নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টরের মাউন্টেইন ব্যাটালিয়ন কমাণ্ডার আবু জাফর মাহমুদ নতুন সঙ্গীত প্রতিভা গড়ে তোলার জন্য শিগগিরই উত্তর আমেরিকায় ক্ষুদে শিল্পী অন্বেষণের বিশেষ ইভেন্ট শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি প্রবাস জীবনে উদয়ান্ত পরিশ্রম করা মায়েদের সন্তানের প্রতি সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতা পালনের বিষয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, স্কুলের হোম ওয়ার্কের চাপে থাকা শিক্ষার্থীদেরকেও তারা বাংলা সঙ্গীত তথা সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অসাধারণ পারদর্শী করে তুলতে পারছেন। এটি দারুণ এক দৃষ্টান্ত। দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও দায়বদ্ধতা পালনেরই নজির। চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০২৩ এর উত্তর আমেরিকার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
ওই আয়োজনে জনাব আবু জাফর মাহমুদ প্রতিষ্ঠিত উত্তর আমেরিকার প্রথম ও পৃথিকৃৎ হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার ছিল গ্রাণ্ড স্পন্সর। চূড়ান্ত পর্বে বিচারক হিসেবে ছিলেন প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় ও কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান। অনুষ্ঠানে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড চ্যানেল আই এর পরিচালক জহিরউদ্দিন মাহমুদ মামুন, চ্যানেল আই ইউএসএর প্রধান রাশেদ আহাম্মেদসহ উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অংশগ্রহণকারী শিল্পী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন নিউইয়র্কে বসবাসরত বিশিষ্ট যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী ও সঙ্গীত অনুরাগীরা।
কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট ৪ এর কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেট আবু জাফর মাহমুদ ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিচারকদের কথা তুলে ধরে বলেন, এই সঙ্গীত বিশেষজ্ঞরা ছোটোবেলা থেকে অনুকুল নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পেরেছেন। তারা একটি পরিবেশ ও পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে আজকের এই জায়গায় এসেছেন, ওই পরিবেশেরই ফসল হচ্ছেন দেশের প্রসিদ্ধ শিল্পীরা। তারাই আমার বাংলাদেশের সঙ্গীত ও কৃষ্টি জগতের শক্তি। তাদের গুরুত্বের কথা আমাদের সবাইকেই ভাবতে হবে।
মানুষের জন্য আমার অনেক দায়িত্ব আছে। আমার নিজের প্রতি দায়িত্বের মতোই দেশের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি বড় দায়বদ্ধতা রয়েছে। অনেক গুণী মানুষের সাহচর্য ছাড়া এই দায়বদ্ধতা পালন করা বা পূরণ করা সম্ভব নয়। এই প্রবাসে যত প্রতিষ্ঠান সঙ্গীত চর্চাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, যতজন শিল্পী নিজেদের অন্য কাজের ফাঁকে মমত্ব দিয়ে সঙ্গীত চর্চা করছেন, তারা অনেক বড় কাজ করে চলেছেন। আজ চ্যানেল আই সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দেশের পাশাপাশি প্রবাসের সন্তানদের গড়ে তুলবার যে দায়িত্ব পালন করছে, এখানে আমাদেরও অনেক করনীয় রয়েছে।
আবু জাফর মাহমুদ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার কারণেই সরকারি সম্প্রচার কেন্দ্রের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক বড় বড় টেলিভিশন কেন্দ্র গড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। বিশেষ করে চ্যানেল আই সঙ্গীতসহ গোটা সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় যে অবদান রেখেছে তার জন্য বাংলাদেশি আমেরিকানদের পক্ষ থেকে অনেক বড় পুরস্কার তাদের প্রাপ্য। এ বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আমরা কাজ করবো। তিনি বলেন, সর্বক্ষেত্রে ব্যক্তিগত যোগ্যতায় আমরা বেড়ে উঠেছি। আমরা যারা আমেরিকায় অবস্থান করছি, সাহিত্য সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একটি একতার জায়গা গড়ে তোলা যায় কি-না সে বিষয়টি ভাবতে হবে।
সে জন্যে শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। যারা সংস্কৃতিকে লালন করেন, তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে যারা, আমাদের দেশের যেসব সংস্কৃতিসেবী, সঙ্গীতশিল্পীরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে জাতির সেবা করছেন, তাদের জন্য প্রবাস থেকে আমাদের করনীয় নির্ধারণ করতে হবে। বিষয়গুলো নিয়ে আগামী একুশেই আমরা ভাবতে চাই। কারণ, একুশ আমাদের চেতনার উৎস্য, এবকুশ আমাদের শেকড়, একুশ আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম সোপান। জাফর বলেন, আমরা আমাদের জাতীয়তা ও দেশের প্রশ্নে সবসময় মহান মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকেই বড় করে দেখি, তাই মহান মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান ‘জয় বাংলা’ আমাদের হৃদয়ে গাঁথা। আর রাষ্ট্র যেহেতু গড়েছি, তাই ‘জয় বাংলাদেশ’ শ্লোগানও আমাদের হৃদয়ে গাঁথতে হবে। গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই শ্লোগান আমরা শুরু করেছি। দেশের স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর থেকে এই শ্লোগান প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে, এই আশাও আমরা করছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত চ্যানেল আই এর পরিচালক জহিরউদ্দিন মাহমুদ মামুন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিসেবী আবু জাফর মাহমুদের যে কোনো সাংস্কৃতিক উদ্যোগের সঙ্গে চ্যানেল আই এর সম্পৃক্ততার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠান শেষে চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ উত্তর আমেরিকার চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। যে পাঁচজন বিজয়ী হয়ে মূল পর্বে অংশ নিতে বাংলাদেশে যাচ্ছেন তারা হলেন—নিউইয়র্কের কানিজ দীপ্তি (চ্যাম্পিয়ন), জর্জিয়ার শান্তা মাইশা, ভার্জিনিয়ার মাহাদিয়া ঈশাল ও অপ্সরা বণিক এবং কানাডার টরন্টোর বিপ্লব কর্মকার। বিজয়ী পাঁচজনের হাতে পুরস্কার হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আবু জাফর মাহমুদ।
Posted ৪:১৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh