ঢাকা | মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪
‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবাদের মর্মার্থ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দেশের মানুষ। যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ২২ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি রাজধানীতে। গতকাল সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ১২ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এবারের শীতে রাজধানীর তাপমাত্রা এটাই সর্বনিম্ন। আর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুর ও নওগাঁর বদলগাছীতে; ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টেকনাফে ছিল সর্বোচ্চ, ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যান চলাচল বিঘিœত হওয়ার খবরও মিলছে প্রায় প্রতিদিনই। ঠা-ার (জাড়ে) দাপটে শীতজনিত অসুখ-বিসুখে ভুগছেন শিশু ও বয়স্করা। ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, এমন আবহাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি কমে শীত আরও বাড়তে পারে।
তীব্র শীত ও কিছু জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে সারাদেশে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে সকাল ১০টায়। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই নির্দেশনা বহাল থাকবে। এ ছাড়া যেসব জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশনাও বহাল থাকবে। তীব্র শীত ও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল ছিল।
গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা ও সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। কোথাও কোথাও কুয়াশা থাকতে পারে দুপুর পর্যন্ত। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমে রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
শীতের মধ্যেই বুধবার বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২৪ জানুয়ারি বুধবার ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল সকালে তীব্র শীতে বিড়ম্বনায় পড়েন রাজধানীর খেটে খাওয়া মানুষ। সকালে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী ও অফিসগামীরাও। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল অনেক কম।
একটি নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়।
চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে দেশে একটি-দুটি মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এর আগে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নামে দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সে বছর সারাদেশে দফায় দফায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহও দেখা দেয়।
এ বছর শীতের তীব্রতার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘খাতা-কলমে তাপমাত্রা খুব একটা না কমলেও বেশ কিছু কারণে এবার শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- এবার কুয়াশা তৈরির প্রবণতা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে তিন থেকে চার ঘণ্টায়। আর এই দীর্ঘ সময়ের কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণকাল কমে এসেছে। অর্থাৎ সূর্য বেশিক্ষণ আলো দিতে পারছে না। এতে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় দিনের ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শীতও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
আবুল কালাম মল্লিক আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশজুড়ে উচ্চচাপ বলয় তথা বাতাসের চাপ বেশি থাকার কারণে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শীতের ঠা-া বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, এ বছর দিনের তাপমাত্রা দুই থেকে সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে দেখা গেছে। বিশেষ করে জানুয়ারির শুরু থেকে এটি বেশ কমে এসেছে। মূলত কোনো অঞ্চলের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। আর পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে, তাহলে সেখানে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। এ বছর চলতি মাসে বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম।
তীব্র শীতে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দৈনিক আমাদের সময়ের আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নওগাঁয় সর্বনিম্ন : বদলগাছীতে গতকাল সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কয়েক দিন ধরেই শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এমন তাপমাত্রা আরও দু-এক দিন থাকতে পারে।
কুড়িগ্রামে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ : গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, মেঘের কারণে কুয়াশা ও শীতের মাত্রা বাড়বে।
স্কুল বন্ধ : শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে গতকাল নাটোরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। জেলার লালপুরে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হওয়ায় সিরাজগঞ্জের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। তাপমাত্রা কমে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসায় লালমনিরহাটের প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গতকাল ও আজ মঙ্গলবার দুদিনের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। জেলায় গতকাল সবনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাদারীপুরেও গতকাল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টাঙ্গাইলে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে আজ মঙ্গলবার জেলার সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। যশোর জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে আজ যশোরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
ফুলবাড়ীতে স্কুল খোলা : উত্তরের সীমন্তবর্তী জেলা দিনাজপুরে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে হলে স্কুল বন্ধ থাকার কথা থাকলেও ফুলবাড়ীর মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলো ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। যদিও প্রাথমিক স্কুলগুলো দুদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় দিনাজপুর জেলায়। এ অবস্থা আরও দু-একদিন চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সকাল ৬টা এবং ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আমরা দেরিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তাই এখনো স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
Posted ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh