রবিবার, ৫ মে ২০২৪ | ২২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বৈধতা দিতে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ কী যথেষ্ট

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বৈধতা দিতে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ কী যথেষ্ট

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর হিসপানিক ভোটারদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ, ‘ডাকা’র (ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভ্যাল) আওতাধীন তরুণদের ডিপোর্টেশন থেকে রক্ষা এবং ইমিগ্রেশন আইনে ব্যাপক পরিবর্তনের রূপরেখা স্থির করাসহ বেশকিছু নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেছেন। আশা করা হচ্ছে ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ ইমিগ্রান্টকে বৈধতা দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কিত ঘোষণা দেবেন। কিন্তু ইতোমধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে যে নির্বাহী পদক্ষেপ স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নয় এবং হোয়াইট হাউজ আশা করছে যে প্রেসিডেন্টের নির্দেশনার আলোকে কংগ্রেস ইমিগ্রেশন সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবে, যাতে অবৈধ ইমিগ্রান্টরা যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ লাভ করে এবং পর্যায়ক্রমে নাগরিকত্ব লাভের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা তিক্ত এবং কংগ্রেস ব্যাপক ইমিগ্রেশন সংস্কার আইন পাসে কখনো একমত হতে পারেনি বলে ল্যাটিনো ইমিগ্রেশন অধিকার সংগঠনগুলো আশঙ্কা ব্যক্ত করতে শুরু করেছে যে, কংগ্রেসের কাছে গেলে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বৈধতা লাভে যে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান তা কখনো দূর হবে না। সেজন্য তারা এখানে অবৈধভাবে বসবাসরত ইমিগ্রান্টদের প্রতি অ্যামনেষ্টির ঘোষণা দিয়ে তাদেরকে বৈধতা দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে। লীগ অফ ইউনাইটেড ল্যাটিন আমেরিকান সিটিজেনস এর প্রেসিডেন্ট ডোমিঙ্গো গর্সিয়া বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি ব্যাপকভিত্তিক ইমিগ্রেশন সংস্কার সাধনে সিনেট ব্যর্থ হলে সেক্ষেত্রে অ্যামনেষ্টিই একমাত্র সমাধান। ‘মি ফ্যামিলিয়া ভোটা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক হেক্টর শানচেজ বারবা বলেছেন, কংগ্রেসের পদক্ষেপ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং বাইডেন ইমিগ্রেশন নিয়ে যে পরিকল্পনা পেশ করেছেন, আমার মনে হয় আমাদের ইতিহাসে এর চেয়ে চমৎকার পরিকল্পনা এর আগে কেউ উত্থাপন করেননি। কিন্তু কংগ্রেস্র যদি ইমিগ্রেশন আইন সংস্কার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা ট্রাম্প প্রশাসন ইমিগ্রেশন সমস্যাকে যে জটিলতার মধ্যে ফেলেছেন তা কাটানোর জন্য আমরা যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে কথা বলবো যাতে ট্রাম্পের বিদ্বেষপূর্ণ চরমপন্থার মূলোৎপাটন করা সম্ভব হয়।


একটি বিষয় এখনো অস্পষ্ট যে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের অ্যামনেষ্টি দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হলে বাইডেন কিভাবে সাড়া দেবেন। তাছাড়া যেখানে কংগ্রেসের পক্ষে এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে তখন ইমিগ্রান্ট অধিকার প্রবক্তাদের সকলে ইমিগ্রেশন বিষয়ে বিতর্কিত পথ গ্রহণের জন্য চাপ প্রয়োগ করবেন না। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের পলিসি ডাইরেক্টর জর্জ লোয়ারি বলেছেন, যারা ইমিগ্রেশন আইন ভঙ্গ করেছে তারা প্রেসিডেন্টের ক্ষমা লাভের যোগ্য নয়, কারণ এভাবে লোকজনকে সিটিজেনশিপের পথে নেয়া যায় না, এর মাধ্যমে শুধুমাত্র সিটিজেনশিপের পথে অগ্রসর হওয়ার পথে যে বাধাগুলো অপসারণ করা সম্ভব হয়। অবৈধ ইমিগ্রান্টদের মার্জনার প্রস্তাব নতুন কিছু নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগে ২০১৬ সালের শেষ দিকে গর্সিয়া এবং অন্যান্যরা আশঙ্কা করেছিলেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন উদ্যোগ জোরদার করবেন।

বিশেষ করে যারা ড্রিমার নামে খ্যাত এবং যাদেরকে তাদের অভিভাবকরা তাদের শৈশবাস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে এনেছিলেন। কংগ্রেস তাদেরকে বৈধতা দিতে ড্রিম অ্যাক্ট পাস করতে পারেনি এবং প্রেসিডেন্ট তাদেরকে ডিপোর্ট করার পর্যায়ে নিয়েছিলেন। কয়েক ডজন এডভোকেসি গ্রুপ এবং কমপক্ষে তিনজন ডেমোক্রেট সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে নিবেদন করেছিলেন তার শেষ মুহূর্তে অ্যামনেষ্টি ঘোষণার জন্য। হাউজ মেম্বার জো লোফগ্রেন প্রেসিডেন্টের কাছে এক চিঠিতে প্রস্তাবিত অ্যামনেষ্টিকে ‘জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্ন’ বলে বর্ণনা করে ১ কোটি ১০ লাখ ইমিগ্রান্টকে বৈধতা দানের নিবেদন করেন। ওবামা এই অনুরোধ মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং ট্রাম্প ক্ষমতা নিয়ে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেন।


ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণ করে ‘ডাকা’ কর্মসূচির অবসান ঘটাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু আদালতের আদেশে প্রেসিডেন্টের উদ্যোগের বাস্তবায়ন বন্ধ হয়ে যায়। অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে ট্রাম্প ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে মেক্সিকো সীমান্তে অগত অবৈধ ইমিগ্রান্টদের শিশু সন্তানদের মা-বাবার নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। তিনি অধিকাংশ ইমিগ্রান্টের রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ ঠেকিযে তাদেরকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করে মেক্সিকোতে অপেক্ষা করার জন্য বলা হয়। কিন্তু বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর গৃহীত উদ্যোগ ট্রাম্পের সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি দক্ষিণ সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ বন্ধ, ড্রিমারদের রক্ষা এবং ইমিগ্রেশন আইন ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার করেছেন, যেসব ক্ষেত্রে গত তিন দশক যাবত তাৎপর্যপূর্ণ কোন পরিবর্তন ঘটেনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে বসেই তিনি ডাকা’ পুনবহাল এবং ঢালাও ইমিগ্রেশন সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। তার প্রস্তাবে কৃষি শ্রমিক, শৈশবে অবৈধভাবে আগত এবং টেম্পরারি প্রটেক্টেড স্ট্যাটাসে থাকা ইমিগ্রান্টদের অবিলম্বে গ্রীন কার্ড লাভের যোগ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধতা লাভ ও কাজ করার অধিকার লাভ করবে। অন্যান্য ক্যাটাগরির অবৈধ ইমিগ্রান্ট, যারা ২০২১ সালের ১ জানুয়ারীর পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, তারা পাঁচ বছরের জন্য সাময়িক বৈধতা লাভ করবে এবং তারা যদি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত না হয় এবং ট্যাক্স পরিশোধ করে তাহলে সিটিজেনশিপের পথে অগ্রসর হতে পারবে।

আইওয়ার রিপাবলিকান সিনেটর চাক গ্রাসলে, যিনি ইতিপূর্বে বাইপার্টিজান ইমিগ্রেশন সংস্কার পরিকল্পনা সমর্থন করেছিলেন, তিনি এবং ট্রাম্পের অনুগত মিজৌরির জোস হাউলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ইমিগ্রেশন সংস্কার পরিকল্পনার কঠোর সমালৈাচনা করে বলেছেন, এ ধরনের গণ অ্যামনেষ্টি সমর্থনযোগ্য নয়। শুধু তাই নয়, যেসব ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান ‘ডাকা’র আওতাধীন তরুণ ইমিগ্রান্টদের অ্যামনেষ্টির পক্ষে একসময় প্রেসিডেন্ট ওবামার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, বাইডেন তার ইমিগ্রেশন সংস্কার প্রস্তাব স্বাক্ষর করার পর তারা নিরবতা পালন করছেন। ইমিগ্রেশন এটর্নি এবং ইমিগ্রেশন এন্ড সিটিজেনশিপের ওপর হাউজ জুডিশিয়ারি সাব-কমিটির অতি সাম্প্রতিক চেয়ারম্যান লোফগ্রেন ইমিগ্রেশন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার অ্যামনেষ্টির ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন কিনা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এক লিখিতি বিবৃতিতে তিনি বলেন যে, দেশের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার সংস্কারকে এগিয়ে নিতে তিনি প্রেসিডেন্টের সাথে কাজ করছেন।


উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালের ২১ জানুয়ারী ৫ লাখ ৭০ হাজার আইন অমান্যকারী আমেরিকানকে অ্যামনেষ্টি দেয়া হয়েছিল। জিমি কার্টার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার প্রথম দিনে ২ লাখ ১০ হাজার আমেরিকানকে ভিয়েতনাম যুগের সিলেকটিভ সার্ভিস অ্যাক্ট লংঘন করার জন্য অভিযুক্ত এবং আরো ৩ লাখ ৬০ হাজার আমেরিকান, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও বিচারের সম্মুখীণ করা হয়নি, তাদেরকে মার্জনা করেছিলেন। আমেরিকান সংবিধানের দ্বিতীয় ধারার প্রথম উপবিধিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, “ইমপিচমেন্টের ঘটনা ছাড়া প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের ঘটনায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্তদের ক্ষমা করতে পারেন।” এর দ্বারা প্রেসিডেন্ট ফেডারেল আইন ভঙ্গকারী সকলকে নিরঙ্কুশভাবে বা শর্তাধীনে ক্ষমা করার অধিকারী বলে মন্তব্য করেছেন কর্নেল ইউনিভার্সিটি ল’ স্কুলের লিগ্যাল ইনফরমেশন ইন্সটিটিউটের মুখপাত্র। প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড সামরিক পক্ষত্যাগী, যারা জনসেবামূলক কাজের প্রতি আগ্রহী তাদের প্রতি শর্তসাপেক্ষে মার্জনা ঘোষণা করেছিলেন। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেসিডেন্টরা বিপুল সংখ্যক লোককে ক্ষমা করার দৃষ্টান্ত রেখেছেন, যা প্রথম সূচনা করেছিলেন ১৭৯৫ সালে জর্জ ওয়াশিংটন। হুইস্কি রেভ্যুলিউশন নামে পরিচিত কর বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিদ্রোহীদের প্রতি তিনি ক্ষমা ঘোষণঅ করেন। আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পর প্রেসিডেন্ট এণ্ড্রু জনসন কনফেডারেট সৈন্যদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেন এবং ১৯০২ সালে প্রেসিডেন্ট থিয়োডর রুজভেল্ট ওই সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড ফিলিপাইনে বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী ফিলিপিনোদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করেন।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৫ বছরের ইতিহাসে কোন প্রেসিডেন্ট অবৈধ ইমিগ্রেশনকে অ্যামনেষ্টির আওতায় ফেলেননি। প্রেসিডেন্টগণ ঐতিহাসিকভাবে ফৌজদারি আইন লংঘনের বিষয়ে উদারতা প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা যদি কারও দ্বারা বার বার না ঘটে তাহলে এটি নাগরিক বা দেওয়ানি অপরাধ। কিন্তু কারডোজো স্কুল অফ ল’ এর প্রফেসর পিটার মার্কোউইটড এর মতে, ইমিগ্রেশন একটি “অষ্পষ্ট ক্ষেত্র”। ইমিগ্রেশন আইন লংঘনের ঘটনা ফৌজদারি বা দেওয়ানি যাই হোক না কেন, তা অবশ্যই অপরাধ এবং তা প্রেসিডেন্টের ক্ষমার এখতিয়ারের মধ্যেই রয়েছে।”

advertisement

Posted ১০:০০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.