বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুল ও স্টেট অ্যাসেম্বলি স্পিকার কার্ল হিয়াস্টি হোমকেয়ার ব্যবসায় প্রতারণা ঠেকাতে সাঁড়াশি অভিযানের প্রস্তাব করেছেন গত সপ্তাহে। এ নিয়ে হোম কেয়ার সার্ভিসের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্টেটের অনেক আইন প্রণেতা ব্যক্ত করেছেন তীব্র প্রতিক্রিয়া। হোম কেয়ার সার্ভিস বিশেষ করে সিডিপ্যাপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এধরণের একটি জোর গুজব চাউড় আছে বাজারে। সাধারণ হোমকেয়ার গ্রহীতাদের মধ্যে এ নিয়ে বিরাজ করছে শঙ্কা। সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’র এ সপ্তাহের প্রতিবেদনহোম কেয়ার সার্ভিস নিয়ে।
নিউইয়র্ক স্টেটের নিম্ন আয়ের বয়স্ক মানুষের জীবন ধারা পাল্টে দিয়েছে হোম কেয়ার সার্ভিস। বাংলাদেশী সহ বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রহণ করছেন হোম কেয়ার’র মূল আকর্ষন সিডিপ্যাপ সেবা। বয়স্ক নারী-পুরুষ যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ, নিজের কাজ নিজে করতে অক্ষম এবং অল্প বয়সী অথচ কর্মক্ষম তারাও এই সেবা পাওয়ার যোগ্য। এজন্য তাদেরকে হাসপাতাল বা নার্সিং হোমে থাকার প্রয়োজন নেই। নিজ ঘরে বসেই পরিবারের সদস্য কিংবা প্রতিবেশির মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করে থাকেন তারা। সেবা প্রদানের বিনিময়ে প্রতি ঘন্টায় পারিশ্রমিক পান সেবা প্রদানকারীগণ। ফলে হোম কেয়ার সেবার আওতায়ধীন পরিবারগুলো মুখ দেখছে স্বচ্ছলতার। পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবন জীবিকা। অপর দিকে পরিবারে বাড়ছে বয়স্ক মা-বাবা শ্বশুর-শাশুড়ীর কদর।
অতীতে নিউইয়র্কে বিশেষ একটি সম্প্রদায় নিউইয়র্ক একক সুবিধা ভোগ করতো স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্টের এসব প্রকল্পের। ২০১৬ সাল থেকে অনেক বাংলাদেশী হোমকেয়ার লাইসেন্স নিয়ে নিজ কমিউনিটিতে সেবাদান করে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছেন। নিউইয়র্ক স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্ট পরিচালিত হোমকেয়ার সার্ভিস অর্থায়ন করে থাকে স্টেটের মেডিকেইড তহবিল থেকে। বর্তমানে নিউইয়র্ক স্টেটে ছোট-বড় প্রায় ৭০০ এফ আই বা ফিস্কাল ইন্টারমেডিয়েটরি রয়েছে। হেলথ ডিপার্টমেন্টের লাইসেন্সের আওতায় তারা সিডিপ্যাপ ছাড়াও হোমকেয়ারের অন্যান্য সেবা প্রদান করে আসছে গ্রাহকদের।
হোম কেয়ার সেবায় মেডিকেইড বা স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্টের সরাসরি কোন নজরদারি না থাকায় বিভিন্ন সময় এক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রতারণার অভিযোগ উঠে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর অফিস থেকে। এ নিয়ে স্টেট সরকার হোম কেয়ারগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য নিবন্ধনের মাধ্যমে ৬০টি হোমকেয়ার কোম্পানীকে লীড ফিস্কাল ইন্টারমেডিয়েটর নিয়োগ করে। পরবর্তীতে আরো ৭০টি লীড এফ আই করে মোট ১৩০টিতে উন্নীত করা হয় এই সংখ্যা। বড় ধরণের ৪৩০টি হোম কেয়ার বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে ১৩০টি লীড এফআইয়ের মাধ্যমে।
কিন্তু তাতেও হোমকেয়ার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মেডিকেইডের অর্থ প্রতারণা বন্ধ হয়নি। কয়েকমাস পূর্বে গভর্নর ক্যাথি হুকুল এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং কিভাবে এই প্রতারণা বন্ধ করা যায় সেই পথ খুঁজতে থাকেন। চলতি সপ্তাহে গভর্নর ক্যাথি হকুল আগামী অর্থ বছরের জন্য ২৩৭ বিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেন।
এর আগে গভর্নর নিউইয়র্ক স্টেট এ্যাসেম্বলী ও সিনেটের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেন বাজেটের বিভিন্ন খাতে অপচয় রোধের সম্ভাব্য পন্থা নিয়ে। এ পর্যায়ে মেডিকেইড তহবিল বৃদ্ধি এবং মেডিকেইড প্রতারণা কিভাবে বন্ধ করা যায় এ বিষয়টি। আগামী অর্থ বছরে হোম কেয়ার খাত থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার বাঁচানোর একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হোম কেয়ার মেডিকেইড প্রোগ্রামের ৮ বিলিয়ন ডলার বাজেটের বিষয়টি নিয়ে নিউইয়র্ক পোষ্ট একটি রিপোর্ট করেছে। গত ১১ এপ্রিল প্রকাশিত এই রিপোর্টে উত্থাপন করা হয় গভর্নর হকুল এবং স্টেট অ্যাসেম্বলি স্পীকারের পরিকল্পনাটি। গভর্নর অফিসে মেডিকেইড হোম কেয়ারের ৮ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করবেন বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদটিতে।
তাদের পরিকল্পনার মূল বিষয় হলো বর্তমানের ১৩০টি লীড এফ আইয়ের পরিবর্তে সবগুলো এফ আইকে একটি মাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপিএল ইন্্ক এর আওতায় এনে সব কর্তৃত্ব এই কোম্পানীর উপর ন্যস্ত করা। গভর্নর হকুল এবং স্পীকার কার্ল হিয়াস্টির এই প্রস্তাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সকল হোমকেয়ার ব্যবসায়ী সহ বাংলাদেশী কমিউনিটিতে। হোমকেয়ার সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এমন গুজবও চাউর হয়েছে।
গভর্নর এই আইন কার্যকর করতে নিউইয়র্ক মেডিকেইড সেকশন ১১১৫এ পরিবর্তন আনতে চান। এজন্য স্টেট অ্যাসেম্বলীতে প্রয়োজন হবে ভোটের। নিউইয়র্ক স্টেটের নিম্ন কক্ষ অ্যাসেম্বলীর ১৫০ সদস্যের মধ্যে সিংহভাগ সদস্যই ডেমোক্র্যাট। প্রস্তাবিত এই আইন পাশ হলে হোম কেয়ার সার্ভিসে বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ধারণা। এতে কমিউনিটির সাধারণ গ্রাহকগণ পড়বেন ভোগান্তিতে। হ্রাস পাবে সেবার মান। সংকুচিত হবে হোমকেয়ার সার্ভিসের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকের কর্মসংস্থান।
তাছাড়া যে সকল স্টেটে হোম কেয়ার সেবা একক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে দেয়া হয় সেসব স্টেটে হোম কেয়ার সার্ভিস মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠিত হোম কেয়ার ব্যবসায়ী ইমিগ্র্যান্ট এল্ডার হোম কেয়ারের চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ। গিয়াস আহমেদ বলেন, আমরা ১৫ এপ্রিল আলবেনিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। অন্য হোমকেয়ার এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিরাও সেখানে গিয়েছিল। আমরা বলেছি, একটি কোম্পানির অধীনে সব হোম কেয়ার কোম্পানিকে এনে নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক হবে না। আর একটি কোম্পানির অধীনে এতগুলো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হলে ব্যাহত হতে পারেসেবার মান। সে কারণে আমরা চাই এখন যে রকম আছে সেভাবেই পরিচালিত হোক। তিনি বলেন, কিছু কিছু হোম কেয়ারের অনিয়ম থাকতে পারে। এ জন্যই গভর্নর ও স্পিকার কড়াকড়ি করে স্বচ্ছতা আনতে চাইছেন। কিছু হোম কেয়ার ঠিকভাবে কমপ্লায়েন্স মেনটেইন করছে না। নিয়ম হচ্ছে একজন কতক্ষণ সেবা দিচ্ছেন, সে জন্য ক্লক আওয়ার থাকবে। ক্লক ইন ও ক্লক আউট হবে। এটা ডিজিটালি হবে।
কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান এটি ডিজিটালি না করে মেন্যুয়ালি করে। এতে ঘণ্টার হিসাব সব সময় ঠিকমতো হচ্ছে না। আবার এমনও হয় দেখা যায়, কেউ দিচ্ছে ২১ ডলার করে আওয়ার, কেউ ২৩ ডলার। যেখানে নির্দিষ্ট রয়েছে ২১ ডলার করে ঘণ্টায় বেতন দিতে হবে, সেখানে তারা অনিয়ম না করলে বেশি দিচ্ছে কোথা থেকে। এই অর্থই-বা কেমন করে তারা ম্যানেজ করে। আসলে আমরাও চাই স্বচ্ছতা আসুক।
হোমকেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ প্রতিনিধিরা অ্যালব্যানিতে সমবেত হয়েছিলেন আইনপ্রনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হোমকেয়ার প্রতিবাদ জানানোর জন্য। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, আইনপ্রনেতারা স্বল্প আয়ের নিউইয়র্কবাসীর স্বাস্থ্যসেবার দিকটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন এবং তাদের ক্ষতি হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। মেকিডেইড নিয়ে যে প্রতারণা অতীতে হয়েছে অথবা বর্তমানে হচ্ছে, তা ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার আনা হচ্ছে। কিন্তু এসব প্রক্রিয়ার মধ্যে হোমকেয়ার সার্ভিসের ওপর সহসা বড় ধরনের কোনো ধাক্কা আসবে, এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
Posted ২:১৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh