বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর তার স্টেটে প্রবেশ করা ইমিগ্রান্টদের স্টেটের ছোট্ট এক রিসোর্ট আইল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সীমান্ত কর্মকর্তারা আমেরিকার অ্যাসাইলাম ব্যবস্থাকে কিছুটা উন্নত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, নতুন আন্তর্জাতিক মাইগ্রেশন প্যাটার্ন অনুযায়ী অ্যাসাইলাম পেতে আগ্রহী অথবা উন্নত জীবনের আশায় অস্থিরতা, নির্যাতন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নিজ নিজ দেশ ছেড়ে আসা লোকজন নজীরবিহীন হারে ভিড় করছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে। গত এক বছরে এ ধরনের বিদেশিদের সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও প্রবেশ করতে চেষ্টাকারীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি বলে রিপোর্টে বলা হয়।
আমেরিকার চাকুরির বাজারে নিয়োগ লাভের আশায় ছুটে আসছে ভেনিজুয়েলা, কিউবা ও নিকারাগুয়ার লোকজন এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তার প্রশাসন পরিবারগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে না, সীমান্ত বরাবর প্রাচীর নির্মাণ করবে অথবা অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের মেক্সিকোর শিবিরে অপেক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা করবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব ব্যবস্থার পক্ষেই তার মেয়াদে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে যে দশকের পর দশক ধরে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট ও আইন প্রনেতারা এই মূল ইস্যুটিকে নিয়ে এক গোলকধাঁধার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বন্যার তোড়ের মতো আসা এই লোকগুলোকে নিয়ে আমেরিকা কি করবে? প্রশ্ন তুলেছে নিউইয়র্ক টাইমস।
কংগ্রেসে বাই-পার্টিজান সমর্থন ছাড়া ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর মতো কোনো জাদুর চেরাগ নেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে। কোনো একটি দলের পক্ষে এককভাবে ইমিগ্রেশন সংস্কার সাধন করা যে অসম্ভব তা উভয় দল জানে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে হোয়াইট হাউজে বিতর্কের পর বাইডেন প্রশাসন সমস্যার ক্ষুদ্র একটি অংশকে সমাধান করার চেষ্টা করছে, বছরের পর বছর যাবত অ্যাসাইলাম অফিস ও ইমিগ্রেশন জজদের কাছে জমে থাকা অ্যাসাইলাম আবেদনের স্তুপ হ্রাস করা অথবা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিদেশিদের নিপীড়ন থেকে অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের রক্ষার ব্যবস্থা করা।
প্রশাসনের লক্ষ্য হচ্ছে অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের বিষয় দ্রুত নিস্পত্তির জন্য আসাইলাম অফিসারদের অধিক দায়িত্ব অর্পণ, নিস্পত্তির জন্য শুধু ইমিগ্রেশন জজদের ওপর নির্ভর করা নয়। অ্যাসাইলাম অফিসারদের ওপর এখতিয়ার ন্যস্ত করা হবে যে আবেদনকারীদের মধ্যে কারা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে পারবে এবং কাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে। কোনো বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে অ্যাসাইলামের জন্য আবেদন করার পর ২১ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে তাদের ইন্টারভিউ গ্রহণ করবেন অ্যাসাইলাম অফিসাররা, যা বর্তমান ব্যবস্থায় ইমিগ্রেশন কোর্ট সিস্টেমে বছরের পর বছর আটকে থাকার চেয়ে অধিকতর দ্রুত নিস্পত্তির ব্যবস্থা সম্বলিত হবে। প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন অ্যাসাইলাম আবেদনকারী, যিনি অ্যাসাইলাম পাওয়ার যোগ্য অথবা যোগ্য নন, তাদেরকে দুই থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
এটি আপাতত ক্ষুদ্র একটি পরিবর্তন, এক দৃষ্টান্তে দেখা যায়, বর্তমান অ্যাসাইলাম বিধির আওতায় গত মে মাসের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত একজন অ্যাসাইলাম অফিসার মাত্র ৯৯ জন অ্যাসাইলাম আবেদনকারীর ইন্টারভিউ গ্রহণ করেছেন, তাদের পুরোপুরি যাচাই করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে মাত্র ২৪ জনের অ্যাসাইলাম অনুমোদন করা হয়েছে এবং অবশিষ্টদের বিষয় ইমিগ্রেশন কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পুনর্বিবেচনা করার জন্য। কিন্তু নতুন বিধি অনুসারে যা করা হবে তা হচ্ছে, যাদের অ্যাসাইলাম আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে তাদেরকে দ্রুত তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা।সেক্রেটারী অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি আলেজান্দ্রো এন মায়োরকাস কলেছেন, আমরা অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের ব্যাপার নিস্পত্তির জন্য একটি নতুন ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি, যা চলে আসা ব্যবস্থার চেয়ে অধিক কার্যকর ও দ্রুততর হবে।
নতুন ব্যবস্থায়, যাদের অ্যাসাইলাম অনুমোদন করা হবে, তাদের ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হবে এবং এক পর্যায়ে তারা গ্রিন কার্ড ও সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যারা অনুমোদন পাবেন না তাদের দ্রুত ডিপোর্ট করা হবে। আগের ব্যবস্থা অকার্যকর ছিল বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি বলেছেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইমিগ্রেশন আদালতগুলোতে ১৯ লাখ ইমিগ্রেশন মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ বিচারাধীন ইমিগ্রেশন মামলা পড়ে আছে ৫ বছর বা আরো দীর্ঘ সময় যাবত। ২০০১ সালে বিচারাধীন ইমিগ্রেশন মামলার সংখ্যা ছিল মাত্র দেড় লাখ। জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট আরও ১০০ ইমিগ্রেশন জজ নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দানসহ অন্যান্য সুবিধাদি সৃষ্টি করার জন্য চলতি বছর ১৭৭ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু এতে কোন ইতিবাচক সাড়া পওয়া যাযনি।
ইমিগ্রেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ৬৫০ জন অ্যাসাইলাম অফিসারের মধ্যে ১৪০ জনের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করবে নতুন বিধি অনুযায়ী অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের ইন্টারভিউ গ্রহণ করতে। ইতোমধ্যে প্রশাসন আরও ৮০০ অ্যাসাইলাম অফিসার ও ১,২০০ সহায়ক কর্মী নিয়োগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে, যার ফলে প্রতি বছর সরকার দেড় লাখ ইন্টারভিউ সম্পন্ন করে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবে।
Posted ১:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh