বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশী আমেরিকান ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটস। দীর্ঘ তিন দশক ধরে ব্যবসায়িক প্রসারের মাধ্যমে বাংলাদেশীরা এখন একটি সংহত অবস্থানে পৌছেছে। যার স্বীকৃতি মিললো জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটকে “বাংলাদেশ স্ট্রিট” নামকরণের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে গত ২৬ মার্চ অপরাহ্নে নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের পক্ষে স্থানীয় কাউন্সিল মেম্বার শেখর কৃষ্ণান আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামকরণের ঘোষণা দেন। পরে তিনি নামফলকটির মোড়ক উন্মোচন করেন। এসময় জ্যাকসন হাইটস এলাকার স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে গোটা এলাকায় সৃষ্টি হয় ভিন্নতর আমেজ ও আবহের । জয়বাংলা,বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে ৭৩ স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকা। এসময় জয় বাংলাদেশ, জয় আমেরিকা স্লোগান দিতে দিতে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ।
বাংলাদেশ স্ট্রীট নামকরণের নেপথ্যে কারা অবদান রেখেছেন এ নিয়ে একধরণের প্রতিযোগিতা ও মতভেদ বিরাজ করছিলো স্থানীয় বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মাঝে। ফলে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন-জেবিবিএ’র সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের কাউকেই কোন রকম বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেননি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান। পূর্ব পরিকল্পিত অনুষ্ঠান সূচী ছাড়াই পুরো অনুষ্ঠান দক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন তিনি।
শ্রমিক সংগঠনের সাথে জড়িত বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমোক্র্যাট মিলন রহমানের পরিচালনায় শেখর কৃষ্ণান তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পূর্বে নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশী অভিবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটস এলাকার ৭৩ স্ট্রিটে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সাফল্যের প্রশংসা করেন। তার পাশে দাঁড়ানো নেতৃবৃন্দ অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশ স্ট্রিট নামকরণের বিষয়টিকে বাংলাদেশিদের সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করে শেখর কৃষ্ণান বলেন, এই স্ট্রিটের নামকরণ বাংলাদেশ স্ট্রিট করতে পেরে আমরা ভীষণ খুশি। বাংলাদেশি কমিউনিটির এখানে বিশেষ অবদান রয়েছে। তারা ধারাবাহিকভাবে অবদান রেখে চলেছেন। ৭৩ স্ট্রিট হচ্ছে বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র। এখানে অনেক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশিরা আসেন। তাদের কমিউনিটিতে অনেক অবদান রয়েছে। তাদের জন্য এটি করতে পেরে আমি আনন্দিত।শেখর কৃষ্ণান কাজটি সফল করার জন্য তার অফিসের সকল স্টাফের নাম উল্লেখ করেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাসেম্বলিওমেন ক্যাটলিনা ক্রুজ, কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং, নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাসেম্বলিওমেন জেসিকা গঞ্জালেস, সিটি কাউন্সিলম্যান স্টিভেন রাগা, মাইকেল জিয়ানারিস প্রমুখ। তারা সবাই বাংলাদেশিদের সাফল্য বর্ণনা করে তাদের অবদান বিশেষভাবে স্মরণ করে। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশিরা কমিউনিটি বিনির্মাণে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। আজ বাংলাদেশ স্ট্রিটের উদ্বোধন করতে পেরে আমরা ভীষণ আনন্দিত।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের ৫৩তম স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ স্ট্রিটের উদ্বোধন করতে পেরে আমরা খুশি। তারা সবাই আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশি কমিউনিটি আরো এগিয়ে যাবে এবং এ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। বাংলাদেশ স্ট্রিটের নামফলক উম্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং, অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজ, স্টিভেন রাঘাব, কাউন্সিল মেম্বার জেসিকা গঞ্জালেজ-রোজাস, অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা, কাউন্সিল মেম্বার লিন্ডা লি, জেবিবিএ’র বর্তমান সভাপতি হারুন ভুঁইয়া ও সাধারন সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান, অপর জেবিবিএ’র সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সাধারন সম্পাদক তারেক হাসান খান,এটর্নি মঈন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ-সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলম্যানদের সাধারন সভায় ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ নিলে পরে ৪৭-০ ভোটে তা পাশ হয়। সেই থেকে জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ এভিনিউয়ের ৭৩ স্ট্রিটের নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’। বিলটির সিদ্ধান্ত নম্বর হলো- আইএনটি ৮৯৭। কিন্তু শেখর কৃষ্ণানের আন্তরিকতায় এবং জ্যাকসন হাইটসের নেতৃবৃন্দের দাবিতে ও সহায়তায় প্রায় ৬ মাসের প্রস্তুতিতে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামকরণের সিদ্ধান্তটি পাশ করা হয়। জানা যায়, বৃহস্পতিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সিটির ১২৯টি স্ট্রিটের পুণঃনামকরণের বিলটি সভায় আলোচনায় আসে। উল্লেখ্য, কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের পার্ক কমিটির চেয়ার প্রধান। আর স্ট্রিটের পুণঃনামকরণ করার দায়িত্বটিও পার্ক কমিটির। এর জন্য কেন ৭৩ স্ট্রিটের নাম ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ করতে হবে তার পক্ষে যুক্তি দাঁড় করান। অবশেষে পার্ক কমিটি তার প্রস্তাবনা মেনে নেয় এবং শুনানিতে তোলে। ৩১ জানুয়ারি শুনানিতে তা গৃহীত হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি তা ফুল কাউন্সিলে ৪৭-০ ভোটে পাশ হয়।
উদ্বোধনের পর জেবিবিএর নেতৃবৃন্দ এবং কমিউনিটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা বক্তব্য দেন। বক্তারা শেখর কৃষ্ণানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশ স্ট্রিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সম্মান আরও বাড়ল। এখন বিশ্বের যে দেশ থেকেই মানুষ এখানে আসবে, তারা বাংলাদেশ স্ট্রিটকে দেখতে পাবে এবং বাংলাদেশের নাম সবাই জানবে। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আরো আকর্ষণীয় ও মর্যাদাপূর্ণ হতে পারতো। বাংলাদেশ স্ট্রিট নামকরণে নিজেদের অবদান নিয়ে এক ধরণের ঠাণ্ডা লড়াই চলছিলো। কারো একক অবদানের প্রসঙ্গ উঠলে আরো জটিল হয়ে যায়। বিষয়টি কাউন্সিলম্যান শেখরের কানে পৌঁছলে তিনি একাই সব কিছু করেন।
Posted ২:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh