বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১
নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে কুইন্স বরো সিভিল কোর্ট বিচারক পদে এটর্নী সোমা সাঈদ এবং সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ এর কাউন্সিল মেম্বার পদে শাহানা হানিফ বেসরকারী ফলাফলে বিজয়ী হয়েছেন। গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত প্রাইমারীতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত উভয় প্রার্থী প্রাথমিক ফলাফলে এগিয়ে ছিলেন নিকটতম প্রার্থীদের চেয়ে। র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং পদ্ধতি এবং অ্যাবসেন্টি ভোট গণনার জন্য ঝুলে যায় ফলাফল। গত ২৯ জুন অনুষ্ঠিত পরবর্তী গণনার ফলাফলে সোমা সাঈদ ও শাহানা হানিফ বড় ধরণের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে জয়ী হন। গত ৬ জুলাই নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন উভয় প্রার্থীকে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। তবে চূড়ান্ত এবং সরকারী ফলাফলের জন্য আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। প্রাইমারীর চূড়ান্ত ফলাফলের পর আগামী ২ নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ন হতে হবে তাদেরকে।
শাহানা হানিফ
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ব্রুকলীনের ৩৯ ডিস্ট্রিক্ট থেকে গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শাহানা হানিফ তার নিকটতম প্রার্থীর চেয়ে ১০ শতাংশ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে শাহানা হানিফের অভাবনীয় এ বিজয় গোটা বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটির বিজয়। বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে শাহানা হানিফ হবেন প্রথম বাংলাদেশী আমেরিকান। প্রথম মুসলিম সাউথ এশিয়ান যিনি এই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয় ডিষ্ট্রিক্ট-৩৯ এ তিনিই হচ্ছেন প্রথম নারী কাউন্সিল মেম্বার। কেননা নিউইয়র্ক সিটিতে যিনিই ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জয়লাভ করেন পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে জয়ের মালা তার গলায়ই পড়ে। আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সিটির সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত বিজয় শাহানা হানিফই ছিনিয়ে আনবে।
ব্রুকলীনের ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ আসনটির বর্তমান কাউন্সিলম্যান ব্র্যাড ল্যান্ডারের মেয়াদ কাল উত্তীর্ণ হওয়ায় কম্পট্রোলার পদে নির্বাচন করেন তিনি। সাবেক ল্যান্ডার স্টকার প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট শাহানা হানিফ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটিক নেতা ও সংগঠনের সমর্থন পেয়েছেন প্রাইমারিতে। বিশেষ করে ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি, স্টেট সিনেটর জেসিকা র্যামোস ও সিটি কাউন্সিল মেম্বার হেলেন রোজেন থাল। নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস ওম্যান ওকাসি’র আর্শীবাদ ছিলো তার প্রতি। ব্রুকলীনের কিংস্টন এলাকায় বেড়ে উঠা বাংলাদেশী অভিবাসী পরিবারে জন্ম শাহানা হানিফের। তার পিতা মোহাম্মদ হানিফের পৈত্রিক নিবাস চট্টগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন তিনি। তার শিক্ষা জীবনের শুরু ব্রুকলীনের পিএস-২৩০ থেকে। এরপর ব্রুকলীন কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন শাহানা হানিফ। কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও সামাজিক সংগঠক শাহানা হানিফ পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে প্রতিদিন যুদ্ধ করে এসেছেন প্রতিবেশীদের অধিকার আদায়ের জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান কাউন্সিল মেম্বার ব্রাড ল্যান্ডার্সের অফিসে যোগ দিয়েছিলেন। ডাইরেক্টর অব অর্গানাইজিং এন্ড কমিউনিটি এনগেজমেন্ট হিসেবে। এসময় স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সাথে তার গড়ে উঠে নিবিড় সম্পর্ক। তিনি সার্বক্ষণিক তাদের সেবায় নিয়োজিত করেন নিজেকে।
সোমা সাঈদ
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স সিভিল কোর্টের বিচারক পদে গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে এগিয়ে ছিলেন বাংলাদেশী আমেরিকান এটর্নি সোমা সাঈদ। সিভিল কোর্টের বিচারক নির্বাচনে র্যাঙ্ক চয়েজ ভোট পদ্ধতির বালাই ছিলো না। তারপরও ফলাফল পেতে ২৯ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। চূড়ান্ত ফলাফলে এটর্নি সোমা বিজয়ী হলে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির বিচার বিভাগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রথম বিচারক। শুধু তাই নয় প্রথম মুসলিম নারী সাউথ এশিয়ান বিচারক হিসেবে তিনি পরিচিত হবেন। বিচারক নির্বাচিত হলে সোমা সাঈদ এই পদে নিয়োজিত থাকবেন আগামী ১০ বছর । আর এটা হবে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটির জন্য অনেক বড় পাওয়া।
উল্লেখ্য নিউইয়র্ক সিটির সিভিল কোর্টে মোট বিচারকের সংখ্যা ১২০ জন। তন্মধ্যে ৫০ জন সিভিল কোর্টে এবং বাকীরা অন্যান্য কোর্টে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। সিভিল কোর্টের বিচারকগণ সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণের মামলা পরিচালনা করতে পারেন। সিভিল কোর্টের বিচারক হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পূর্বে এটর্নি সোমা সাঈদ নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এর বিশেষ নির্বাচনে অংশ নেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক ভোট পান তিনি। এটর্নি সোমা সাঈদ কুইন্স কাউন্টি ওমেন’স বার এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনে তাকে সমর্থণ প্রদান করেছেন বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ। কমিউনিটির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে যার ফলে বিভিন্ন সময়ে জনগণের শিক্ষা, চাকুরী, ক্ষুদ্র ব্যবসা, গৃহায়ন প্রভৃতি মৌলিক অধিকার আদায়ে আলবেনীতে ছুটে যান তিনি । সোমা সাঈদ বারো বছর বয়সে আমেরিকা আসেন। বসবাস শুরু করেন কুইন্সে। এটর্নি সোমার পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামে। তার প্রয়াত পিতা আফতাব সাঈদ বাংলাদেশে ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রয়াত মাতা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। তার পিতা ছিলেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’র প্রথম সম্পাদক।
Posted ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh