বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩
ডেমোক্রেট সিটি হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নগরী নিউইয়র্কে এশিয়ান কমিউনিটি কি তাদের দীর্ঘদিনের আস্থান স্থান ডেমোক্রেটিক পার্টির ওপর আস্থা হারিয়ে রিপাবলিকান পার্টির দিকে ঝুঁকছে? গত বছরের নভেম্বরে নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটিতে এশিয়ান কমিউনিটির সদস্যদের বসবাসের প্রধান কেন্দ্রগুলোতে রিপাবলিকান প্রার্থী লী জেলদিন লক্ষ্যণীয়ভাবে বেশি ভোট আকৃষ্ট করেছেন, যা ২০১৮ সালের চেয়ে ২৩ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। এর আগের দশ বছর পর্যন্ত এশিয়ান নেইবারহুডগুলোর ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠ হারে গেছে ডেমোক্রেটদের পক্ষে। বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট অধ্যুষিত জ্যামাইকা এলাকায় রিপাবলিকানদের পক্ষে সমর্থন আগের তুলতায় বেড়েছে ২১ শতাংশ।
নিউইয়র্ক স্টেটের ২০০৬ সালের গভর্নর নির্বাচনে সিটির এশিয়ান নেইবারহুডগুলোতে রাজনৈতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল, যা গত নির্বাচনে সুস্পষ্ট হয়েছে এশিয়ান নেইবারহুডে ৬ বছরের মধ্যে রিপাবলিকানদের ২৩ শতাংশ পয়েন্ট অধিক সমর্থ বৃদ্ধিতে। সতেরো বছরের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটিতে এটি এশিয়ান ভোটারদের সমর্থনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন বলে উল্লেখ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।
রিপাবলিকান প্রার্থী লী জেলদিনের ঘোষিত নীতিমালা নিউইয়র্ক সিটিসহ সমগ্র স্টেটে ভোটারদের কাছ থেকে প্রশংসা লাভ করেছিল এবং নিউইয়র্ক সিটিতে বরং সমর্থন ছিল অনেক বেশি। প্রায় সমগ্র সিটি রিপাবলিকান প্রার্থী লী জেলদিনের দিকে ঝুঁকলেও ডেমোক্রেট প্রার্থী ক্যাথি হকুল গভর্নর নির্বাচনে পাস করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী ব্রুকলিনের চায়না টাউন থেকে কুইন্সের লিটল পাঞ্জাব পর্যন্ত সিটির যেখানেই এশিয়ান ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির বসবাস, সর্বত্র ভোটের প্যাটার্নে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।
গত বছরের গভর্নর নির্বাচনে ফ্লাশিং এলাকায় রিপাবলিকানদের সমর্থন বেড়েছে ২০ শতাংশ পয়েন্ট, জ্যাকসন হাইটসে ১০ শতাংশ পয়েন্ট, চায়নাটউনে ১০ শতাংশ এবং রিচমন্ড হিলে ২০ শতাংশ পয়েন্ট। এছাড়াও ইউএস সেনসাস ব্যুরো ও নিউইয়র্ক বোর্ড অফ ইলেকশনসের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি নিউইয়র্ক টাইমসের চার্ট অনুযাযী কুইন্স, ব্রঙ্কস, সানসেট পার্ক, ম্যানহাটান, বেনসনহার্স্ট ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে ডেমোক্রেট প্রার্থী সমর্থন হারিয়েছে এবং রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন বেড়েছে।
ব্রুকলিনের সানসেট পার্ক ও বেনসনহার্স্ট এর মতো চাইনিজ কমিউনিটির অধিক সংখ্যক সদস্যের বসবাস আছে এমন নেইবারহুডগুলোতে স্টেট গভর্নর পদে রিপাবলিকান প্রার্থীর প্রতি সমর্থন এতটাই বেশি ছিল যে ডেমোক্রেট নীতি নির্ধারকরা এ নিয়ে ভাবনার মধ্যে পড়েছেন যে তারা কীভাবে এশিয়ানদের আস্থা পুনরুদ্ধার করবেন। গত এক দশকের মধ্যে ডেমোক্রেটরা নিউইয়র্ক সিটির প্রভাবশালী এশিয়ান কমিউনিটির সমর্থন নিয়ে আর কখনো এত উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েনি। একইভাবে ম্যানহাটানের চায়নাটাউন এবং কুইন্সের চাইনিজ অধ্যুষিত রিচমন্ড হিলেও রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন বেড়েছে, যদিও এই এলাকার চাইনিজ কমিউনিটির ডেমোক্রেটদের প্রতি আস্থা অনেকটাই দৃঢ় বলে মনে করেন ডেমোক্রেট নীতি নির্ধরকরা।
নিউইয়র্ক টাইমস ২০টির অধিক কমিউনিটি সংগঠনের নেতা, শিক্ষাবিদ এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী এশিয়ান ইমিগ্রান্ট ও এশিয়ান আমেরিকানদের নিয়ে কাজ করেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, রিপাবলিকানদের সমর্থন বৃদ্ধি পাওয়ার ইস্যু নিয়ে। তারা শুধু স্টেট গভর্নর নির্বাচন নিয়ে কথা বলেননি, অন্যান্য পদে যারা সিটিতে প্রার্থী ছিলেন, তাদের নিয়েও কথা বলেছেন। নেতৃবৃন্দ বলেছেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশিয়ান নেইবারহুডগুলোতে রিপাবলিকান প্রার্থীদের উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তারা আরো বলেছেন যে ডেমোক্রেট নেতারা তাদেরকে উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখেন, অন্যদিকে রিপাবলিকানরা নেইবারহুডের বাসিন্দাদের সমস্যার ওপর আলোকপাত করেন এবং বিশেষ করে রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দ এশিয়ান বিরোধী সহিংসতা ও হামলার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করায় এশিয়ানরা রিপাবলিকানদের প্রতি তাদের সমর্থন ও সৌহার্দ্য প্রকাশ করেছেন।
ফ্লাশিং এর কোরিয়ান এন্ড চাইনিজ ইমিগ্রান্টদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করছে মিনকোন সেন্টার ফর কমিউনিটি অ্যাকশন। এ সংগঠনের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর জন পার্ক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, একটি কমিউনিটির রাজনৈতিক সমর্থন নির্ভর করে সেই কমিউনিটির প্রতি কোন রাজনৈতিক দল কী আচরণ করছে বহুলাশে তার উপর। আমাদের কমিউনিটি দীর্ঘদিন যাবত উভয় রাজনৈতিক দল কর্তৃক অবহেলিত হয়েছে। এখন রিপাবলিকানরা আমাদের প্রতি তাদের কল্যাণের দৃষ্টি ফেলতে শুরু করেছে এবং সেটি তাদের প্রতি সমর্থন দানের একটি বড় কারণ হতে পারে।” এবং এ কারণে ক্যাথি হকুল সামান্য ব্যবধানে রিপাবলিকান প্রার্থী লী জেদলদিনকে পরাজিত করেছেন। কিন্তু ডেমোক্রেটদের জন্য উদ্বেগের ব্যাপার হলো নিউইয়র্ক সিটির ৪,০০০ এর অধিক প্রিসিঙ্কটের মধ্যে মাত্র এক শতাংশ প্রিসিঙ্কট ছাড়া অবশিষ্ট সকল প্রিসিঙ্কটসে রিপাবলিকার ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য নিউইয়র্ক সিটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৪ শতাংশ এশিয়ান এবং যেসব ইমিগ্রান্ট কমিউনিটির মধ্যে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এশিয়ানরা তাদের অন্যতম।
Posted ৪:১৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh