বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৪০০ বিলিয়ন ডলার স্টুডেন্ট লোন মওকুফের যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তাদের দ্বিধা ব্যক্ত করেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে যে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে কোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে মামলার নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাইডেনের ঘোষিত লোন মওকুফ পরিকল্পনার কার্যকারিতা স্থগিত রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে কয়েক মিলিয়ন আমেরিকান শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনার সময় যে ঋণ গ্রহণ করেছিলেন তার মধ্য থেকে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত মওকুফ করার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত আগস্ট মাসে যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তা বাস্তবায়ন ব্যাহত হতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে মহামারীর কারণে বাইডেন প্রশাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঋণ মওকুফের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা এ সংক্রান্ত আইনে যথার্থ কিনা সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করতে চায়।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার নির্বাহী ক্ষমতাবলে স্টুডেন্ট লোন মওকুফের পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর রক্ষণশীলরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিষয়টি সুপ্রীম কোর্টে নেয় রিপাবলিকান স্টেটগুলো। কারণ রিপাবলিকান স্টেটগুলো প্রেসিডেন্টের উদ্যোগকে তার এখতিয়ারের অপব্যবহার বলে বর্ণনা করেছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার তিন ঘন্টা ধরে মৌখিক যুক্তিতর্ক চলে। কোর্টের রক্ষণশীল বিচারপতিরা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বার বার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন যে মহামারী জনিত পরিস্থিতির কারণে ছাত্রদের নেওয়া ফেডারেল ঋণ মওকুফ করার কোনো কর্তৃত্ব এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের আছে কিনা। তাদের মধ্যে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টও ছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলার ও ৪৩ মিলিয়ন আমেরিকানের কথা বলছি, কিন্তু এ ধরনের একটি আর্থিক পরিকল্পনা কংগ্রেসের অনুমোদন লাভ করবে তা আশা করা উচিত নয়।
সব মিলিয়ে, চারজন রক্ষণশীল বিচারপতি-জন রবার্টস, বিচারপতি আলিটো, ক্লারেন্স থমাস এবং নীল গরসুচকে ঋণ মওকুফ পরিকল্পনার পক্ষে প্রশাসন যে আইনি ভিত্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে তাতে অধিক সন্দেহ পোষণ করেছেন বলে মনে হয়েছে, যখন আদালতের তিন উদারপন্থীর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। কোর্টের অন্য দুই সদস্য – ব্রেট কাভানাফ এবং অ্যামি কোনি ব্যারেট তাদের মতামত দিতে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি। বিচারপতি কাভানাফ দুই দশক আগে পাস করা জরুরি পরিস্থিতিতে কংগ্রেসকে পাস কাটিয়ে ফেডারেল ঋণগ্রহীতাদের ৯৫ শতাংশকে মওকুফ করার একটি কর্মসূচি অনুসরণের অনুমতি দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি মনে করেন যে এ মওকুফ আমেরিকান ইতিহাসে নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানসাস থেকে ডিগ্রি লাভকারী জেসন ডোরেস্কি স্বেচ্ছায় তার ফেডারেল স্টুডেন্ট লোনের ১০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছিলেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে তা তার ব্যাংক একাউন্টে ফেরত পাঠায় এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট। তিনি ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এ লোন নিয়েছিলেন। মহামারী চলাকালে সরকার ঘোষণা দিয়েছিল যে যারা স্টুডেন্ট লোন নিয়েছিলেন, মহামারীর কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তারা তা পরিশোধ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে পারেন। কিন্তু জেসন তার লোনের অর্থ পরিশোধ করে আসছিলেন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনার ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পরিকল্পনায় বলা হয় যে স্টুডেন্ট লোক গ্রহণকারী অধিকাংশ ছাত্রের ২০,০০০ ডলার পর্যন্ত লোন মওকুফ করা হবে, যার মোট পরিমাণ প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার। প্রায় ২৬,০০০ ছাত্র এ পরিকল্পনার আওতায় আসে। কিন্তু আইনগত চ্যালেঞ্জের কারণে সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বন্ধ হয়ে যায়।
হোয়াইট হাউজের বক্তব্য হলো জাতীয় জরুরী অবস্থার প্রেক্ষিতে ‘হিরোস অ্যাক্ট’ (HEROES Act) নামে ২০০৩ সালের একটি আইন বলে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার অনুযায়ী ঘোষণার আলো এডুকেশন সেক্রেটারি এ ঘোষণা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে পারেন এবং এক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই। এডুকেশন সেক্রেটারি মিগুয়েল কারডোনা সর্বোচ্চ আদালতে প্রশাসনের ঘোষণার পক্ষে আইনগত বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো ৬টি রিপাবলিকান স্টেট তাদের বক্তব্যে এটিকে নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার বলে উল্লেখ করেছে। রিপাবলিকানদের অবস্থানের কারণে এখন স্টুডেন্ট লোন গ্রহণকারী লক্ষ লক্ষ আমেরিকান, যারা প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় স্বস্তি বোধ করছিলেন, তারা বেকায়দায় পড়েছেন। জেসন ডোরেস্কি বলেছেন, যারা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, তাদের কাছে ১০,০০০ ডলার খুব বড় কোনো অংক নয়, কিন্তু এটি যখন কারও সঞ্চয়ের বড় একটি অংশ, তখন তাদের কাছে বিরাট পরিমাণ অর্থ।
এই ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালে মঙ্গলবার কোর্টের বাইরে দুই ডজনের বেশি এডভোকেসি গ্রুপের সাথে জড়িত কয়েকশ’ সাবেক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল শ্রমিক সংগঠন, সিভিল রাইটস সংগঠন ও যুব সংগঠন, হিপ হপ ককাস ও ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ জুইশ ওম্যানের মতো সংগঠন। বাল্টিমোরের মরগ্যান স্টেট ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ছাত্র ও ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অফ কালারড পিপল এর ক্যাম্পাস চ্যাপ্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেসিরি ভেনে ভোরে এসেছে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি প্রেসিডেন্টের ঘোষণার মধ্যে বর্ণগত সুবিচার দেখতে পেয়েছিলেন, যা রিপাবলিকানরা অবরুদ্ধ করার চক্রান্তে লিপ্ত বলে তিনি মনে করছেন। তিনি জানান, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে তখন তার মাথার ওপর গড়ে ২৫,০০০ ডলারের ঋণ থাকে, যা শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু গড় ঋণের বোঝার চেয়ে অনেক বেশি। শিক্ষাজীবন শেষ করার পরও বহু বছর পর্যন্ত তাদেরকে এ ঋণের বোঝা টানতে হয়।
ভেনে’র মতে লোন গ্রহণকারী কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে এসেছে এবং আন্ডার গ্রাজুয়েট ক্লাসে তাদের প্রায় সকলকে এই লোন গ্রহণ করতে হয় এবং এই পর্যায় পার করতে পারলে তারা অনেকটা সহজে তাদের মাস্টার্স ও ডিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করার সুযোগ পায়। প্রেসিডেন্টের ঘোষিত পরিকল্পনা কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষাথীদের উচ্চ শিক্ষায় সহায়তা করা ছাড়াও বর্ণ বৈষম্যজনিত যে ব্যবধান আমেরিকান সমাজে বিদ্যমান, তা দূর করার ক্ষেত্রে বড় একটি পদক্ষেপ ছিল, যা তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা উন্নয়নের একটি সুযোগ সৃষ্টি হতো।
উল্লেখ্য, এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের হিসাব অনুযায়ী ফেডারেল স্টুডেন্ট লোনের পরিমাণ প্রায় ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলার এবং লোন গ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি। তারা মনে করে যে, এই লোনের অর্থ আদায়ে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে আছে এবং এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট লোন আদায়ে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার দায় নিয়ে আছে। সেক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে ঋণ মওকুফের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করাই সঙ্গত।
Posted ৭:৪৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh