বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
নিউইয়র্কের প্রতি চারজনের বাসিন্দা মহামারি কোভিডে অন্তত একজন প্রিয় মানুষকে হারিয়েছে। অশ্বেতাঙ্গ মানুষের মধ্যে প্রিয়জন হারানো এ হার আরো বেশি বলে জানা গেছে নতুন এক জরিপে। ২০০০ সালের মার্চ মাসে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা যখন খুব বেশি তখন ৯৬ বছর বয়স্ক জোসেফা সানতানা তার ওয়াশিংটন হাইটসের অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে বাইরে যাননি।
কিন্তু কশাইয়ের দোকানের কর্মী তার পুত্রকে ওই ভয়াবহ দিনগুলোতে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হতে হয়েছে তার জীবিকার স্বার্থে এবং সম্ভবত তিনিই অ্যাপার্টমেন্টে করোনা ভাইরাস নিয়ে আসেন। জোসেফা সানতানা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরিবারের প্রাণপন চেষ্টা সত্বেও তিনি মারা যান। তার আরো এক আপনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তার নাতনি লিম্যারি ফ্রান্সিসকো, তিনি মারা যান মহামারি শুরুরর প্রথম বছরেই।
নিউইয়র্ক টাইমসের করোনা বিষয়ক নতুন জরিপ অনুযায়ী নিউইয়র্কে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক দিনগুলো ভয়াবহ ছিল। প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি ব্যক্তি, বিশেষ করে যেসব পরিবারের সদস্যদের তখনো বাইরে যেতে হচ্ছিল, তারা যে সম্ভাব্য ভাইরাস বাহক নন, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব ছিল না।
টাইমসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ২০ লাখ নিউইয়র্কারের প্রতি চারজনের মধ্যে অন্তত একজন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথম ১৬ মাসের মধ্যে তাদের একজন আপন মানুষকে হারিয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির পক্ষে ফেডারেল সেন্সাস কর্মীরা ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক টাইমস এ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।
সেন্সাস কর্মীদের আহরিত তথ্য অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির প্রায় ৯ লাখ মানুষ তাদের তিন আপনজন হারিয়েছে, যার মধ্যে আত্মীয় ও বন্ধুরা রয়েছে। ফ্রান্সিসকো (৩৬) তার দাদি জোসেফা সানতানাকে হারানোর দুই মাসের মধ্যে এক চাচাকে হারান। এছাড়া তিনি তার এক খালাকেও হারান। কিন্তু দাদিকে হারানোর ব্যথা তিনি আজ অবধি ভুলতে পারেন না, যিনি তাকে লালন পালন করে বড়ো করেছেন। তিনি প্রতি রোববার গোরস্থানে গিয়ে দাদির কবরের পাশে বসে থাকেন, তার মনে হয়, তিনি তার সঙ্গে কথা বলছেন।
নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং এন্ড ভ্যাকেন্সি সার্ভের রিপোর্ট থেকেও সিটিতে মহামারির ভয়াবহতার চিত্র পাওয়া যায়। সাত হাজারের বেশি অ্যাপার্টমেন্টে পরিচালিত জরিপের ফলাফল অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে শ্বেতাঙ্গ নিউইয়র্কারদের চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিক নিউইয়র্কাররা অধিক সংখ্যায় মারা গেছে। এর কারণ অশ্বেতাঙ্গদের মধ্যে দারিদ্রের উচ্চ হার এবং উন্নত চিকিৎসা লাভে তাদের সুযোগ সুবিধার ঘাটতি।
কিন্তু অশ্বেতাঙ্গদের ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হতে পারে যে, নিউইয়র্ক সিটিতে ১১ সপ্তাহের প্রাথমিক পর্যায়ের শাটডাউনের সময়েও তাদের সিংহভাগকে অত্যাবশ্যকীয় কর্মীর অংশ হিসেবে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে, যখন সকল স্কুল ও অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছিল এবং লোকজনকে বাড়িতে অবস্থান করতে এবং যারা হাইটেক জবে নিয়োজিত, তাদের বাড়ি থেকে অনলাইনে কাজ করতে বলা হয়েছিল।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় যে নিউইয়র্ক সিটির ৮৪ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ১১ লাখ অধিবাসী ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত তাদের কর্মস্থলে গেছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ বা ৭২ শতাংশই অশ্বেতাঙ্গ। সিটির সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ছিল ব্রুকলিনের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা, ব্রঙ্কস, আপার ম্যানহাটান ও কুইন্সের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা এবং এই এলাকাগুলোলোতে অত্যাবশ্যকীয় কর্মীর সংখ্যা অধিক। লোকজন কাজে গেছেন, খাবার ডেলিভারি দিয়েছেন। রেস্টুরেন্টে কাজ করেছেন, শিশুসেবা ও পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত থেকেছেন অথবা স্বাস্থ্যসেবা ও গণপরিবহনে নিয়োজিত ছিলেন।
এই শ্রেনির লোকজন এবং যারা নিম্ন আয়ের লোক, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। এছাড়া এক চতুর্থাংশ নিউইয়র্কার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অন্তত একজন প্রিয়জনকে হারিয়েছে।
একগারো শতাংশ নিউইয়র্কার কোভিডে হারিয়েছে অন্তত ৩ জন আপন জনকে এবং ষোলো শতাংশ নিম্ন আয়ের নিউইয়র্কার হারিয়েছে আরো বেশি সংখ্যক প্রিয়জনকে। ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩৩ হাজার নিউইয়র্কার মারা গেছে এবং এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছে আরো প্রায় ৬ হাজার নিউইয়র্কার।
Posted ৪:২৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh