বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
৩০ কোটি বিদেশির কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গ্যালাপ ওয়ার্ল্ড পোল এর “উন্মুক্ত সীমান্তের বিশ্ব” নামে সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের পক্ষে সম্ভব হলে তারা নিজ দেশ ত্যাগ করে অধিকতর নিরাপদ দেশে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। এর অর্থ হচ্ছে, এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মানুষ স্থায়ীভাবে অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করতে আগ্রহী। জরিপের আরও লক্ষণীয় দিক হলো এ ধরনের বিদেশির সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে অভিবাসী হতে ইচ্ছুক বিদেশিদের ২১ শতাংশ অর্থ্যাৎ ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চান। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিদেশিদের পরবর্তী আকর্ষণীয় দেশগুলো হচ্ছে কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, অষ্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য। এমনকি সৌদি আরবও অনেকের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য বলে জরিপে প্রকাশ পেয়েছে।
গত কয়েক দশক যাবত যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার পেছনে বৈধ ও অবৈধ ইমিগ্রেশনের অবদান রয়েছে। সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ এর এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী জনসংখ্যা বর্তমানে ৫ কোটি। শিথিল সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি জনসংখ্যা ১.৬ মিলিয়ন বা ১৬ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে, যাদের অধিকাংশই সেন্ট্রাল ও সাউথ আমেরিকান দেশগুলো থেকে আগত, যেখানে দারিদ্র সীমাহীন। এই গবেষনায় দেখানো হয়েছে যে ২০৬০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮ কোটি জনসংখ্যা যোগ হয়ে দেশের জনসংখ্যা ৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
জনসংখ্যার এই বৃদ্ধিকে নীতিনির্ধারকরা টেকসই বৃদ্ধি বলে মেনে নিতে পারছেন না। যুক্তরাষ্ট্রে অনিয়ন্ত্রিত ইমিগ্রেশনের ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে তাদের ধারণা। এতে শুধু দেশের অর্থনীতি হুমকির মধ্যে পড়বে না, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বড় ধরনের হুমকির সৃষ্টি হবে এবং পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। লক্ষ লক্ষ অর্থনৈতিক অভিবাসী যদি কাজের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, তাহলে শ্রমবাজারে সৃষ্ট প্রতিযোগিতায় মজুরি হ্রাস পাবে, সিটিগুলো ঘিঞ্জি ও রাস্তায় জটের সৃষ্টি পাবে, যার পরিণতিতে পরিবেশ বিপর্যয় অনিবার্য। সবচেয়ে আশঙ্কার দিকটি দাঁড়াবে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, যা হেটক্রাইম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
বাইডেনের দেড় বছরে ১০ লাখ বিদেশির যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ
বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে লক্ষ লক্ষ অবৈধ বিদেীশদের অবাধে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়ার। এটি আর কোনো রাখঢাক করার ব্যাপার নয় যে বাইডেন প্রশাসনের দেড় বছরে আমেরিকান ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল সীমান্ত সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে তার সমালোচকরা এটিকে নজীরবিহীন সীমান্ত সঙ্কট বলে বর্ণনা করছেন। গত এপ্রিল ও মে মাসে সীমান্ত পেরিয়ে যথাক্রমে ২৩৪,০৮৮ ও ২৩৯,৪১৬ জন বিদেশি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে বলে রিপোর্ট দিয়েছে ইউএস কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি)। ইমিগ্রেশন আইন লংঘনকারীদের সিবিপি তালিকাভূক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। মে মাস পর্যন্ত এ বছর মোট ১,০৪৯,৫৩২ বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। এ সংখ্যার মধ্যে ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে তাদের সংখ্যা এবং যাদের বৈধ অবস্থান বাতিল করা হয়েছে সেই সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বাইডেন প্রশাসন যখন থেকে ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্ট করার নীতি শিথিল করেছে তখন থেকে প্রায় সকল অবৈধ বিদেশি ডিপোর্টেশনের ভীতিমুক্ত থেকে অবাধে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিচরণ করছে। অবৈধ ইমিগ্রেশনের বিরোধীরা বলছেন যে এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইমিগ্রান্ট সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে। সবার আশঙ্কা অবৈধ ইমিগ্রান্টদের স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করার প্রবণতা নিকট ভবিষ্যতে হ্রাস পাবে না। তারা গ্রীস্মেও মাসগুলোতে ইমিগ্রান্ট অনুপ্রবেশে সীমান্তে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ভয় করছেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন অবৈধ ইমিগ্রান্টদের দ্রুত দেশ থেকে বিতাড়ণের কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে টাইটেল ৪২ এর কার্যকারিতার অবসান চাইলেও ফেডারেল বিচারকরা এ বিধির আওতায় খুব স্বল্পসংখ্যক অবৈধ ইমিগ্রান্ট দেশ থেকে বহিস্কারের আদেশ দিতে পেরেছেন। বিচারকদের আদেশ ছাড়া কাস্টমস এন্ড বর্ডার প্রটেকশন ইমিগ্রান্টদের বহিস্কার করতে পারে না। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বলছে যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যদি শেষপর্যন্ত টাইটেল ৪২ এর কার্যকারিতা রহিত করতে সফল হন, তাহলে প্রতিমাসে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। অর্থ্যাৎ প্রতিমাসে গড় অনুপ্রবেশ ৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে, যা সিবিপির পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
Posted ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh