বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্ট ইমিগ্রেশন ইস্যুতে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছে যে কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ইমিগ্রান্টদের আসতে ও বসবাসে উদ্বুদ্ধ করে তাহলে তা ১৯৮৬ সালের ইমিগ্রেশন আইনে অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য কিনা। নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে আইনটিকে কৌতুহলপূর্ণ একটি আইন হিসেবে করে বলা হয়েছে যে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকগণ আগামী বসন্তে এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন। তিন বছর আগে তারা একটি শুনানিতে অংশ নেন এবং তাদের কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করেন যে ১৯৮৬ সালে প্রণীত ইমিগ্রেশন আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর পরিপন্থী।
প্রধান বিচারপতি জন জি, রবার্টস জুনিয়র এক দাদির কথা জানতে চান, যার নাতনি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, এটি কোনো অপরাধ হিসেবে গন্য হবে কিনা, যদি দাদি তার নাতনিকে বলেন যে তিনি তার শূন্যতা বোধ করেন এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে তার সঙ্গে উৎসাহিত করেন? বিচারপতি ব্রেট কাভানা একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কথা ভাবেন, যে প্রতিষ্ঠান লোকজনকে খাবার পরিবেশন করে, যা লোকগুলো অন্য কোথাও পায় না এবং প্রতিষ্ঠানটি জানে যে যারা খাবার গ্রহণ করছে, তারা এখানে অবৈধভাবে রয়েছে। সেক্ষেত্রে দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি কি কোনো অপরাধ সংঘটন করছে?
বিচারপতি স্টিফেন জি, ব্রেয়ার বিস্ময় প্রকাশ করে এক বাড়ির মহিলা মালিকের কথা উল্লেখ করেন, যিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, “আপনার জন্য এখানে সবসময় জায়গা আছে,” যদিও তিনি জানেন যে লোকটি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। বিচারপতি সোনিয়া সটোমায়োর তার উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করেন, যদিও আইনে এ সম্পর্কে সুষ্ঠু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুনানির দুই মাস পর সুপ্রীম কোর্ট এই মামলায় কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়। বিচারপতি রুথ বাডার গিনসবার্গ ছিলেন মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে একেবারে শেষে।
তিনি বলেন, আপিল আদালত অত্যন্ত প্রবলভাবে চেষ্টা করেছে ১৯৮৬ সালের আইনের সাথে প্রথম সংশোধনীর সামঞ্জস্য ও অসামঞ্জস্যের দিকগুলোর ওপর সিদ্ধান্ত নিতে, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তারা ১৯৮৬’র আইনের সঙ্গে সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর সংশ্লিষ্ট বিষয়টি পরবর্তীতে নিস্পত্তি করবেন। গত মাসে সুপ্রীম কোর্টের সামনে আরেকটি মামলা আসে, যেটি একই আইনের অধীনে নিস্পত্তি করতে হবে, যে মামলায় বিবাদী প্রথম সংশোধনীর আলোকে আইনটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। বিবাদী হেলাম্যান হ্যানসেনকে আইন লংঘন, ডাক ও ইন্টারনেটে প্রতারণা, এডাল্ট অ্যাডপশন কর্মসূচি বা বয়স্কদের দত্তক গ্রহণের মাধ্যমে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের আমেরিকার সিটিজেনশিপ লাভের সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিপুল অংকের ফি গ্রহণ করার দায়ে সাজা দেওয়া হয়েছিল। নাইনথ সার্কিট কোর্ট এটিকে একটি প্রতারণা বলে উল্লেখ করে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিচারক রোনাল্ড এম গোড তার মতামতে লিখেছেন যে, হ্যানসেন ফেডারেল ইমিগ্রেশন এজেন্টদের কাছে স্বীকার করেছেন যে, দত্তক কর্মসূচিতে তিনি কারও সিটিজেনশিপ অনুমোদনের সুযোগ এনে দিতে পারেননি এবং তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে এডাল্ট অ্যাডপশনের মাধ্যমে আমেরিকান সিটিজেনশিপ পাওয়া সম্ভব নয়।” নাইনথ কোর্টের প্যানেল হ্যানসেনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ করে এবং তার ২০ বছরের কারাদন্ড অনুমোদন করে।
কিন্তু আদালত ১৯৮৬ সালের আইনের আওতায় তার সাজার রায় পাল্টে দেয় যে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রান্টদের যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানে উৎসাহিত করার জন্য তার সাজা হবে ১০ বছর এবং প্রতারণা জন্য শাস্তি একই মেয়াদে কার্যকর হবে; অর্থ্যাৎ উভয় সাজার যুক্ত মেয়াদ ১০ বছর। বিচারক রোনাল্ড গোড তার সিদ্ধান্তে ১৯৮৬ সালের আইনকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছেন এবং এই আইনে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসে উৎসাহিত করা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে সমাজসেবামূলক সুবিধাদির কথা বলে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা, কোনো ট্যুরিস্টকে তার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও তাকে তেমন পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে না মর্মে আইনগত পরামর্শ দানকেও অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়। গত জুলাই মাসে ডেনভারের তিন সদস্যের দশম সার্কিট কোর্ট আইনটিকে বাতিল করার জন্য নাইনথ সার্কিট কোর্টের সিদ্ধান্তের অনুরূপ সিদ্ধান্ত নিয়ে বলে যে এই আইন বিদ্যমান থাকায় প্রতিদিন বহুবার সংবিধান লংঘিত হচ্ছে।
Posted ৭:২৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh