বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ ইমিগ্রান্টদের পর্যায়ক্রমে সিটিজেনশিপ দেয়ার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সিনেটে বাইপার্টিজান বিল উত্থাপন করা হয়েছে। তবে এজন্য অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ, গুরুতর কোনো অপরাধে জড়িত না হওয়ার প্রমাণ এবং জরিমানা প্রদান ও নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। গত সোমবার ফক্স নিউজ জানিয়েছে ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দানের ব্যাপক কর্মসূচির মধ্যে সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করার বিপূল ব্যয় সম্বলিত পরিকল্পনাকেও যুক্ত রাখা হয়েছে। অবৈধ ইমিগ্রান্টদের সাময়িক বৈধতা দানের আগে হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে সীমান্ত নিরাপত্তা ও সীমান্ত বেষ্টনি জোরদার করার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার ছয় মাস পর এটি ঘটতে পারে। বিলে বলা হয়েছে যে সাময়িক বৈধতা প্রাপ্ত ইমিগ্রান্টরা ১০ বছর পর্যন্ত তাদের সাময়িক স্ট্যাটাস নিয়ে থাকবেন এবং বৈধভাবে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু তারা কল্যাণমূলক ও স্বাস্থ্যসেবার মতো ফেডারেল সরকারের কোন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না। ১০ বছর পর তারা গ্রীনকার্ডের জন্য অর্থ্যাৎ যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করবেন। এর তিন বছর পর ওইসব ইমিগ্রান্ট সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সবমিলিয়ে একজন ইমিগ্রান্টের সাময়িক বৈধতা লাভ ও সিটিজেনশিপের আবেদন করার সময় পর্যন্ত মোট ১৩ বছর সময় লাগবে। জরিমান এবং অতিরিক্ত ফিসহ প্রত্যেক ইমিগ্রান্টকে ২,০০০ ডলার ব্যয় করতে হবে। আবেদন করার যোগ্য হতে হলে অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে হবে।
সীমান্ত সুরক্ষা ও বৈধতাকরণ যদিও বড় একটি পরিকল্পনা অংশ, কিন্তু এই আইনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার যে অপূর্ণতা বা ঘাটতিগুলো রয়েছে তা কাটিয়ে এ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ হিসেবে বলেছেন ইমিগ্রেশন অধিকার প্রবক্তারা। এর ফলে শুধু অবৈধ ইমিগ্রান্টদের একটি বড় অংশই যে উপকৃত হবেন তা নয়, লক্ষ লক্ষ উচ্চ ও স্বল্প দক্ষ কর্মীদের জন্য ইমিগ্রেশন লাভের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ‘মেধা ভিসায়’ যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশের মেধাবীরা আগমণের সুযোগ লাভ করবেন। তবে বিদেশিদের চাকুরি দানের ক্ষেত্রে চাকুরি দানকারী আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলোকে সকল বিদেশি কর্মীর বৈধ ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস কঠোরভাবে যাচাই করে নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে আমেরিকার ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার নাটকীয় সংস্কার সাধন সিকি শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ। অ্যারিজোনার রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেই বলেছেন, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের মধ্যে একটি উপলব্ধি এসেছে যে, ইমিগ্রেশন নিয়ে সমস্যার যে পাহাড় সৃষ্টি করা হয়েছে তা নিস্পত্তি করা প্রয়োজন। এক কোটি ১০ লক্ষ মানুষ চিরদিন অন্ধকারে বসবাস করবে তা হতে পারে না। বিলটি নিয়ে সিনেটর ম্যাককেইন ও সিনেটর চাক শ্যুমার ছাড়াও ডেমোক্রেট সিনেটর ইলিনয়ের ডিক ডাবলিন, নিউ জার্সির সিনেটর ও কলোরাডোর সিনেটর রবার্ট মেনেনডেজ এবং রিপাবলিকান সিনেটর ফ্লোরিডার মার্কো রুবিও, সাউথ ক্যারোলিনার লিণ্ডসে গ্রাহাম এবং অ্যারিজোনার জেফ ফ্লেক চুলচেরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিন্তু বিলটি নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে। টেক্সাসের রিপাবলিকান হাউজ রিপ্রেজেন্টেটিভ ল্যামার স্মিথ সোমবার হাউজে তার বক্তব্য দানকালে বলেছেন, সিনেটের এ ধরনের ইমিগ্রেশন প্রস্তাব দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করার খোলা আমন্ত্রণ ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। দেশের ভেতর যেসব অবৈধ ইমিগ্রান্ট রয়েছে এমন একটি বিল উত্থাপিত হওয়ার কথা জানার পর সীমান্ত নিরাপদ হওয়ার আগেই আরো লক্ষ লক্ষ বিদেশি সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবে। এই প্রস্তাব অবৈধ ইমিগ্রেশন হৃাস করার চেয়ে বরং বহুগুণ বৃদ্ধি করবে।
সিনেটের ইমিগ্রেশন বিল অনুযায়ী যেসব তরুণকে এদেশে অবৈধভাবে আনা হয়েছে তাদের বৈধতা লাভের সুযোগ দ্রুততর হবে। তারা পাঁচ বছরের মধ্যে গ্রীনকার্ড পাবে এবং এর অল্পদিন পরই নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের ভাইবোনদেরকে স্পন্সর করে যুক্তরাষ্ট্রে আনার পর তারও নাগরিক হওয়ার যে সুযোগ লাভ করতেন, সিনেটের উত্থাপিত বিল আইনে পরিণত হলে তারা আর ভাইবোনদের স্পন্সর করতে পারবেন না। বিলের একটি বিধি ইেিমগ্রেশন অধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় ভারসাম্য আসার জন্য নতুন আইনে আরেকটি পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে কাজের সূত্রে জড়িত ইমিগ্রান্টদের ১৫ শতাংশ গ্রীন কার্ড প্রদান করা হবে। পারিবারিক সূত্রে গ্রীনকার্ড লাভের সুযোগ অনেকাংশেই কমে যাবে।
বিজ্ঞান, শিল্পকলা, শিক্ষা, ব্যবসা বা খেলাধূলায় ব্যতিক্রমী যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি অথবা খ্যাতনামা প্রফেসর, ডাক্তার এবং অন্যান্যদের জন্য গ্রীনকার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে কোন সীমার রাখা হয়নি। বিদেশি উদ্যোক্তা, যারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসা শুরু করতে চান তাদের জন্য নতুন ধরনের ভিসা থাকবে। টেকনোলজি কোম্পানিগুলোর বিরাট চাহিদার কারণে দক্ষ কর্মী নিয়োগ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এছাড়া স্বল্প দক্ষ কর্মী নির্মাণ, কৃষিকাজের মতো বিভিন্ন কাজে জন্য আসতে পারবেন এবং সেই সংখ্যা এক বছরে দুই লাখে উন্নীত হতে পারে। নতুন একটি কৃষি ভিসা কর্মসূচি চালু করা হবে, যার সুযোগ নিয়ে কৃষি শ্রমিকরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারবে। যেসব কৃষিশ্রমিক ইতোমধ্যে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে তাদেরকে সিটিজেনশিপের পথে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে অন্যদের চেয়ে দ্রুততার সাথে। তারা ৫ বছরের মধ্যে গ্রীনকার্ড পাবে।
Posted ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh