নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
অভিবাসীদের কারণে নিউ ইয়র্ক শহর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শহরটির মেয়র এরিক অ্যাডামস। তিনি দাবি করেন, নিউইয়র্ক সিটি দক্ষিণ সীমান্ত থেকে এক লাখ ১০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আগমণের কারণে ‘ধ্বংসের’ মুখে আছে এবং হয়ে যাচ্ছিল এবং তিনি এই সমস্যার কোনো সমাধান দেখতে পাচ্ছেন না। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়, ম্যানহাটানে টাউন হলের সভায় এই উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন মেয়র এরিক।
তিনি ডেমোক্রেট দলের সদস্য এবং দুই বছর ধরে তিনি তার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি দাবি করেন যে, অভিবাসীদের কারণে নিউ ইয়র্ক ১২ বিলিয়ন ডলার বাজেট ঘাটতিতে রয়েছে। এর আগেও এ বছরের শুরুতে তিনি বলেছিলেন যে, তার শহর যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহর এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব অভিবাসী পাঠানো হচ্ছে তাদের জন্য এখানে কোনো জায়গা নেই।
বুধবার ওই সভায় এরিক বলেন, আমি আমার পুরো জীবনেও এমন কোনো সমস্যা দেখিনি যার সমাধান করা যায়নি। কিন্তু নিউ ইয়র্ক যে অভিবাসী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার কোনো শেষ আমি দেখতে পাচ্ছি না। এটি নিউ ইয়র্ককে ধ্বংস করে দেবে। অ্যাডামসের মতে, নিউ ইয়র্ক প্রতি মাসে ১০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী গ্রহণ করছে। পূর্ববর্তী বছরগুলিতে বেশিরভাগ নবাগতরা মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এসেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিম আফ্রিকা থেকেও অভিবাসীরা আসছেন। যদিও মেয়র এরিক অ্যাডামস একজন ডেমোক্র্যাট। তারপরেও তিনি বাইডেন প্রশাসনের অভিবাসন নিয়ে উদার নীতির সমালোচনা করেন। গত জানুয়ারিতে তিনি বলেছিলেন, এই সংকট সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সেরা সময়। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত রাজ্য যেমন টেক্সাস ও ফ্লোরিডা থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিউ ইয়র্ক সিটিতে পাঠানো হয়। এটি নিউইয়র্ক সিটিতে গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসন সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আবাসন সংকটে মেয়র অ্যাডামসের হুশিয়ারি : নিউইয়র্ক সিটিতে নবাগত ইমিগ্রান্টদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলায় তাদের জন্য যে আবাসন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন যে, পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, আগামী দিনগুলোতে ইমিগ্রান্ট নারী ও শিশুদের তাবুতে রাত কাটাতে হতে পারে। ইমিগ্রান্ট সমস্যা মোকাবিলায় সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বাজেট কাটঁছাঁট করার কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, পর্যাপ্ত সম্পদ ছাড়া পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। এখন পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে, নারী ও শিশুদের সমবেতভাবে তাবুতে রাত কাটাতে হতে পারে। আমি জানি, এটা গ্রহণযোগ্য নয়, আমাদের সিটিও তা করতে চায় না।
গত বছরের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত টেক্সাস সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশ করা এক লাখ দশ হাজারের অধিক ইমিগ্রান্ট নিউইয়র্কে পৌছেছে। টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর তার একতরফা সিদ্ধান্তে স্টেট সরকারের খরচে বাস ভাড়া করে ইমিগ্রান্টদের স্যাঙ্কচ্যুয়ারি সিটি খ্যাত নিউইয়র্ক সহ অন্যান্য ডেমোক্রেটিক সিটিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আগত ইমিগ্রান্টদের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজারকে নিউইয়র্ক সিটির শেল্টার সেন্টার এবং আরো দুইশতের অধিক টেম্পোরারি শেল্টারে রাখা হয়েছে, যা সিটির জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে এবং ইতোমধ্যে সিটির আর্থিক সামর্থ্রে বাইরে চলে গেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে নতুন স্কুল বর্ষ শুরু হওয়ার পর নবাগত ইমিগ্রান্টদের ২০ হাজার সন্তান সিটির স্কুলগুলোতে যোগ দিয়েছে বা যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এর আগে গত বুধবার টাউন হল সমাবেশে মেয়র অ্যাডামস সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন যে, ইমিগ্রান্ট সঙ্কট নিউইয়র্ক সিটিকে ধ্বংস করে দেবে।
এ প্রসঙ্গে মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, আমার জীবনে আমি কখনো দেখিনি যে, একটি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং তা সমাধান হয়নি। কিন্তু বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটিতে যে ইমিগ্রান্ট সংকট দেখা দিয়েছে তা শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
তিনি এ সঙ্কট সৃষ্টির জন্য টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোটকে দায়ি করে বলেন, ফেডারেল সরকারের উচিত ছিল সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারী ইমিগ্রান্টদের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণের ব্যবস্থা করা যাতে তারা কোনো একটি সিটির জন্য বোঝা হয়ে না উঠে।
নিউইয়র্কের ডেমোক্রেট কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়া কর্টেজ তার এক টুইট বার্তায় বলেছেন যে, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি হ্রাস করা, বড় বড় ব্যবসাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা, বাড়িভাড়া মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাওয়া, স্কুলে বাজেট কর্তন এবং সামরিকীকরণে ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পর ইমিগ্রান্টদের দোষারূপ করার নাম নেতৃত্ব দান করা নয়। কংগ্রেসওম্যানের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, এখন প্রয়োজন জাতীয় নেতৃত্বকে এগিয়ে আসা। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কংগ্রেসওম্যান নিজে এসে পরিস্থিতি অবলোকন করবেন। আমরা যদি পরিস্থিতি এখনই মোকাবিলা না করতে পারি তাহলে এ সঙ্কট অবশ্যম্ভাবীকে সিটিকে ধ্বংস করে দেবে।
Posted ৩:২২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh