বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সিটিগুলোকে বিদ্যমান চরম ইমিগ্রেশন স্কংট থেকে রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান ইমিগ্রান্ট সঙ্কটের কারণে প্রতিবছর আমেরিকান করদাতাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের মতামত বিভাগে এক লেখায় ব্লুমবার্গ প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনকে অভিযুক্ত করেছেন যে, যেসব সিটিতে ইমিগ্রান্টরা প্রবেশ করার ফলে আবাসন সমস্যাসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, যে সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট সিটিগুলোর বাসিন্দাদের সৃষ্ট নয়।
মাইকেল ব্লুমবার্গ ২০২০ সালে বাইডেনের পাশাপাশি ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রাইমারিতে প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাইডেনের পক্ষে প্রাইমারি থেকে সরে দাঁড়ান। এখন তিনি ইমিগ্রেশন প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের গৃহীত নীতির কঠোর সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি অবৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে আগত ইমিগ্রান্টদের এসাইলাম আবেদন করার পর দীর্ঘ সময় না নিয়ে অবিলম্বে তাদের ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী ফেডারেল আইনের সমালোচনা করে, অবিলম্বে এ ব্যাপারে উপায় বের করার জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, এসাইলাম আবেদনকারীরা যদি অবিলম্বে কাজ শুরু করতে পারে, তাহলে তারা নিজেরাই নিজেদের আবাসনসহ সকল ব্যয় নির্বাহ করতে পারবে এবং সিটিগুলোর আর্থিক ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করার পরিবর্তে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
সাবেক মেয়র ব্লুমবার্গ ইমিগ্রেশন ইস্যুতে দ্বিতীয়বারের মতো বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করলেন। গত সপ্তাহে সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস এক টাউন হল সমাবেশে বক্তব্য দানকালে নিউইয়র্ক সিটিতে বন্যার তোড়ের মতো আগত ইমিগ্রান্টরা নিউইয়র্ক সিটিকে ধ্বংস করে দেবে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। দক্ষিণ সীমান্তে ইমিগ্রেশন সংকট মোকাবিলা করতে ব্যর্থতার জন্যও তিনি প্রেসিডেন্টের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেছেন যে, ‘আবেদন করার পর একজন ওয়ার্ক পারমিট পেতে একজন ইমিগ্রান্টের এক বছর বা এর চেয়েও বেশি সময় লেগে যায়।
এ অবস্থায় এই একটি বছর এসাইলাম আবেদনকারীরা কীভাবে তাদের বাড়িভাড়া পরিশোধ করবে, অথবা নিজেদের ও সন্তানদের আহার সংগ্রহ করবে? উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও কঠোর অবস্থা সহ্য করে দীর্ঘ ক্লান্তিকর পরিভ্রমণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে আগমণকারীরা চরম দারিদ্রের মধ্যে জীবন কাটাবে তা কারো কাক্সিক্ষত হতে পারে না। সেজন্য তাদের জন্য দ্রুততার সঙ্গে এমন সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে এবং সিটি, স্টেট ও ফেডারেল সরকারের বোঝা হয়ে না উঠে।
ব্লুমবার্গ আরো বলেছেন যে, ১৯৮১ সালে প্রণীত একটি আইন নিউইয়র্ক সিটিতে এসাইলাম আবেদনকারীদের আবাসন সংস্থানকে জটিল করে তুলেছে। কারণ ওই আইনে হোমলেস মানুষের আবাসনের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে নিউইয়র্ক স্টেটের ওপর। কিন্তু ওই আইনে নজীরবিহীন সংখ্যায় আগত উদ্বাস্তুদের আবাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি, তবুও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে সিটি ও স্টেট সেই আইন প্রয়োগ করে ইমিগ্রান্টদের আশ্রয় দিয়ে চলেছে। কিন্তু ফেডারেল সরকার এ পরিস্থিতিতে সহযোগিতার হাত বাড়ি না দিলে বড় বড় সিটির আর্থিক সামর্থ অচিরেই ফুরিয়ে যাবে এবং ইমিগ্রান্টদের মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাতে হবে। নিউইয়র্ক সিটি ছাড়াও ইমিগ্রান্ট সংকটে জটিল আর্থিক অবস্থার মধ্যে পতিত অন্যান্য সিটিগুলো হচ্ছে শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, ডেনভার। এর বাইরেও আরো সিটি রয়েছে যারা নবাগত ইমিগ্রান্ট নিয়ে অভিন্ন সমস্যার মোকাবেলা করছে। ফেডারেল সরকার অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে এসব ইমিগ্রান্ট বৈধভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারে।
তিনি লিখেছেন: ‘ভিষয়টি একবার ভাবুন, আমাদের একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যার আওতায় অসংখ্য লোককে অনিবার্যভাবে আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাদের কাজ করার অদিকার দেওয়া হয় না, বিনা ভাড়ায় আবাসনের সুযোগ প্রদান করা হয় এবং তারা বৈধভাবে এদেশে অবস্থান করতে পারবে কিনা, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত ঘোষণা আগে তাদেরকে অন্তত সাত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়।
এর চেয়ে অধিক পশ্চাদপদ ও আত্ম-পরাজয়মূলক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা অত্যন্ত কঠিন হবে।” তিনি বলেন, “এ সংকট নিরসন করা খুব সহজ নয়, বিশেষ করে যেখানে কংগ্রেস বিভাজিত। কিন্তু এ সংকটকে অগ্রাহ্য করা হলে পরিস্থিতি শুধু শোচনীয় হবে তা নয়, এর ফলে উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর রাজনৈতিক নক্ষত্র উজ্জ্বল হলেও ইমিগ্রেশন সংস্কারের ওপর থেকে জনসমর্থন উঠে যাবে।’
Posted ৩:০৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh