্রকৃত রঙ দেয়, তা নয়, বরং এটিই চালের সবচেয়ে পুষ্টিঘন অংশ। নেতিবাচক দিক হচ্ছে, চালের উপর এই দুটি স্তর রয়ে গেলে বাদামি বা ধূসর চাল সাদা চালের চেয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। বাদামি চাল খাওয়ার উপযোগী থাকে মাত্র ছয় মাস এবং সাদা চালের স্থায়িত্ব অধিক।
সাদা চালের যেহেতু হালকা স্তর দুটি থাকে না, এর ফলে সাদা চালের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হওয়ার পাশাপাশি রান্না করতে সময় কম লাগে এবং ভাতের আকার বাদামি চালের ভাতের চেয়ে দীর্ঘ হয়। তবে সাদা চাল তার অধিকাংশ পুষ্টিগুণ হারিয়ে ফেলে। গবেষকরা একথাও বলেছেন যে, এর মানে এই নয় যে, সাদা চালের ভাত অন্তর্নিহিতভাবে মন্দ প্রভাবযুক্ত, তবে স্বল্প স্বাস্থ্যকর। চালের উপর থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্তর অপসারণ করলে চাল থেকে দাঁত ও অস্থির জন্য যে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন সেই ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায়, হৃদপিণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে না. স্নায়ুতন্ত্রের কাজ সুষ্ঠু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-৩ থাকে না, পেশি গঠনের প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং নিউরোলজিক্যাল কাজে প্রয়োজনীয় ম্যাগসিয়াম দূর হয়ে যায়।
গবেষকরা সাদা ও বাদামি চালের পুষ্টিগত যে পার্থক্য দেখিয়েছেন, সে অনুযায়ী এক কাপ সাদা ও বাদামি চালে ক্যালোরি থাকে যথাক্রমে ২০৫ ও ২১৬, উভয় ধরনের চালে কার্বোহাইড্রেট ৪৫ গ্রাম, ফ্যাট যথাক্রমে ০.৪ গ্রাম ও ১.৮ গ্রাম, প্রোটিন যথাক্রমে ৪.২ গ্রাম ও ৫ গ্রাম, আঁশ যথাক্রমে ০.৬ গ্রাম ও ৩.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম যথাক্রমে ১৫.৮ মিলিগ্রাম ও ১৯.৫ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম যথাক্রমে ১৯ মিলিগ্রাম ও ৮৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস যথাক্রমে ৬৮ মিলিগ্রাম ও ১৬২ মিলিগ্রাম। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানেও এ ধরনের পার্থক্য বিদ্যমান।
গবেষকরা আরো দেখেছেন যে চালের বাদামি স্তর দুটিসহ অর্থ্যাৎ বাদামি চালের ভাত খেলে তা কলোরেকটাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হয়। কারণ এই স্তর দুটি এন্টিঅক্সিজেন্ট ও এন্টিইনফ্লেমেটরি গুণসম্পন্ন। বাদামি চালে দ্রবণযোগ্য, অদ্রবণযোগ্য আঁশ এবং প্রোটিন রয়েছে, যা সাদা চালের চেয়ে বেশি। আঁশ উত্তম প্রিবায়োটিক অর্থ্যাৎ শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর মাইক্রেবায়োমে, যা হজম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। চালের কার্বোহাইড্রেট থেকে অধিক ক্যালোরি পাওয়া গেলেও সাদা চালে অধিক গ্লাইসেমিক উপাদান থাকায় সাদা চালের ভাত খেলে ব্লাড সুগার দ্রুত বেড়ে যায়, যা চিনি খাওয়ার ফলে যা হয়, সাদা চালেও সেই একই প্রতিক্রিয়া ঘটে। বাদামি চালে গ্লাইসেমিক উপাদান কম থাকে ডায়াবেটিসের মতো ব্যাধির আশঙ্কা হ্রাস করে।
Posted ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh