বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
আমেরিকানদের গড় আয়ু ৭৯ বছর থেকে হ্রাস পেয়ে ৭৬ বছরে দাঁড়িয়েছে, যা গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয়ু হ্রাসের ঘটনা বলে ফেডারেল স্বাস্থ্য গবেষকরা গতকাল বুধবার বলেছেন। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা পরিস্থিতি আয়ু হ্রাসের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে তারা মনে করেন। গত দুই বছরে লক্ষ্যণীয় আয়ু হ্রাসের ঘটনা ঘটেছে নেটিভ আমেরিকান ও আলাস্কান নেটিভদের মধ্যে। তাদের মধ্যে যে লোকগুলো ৭৯ বছর বয়স পর্যন্ত জীবিত থাকবেন বলে আশা করছিলেন, তারা তাদের ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। এ সময়ে হিসপানিক আমেরিকানদের আয়ু ৮১.৯ বছর থেকে কমে ৭৭.৯ বছরে নেমেছে। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের বেলায় আয়ু কমে দাঁড়িয়েছে ৭১.৫ বছর। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের গড় আয়ু ৭৮.৮ বছর থেকে হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭.৪ বছর। তবে লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হলো উল্লিখিত সময়ে এশিয়ান আমেরিকানদের গড় আয়ু হ্রাস পেয়েছে অতি সামান্য, মাত্র দশমিক এক শতাংশ অর্থ্যাৎ ৮৩.৬ বছর থেকে কমেছে ৮৩.৫ বছর।
১৯৪৪ সালে সকল আমেরিকান গড় আয়ু ছিল ৬৫ বছর, এবং নেটিভ আমেরিকান ও আলাস্কান নেটিভদের ক্ষেত্রে তাই ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের গড় আয়ু কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের চেয়ে কমেছে। গত দুই বছরে শুধু যে করোনা মহামারী আমেরিকানদের বেঁচে থাকার গড় বয়স বা আয়ু হ্রাসে অবদান রেখেছে তা নয়, দুর্ঘটনাজনিত বা অধিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের কারণ এজন্য অনেকাংশে দায়ী বলে গবেষকরা মনে করেন। হৃদরোগ, দীর্ঘকাল ধরে থাকা লিভারের ব্যাধি ও লিভার সিরোসিসের কারণের মৃত্যুর ঘটনা সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ন্যাশনাল সেন্টার অফ হেলথ সার্ভিসেস এর চিফ অফ মর্টালিটি স্ট্যাটিসটিকস রবার্ট অ্যান্ডারসন এর মতে, “বছরের এক দশমাংস সময়েও যদি সামান্যতম আয়ও হ্রাস পায়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে যে একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বহুসংখ্যক মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে, অথচ তাদের আরও দীর্ঘ জীবন লাভ করার কথা ছিল। এর ফলে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু জনগণের ওপর বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করছে।”
ভার্জিনিয়ার কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিন সেন্টার অন সোসাইটি এন্ড হেলথ এর এমিরেটাস ডাইরেক্টর ড. স্টিভেন ওলফ যুক্তরাষ্ট্রে আয়ু হ্রাসের বর্তমান চিত্রকে “ঐতিহাসিক” উল্লেখ করে বলেন যে করোনা মহামারীতে বিশ্বের উচ্চ আয়ের প্রতিটি দেশই ২০২০ সালে চরম অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে, কিন্তু ২০২১ সালে তারা তাদের সেই অবস্থা কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো দেশের ক্ষেত্রে মানুষের যুক্তরাষ্ট্রের মতো এতটা আয়ু হ্রাসের ঘটনা ঘটেনি। বরং ওই দেশগুলোতে আয়ু স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে স্টিভেন ওলফ মনে করেন।
ফেডারেল ইন্ডিয়ান হেলথ সার্ভিস এজেন্সির ডায়াবেটিস ট্রিটমেন্ট এন্ড প্রিভেনশন এর সাবেক ডাইরেক্টর এবং মিনেসোটার চিপেওয়া ট্রাইবের সদস্য ডা: অ্যান বুলক মনে করেন আয়ু হ্রাসের জন্য শুধু করোনা ভাইরাসকে দায়ী করা যায় না। এর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোও জড়িত, যার শেকড় রয়েছে দারিদ্র, বৈষম্য ও স্বাস্থ্য সেবার প্রাপ্যতার ঘাটতি, যে বিষয়গুলো নেটিভ আমেরিকান ও আলাস্কান নেটিভদের যেকোনো ভাইরাস সংক্রমণে ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, নেটিভ আমেরিকান ও আলাস্কান নেটিভদের মধ্যে প্রতি সাত জনের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো বর্ণ ও জাতিগত গোষ্ঠীর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হারের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওবেসিটি ও অতিরিক্ত ওজনের সমস্যাও নেটিভ আমেরিকান ও আলাস্কান নেটিভদের মধ্যে বেশি। দুটি অবস্থাই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ-প্রবণতায় অধিক ভূমিকা রেখেছে।
নারী পুরুষের গড় আয়ুর মধ্যে ব্যবধানও বেড়েছে এ সময়ে। আমেরিকান নারীরা এখন আমেরিকান পুরুষের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ বছর বেশি, অর্থ্যাৎ ৭৯.১ বছর গড় আয়ু লাভ করতে পারেন, যা আমেরিকান পুরুষদের ক্ষেত্রে ৭৩.২ বছর। ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আমেরিকান নারী পুরুষের গড় আয়ুর ব্যবধান ছিল ৫ বছর।
Posted ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh