বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
মহামারীকালে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত দিয়ে বিদেশিদের প্রবেশ ও অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি বিধি ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার সময়ও আরোপ করা হয়েছিল। ফলে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে গত তিন বছর বিদেশিদের অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
কিন্তু গত ১১ মে বৃহস্পতিবার টাইটেল ৪২ নামে আরোপিত সেই বিধির মেয়াদ অবসানের সঙ্গে সঙ্গে বন্যার তোড়ের মতো সীমান্ত ফটকগুলো দিয়ে ইমিগ্রান্টরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে গত এক বছর যাবত সীমান্ত অতিক্রম করে যেসব বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, টেক্সাস স্টেট সরকার তাদেরকে ইমিগ্রান্টদের জন্য স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি হিসেবে খ্যাত ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত সিটিগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছে এবং নিউইয়র্ক সিটিতে এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মেয়র এরিক অ্যাডামসের মতে গত বছরের মে মাস থেকে এ পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে ৬৫ হাজারের বেশি ইমিগ্রান্টকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, যাদেরকে টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর একতরফাভাবে নিউইয়র্কে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সীমান্তে এখন যে হারে ইমিগ্রান্ট প্রবেশ করছে, সেই ধাক্কা যে নিউইয়র্ক সিটিসহ সমগ্র স্টেটের ওপর প্রবলভাবে পড়তে তা আঁচ করেই স্টেট গভর্নর ক্যাথি সি হকুল স্টেটে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন। সেই সাথে যারা প্রবেশ করবে তাদের জন্য আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করার জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ নবাগত ইমিগ্রান্ট পরিবারগুলোর জন্য সিটির পাবলিক স্কুলের জিমনেশিয়ামগুলোতে আবাসন ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে। সিটি কর্তৃপক্ষ কনি আইল্যান্ডে পিএস ১৮৮ এর প্রিন্সিপালকে এ ব্যাপারে অবহিত করেছেন।
কিন্তু এ নিয়ে ইতোমধ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজনের পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। কনি আইল্যান্ডের বেনসনহার্ষ্ট, গ্রেভসেন্ড ও সী গেট এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন ব্রুকলিনের কাউন্সিলম্যান আরি কাগান, তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে তিনি অভিভাবক ও কমিউনিটি নেতাদের অনেক ফোনকল পেয়েছে এবং তাদের কেউই স্কুল অঙ্গনে এভাবে ইমিগ্রান্ট পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে সমর্থন দেয়নি।
ইমিগ্রান্টদের স্কুল জিমনেশিয়ামে আশ্রয়দানের বিষয়টি দেখভাল করছে সিটির অফিস অফ ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট। কাউন্সিলম্যান নিজেও স্কুলে ইমিগ্রান্ট বা শরণার্থীদের স্থান দেওয়ার পরিকল্পনার ব্যাপারে সন্তুষ্ট নন। তিনি স্বয়ং তার ট্ইুটার একাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন যে, ইমিগ্রান্টদের আবাসনের সংস্থান করার বিষয়টি একটি জাতীয় সমস্যা এবং কোনো জিমনেশিয়ামে কিছু ইমিগ্রান্টের আবাসনের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে এই সমস্যা লাঘব করা সম্ভব নয়। মেয়র এরিক অ্যাডামসের মুখপাত্র ফেবিয়ান লেভি বলেছেন, নিউইয়র্ক সিটি এক চরম মানবিক সঙ্কটের মাঝখানে অবস্থান করছে। আমরা কিছু জরুরী আশ্রয়কেন্দ্র চালু করতে যাচ্ছি, কিন্তু আমরা স্থান খুঁজে পাচ্ছি না। আরো কিছুসংখ্যক কেন্দ্র চালু করার উদ্দেশ্যে আমরা স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রেখে চলেছি।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিই যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সিটিগুলোর মধ্যে একমাত্র সিটি, যে সিটিতে ‘রাইট টু শেলটার’ বা আশ্রয়ের অধিকার সংক্রান্ত আইন রয়েছে, যে সুযোগ নিয়ে টেক্সাসের সরকার গত বছরের মে মাস থেকে সিটিতে অব্যাহতভাবে ইমিগ্রান্টদের পাঠিয়ে চলেছেন। তার ওপর মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে নেমে আসছে টাইটেল ৪২ এর অবসানে সীমান্তের ওপার থেকে বন্যার তোড়ের মতো আসা ইমিগ্রান্টদের ঢল। সিটি মেয়র পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ফেডারেল সহায়তা কামনা করলেও এখন পর্যন্ত ফেডারেল সরকার তার সহায়তায় এড়িয়ে আসেনি। আগামী বছর পর্যন্ত সিটিকে ইমিগ্রান্টদের জন্য ৪.৪৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হতে পারে, যার ৩৭ শতাংশ ফেডারেল তহবিল থেকে আসা উচিত বলে মনে করেন সিটি মেয়র। কিন্তু ফেডারেল সরকারের সহায়তা দ্রুত ছাড় না দেওয়া হলে সিটির অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাবে।
Posted ৩:০২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh