বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়েতে এক হোমলেস ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার ঘটনা হতবাক করেছে। সিটির নির্বাচিত জনপ্রতিধিরা এ দু:খজনক মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করে এখন বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন যে কীভাবে তাদের পক্ষে মানসিক স্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওতে এক সাবওয়ে যাত্রী কর্তৃক আরেকজন যাত্রীকে গলা চেপে ধরে হত্যা করার দৃশ্য সকল দর্শককে রীতিমতো স্তম্ভিত করেছে।
বহু নিউইয়র্কারের কাছে ত্রিশ বছর বয়স্ক হোমলেস জর্ডান নিলিকে এভাবে হত্যা করা জঘন্য অপরাধ, যা অবিলম্বে বিচার করা উচিত। তারা এটাও মনে করেন যে, এ ধরনের একটি হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রমাণ করে যে, যারা মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত সিটি তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কীভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। অন্যদিকে অনেকে এই হত্যাকান্ডে দু:খপ্রকাশ করে ভীতিকর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে যে, সিটিতে জননিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিশেষ করে সাবওয়ে ব্যবহারকারীদের আদৌ কোনো নিরাপত্তা নেই। যেকোনো সময় তারা যেকোনো বিপদের মুখে পড়তে পারে।
সাবওয়ের সর্বশেষ এ ঘটনা নতুন করে প্রমাণ করেছে যে, সিটিতে অপরাধ প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে এ যাবত বহুবার বলেছেন যে সাবওয়েকে নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সাবওয়ে থেকে হোমলেসদের অপসারণ করা হয়েছে এবং প্ল্যাটফর্মগুলোতে পুলিশী টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া সাবওয়ে কারের অভ্যন্তরে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করার কথাও বলেছেন তিনি। কিন্তু তার গৃহীত কোনো ব্যবস্থাই যে ফলপ্রসু হয়নি তা সবশেষ ঘটনায় বোঝা যায়। হোমলেসদের প্রবক্তারা সোচ্চার হয়েছে যে সিটি কর্তৃপক্ষ হোমলেসদের আবাসনে ব্যবস্থা করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তদন্তকারীরা এখন ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছেন এবং বিষয়টি রাজনৈতিক পরীক্ষানিরীক্ষার বিষয়ে পরিণত হয়েছে ইতোমধ্যে, যা সিটির জন্য যারা নীতি নির্ধারণ করেন তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বিভাজিত করে ফেলেছে। সিটির দু’জন বিশিষ্ট ডেমোক্রেট সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস, কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ পরস্পরকে দোষারূপ শুরু করেছেন উত্তেজিত বাক্যবিনিময় করেন, যা সাধারণত হয় না। একজন বেসামরিক ব্যক্তির হাতে আরেকজন কৃষ্ণাঙ্গকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার ঘটনাকে সিটি কাউন্সিল স্পিকার আন্দ্রিয়ানি অ্যাডামস আইনি ব্যবস্থার ত্রুটি বলে মন্তব্য করেছেন। ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, এ পরিস্থিতি ইতোমধ্যে চরম আর্থিক সংকটে পতিত সিটি সাবওয়ের যাত্রীসংখ্যা যে আরো হ্রাস করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠার পর সাবওয়ের যাত্রী সংখ্যা এখন পর্যন্ত করোনা পূর্ব অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি।
জর্ডান নিলিকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ এক টুইট বার্তায় ঘটনাটিকে সুস্পষ্টভাবে হত্যাকান্ড বলে উল্লেখ করেন এবং আরেকজন বামপন্থী জনপ্রতিনিধি ব্র্যাড ল্যান্ডার নিলি’র ওপর হামলাকারীকে ‘অপরাধ সংঘটনের জন্য ওঁৎ পেতে থাকা ব্যক্তি’ বলে বর্ণনা করায় সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস সিএনএন’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাদের বক্তব্যকে দায়িত্বহীন বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি ঘটনার তদন্ত সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সকলকে অপেক্ষা করার আহবান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ম্যানহাটানে ‘এফ’ ট্রেনে একজন প্রায় নিয়মিত পারফর্মার, যিনি মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত এবং মাঝে মাঝেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সেদিন তিনি যাত্রীদের উদ্দেশে চিৎকার করতে থাকেন যে তিনি ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত এবং এক পর্যায়ে তিনি মারা যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এটা জানা যায়নি যে তিনি সহিংস কিছু করেছিলেন কিনা অথবা সরাসরি কাউকে হুমকি দিয়েছিলেন কিনা।
কিন্তু এক যাত্রী, যিনি একজন সাবেক নৌ-সৈনিক, তিনি জর্ডান নিলি’র গলা চেপে ধরেন এবং নিলি নিশ্চল না হয়ে পড়া পর্যন্ত তিনি সেভাবেই তার গলা চেপে ধরে রাখেন। কোনো যাত্রীকে নিলির সহায়তায় এগিয়ে যেতে দেখা না গেলেও অন্তত দু’জন যাত্রী তাকে চেপে ধরে রাখতে সাবেক নৌসেনাকে সহায়তা করেছে। গ্রীনউইচ হাসপাতালে নিলিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আইন প্রয়োগকারীরা ঘটনার তদন্তে নেমেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা।
Posted ৪:২৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh