আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু | বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে “ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট অফ ২০২১” উত্থাপন করা হয়েছে। এই বিলে অনেক সংশোধনী প্রস্তবের মধ্যে একটি ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী প্রস্তাব অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন কোড থেকে “এলিয়েন” শব্দটির স্থলে “ননসিটিজেন” শব্দ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব। ইমিগ্রেশন অধিকার প্রবক্তারা এই প্রস্তাবে সন্তুষ্ট হয়ে প্রস্তাব উত্থাপনকারীদের প্রশংসা করেছেন। কারণ “এলিয়েন” শব্দটি সাধারণভাবে ‘মর্যাদাহানিকর’ ও ‘অবমাননাকর’ বলে ব্যবহৃত ও বিবেচিত হয়।
ইংরেজি ভাষায় “এলিয়েন” শব্দটি ভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণকারী এবং যে দেশে তিনি এখন বসবাস করছেন, সেই নাগরিক নন এমন কাউকে বোঝায়। এছাড়া “এলিয়েন” শব্দের আরেকটি অর্থ রয়েছে এবং তা হচ্ছে, ‘অন্য কোনো গ্রহ অথবা অজ্ঞাত কোনো স্থান থেকে পৃথিবী নামে যে গ্রহে আমরা বসবাস করছি, সেখানে আগমণকারী জীব। ইংরেজি শব্দের অর্থ বা ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন হলিউডের বহু সায়েন্স ফিকশন মুভিতে “এলিয়েন” হিসেবে মানুষের আকৃতি বিশিষ্ট, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিন্ন জীবের মুখাকৃতি সম্পন্ন অস্তিত্বের চরিত্রায়নের ফলে “এলিয়েন” শব্দটির অর্থ আর শুধুমাত্র ‘ভিনদেশী’র মধ্যে সীমিত নেই, বরং বহুলাংশে এই শব্দ ভিন্ন গ্রহ থেকে আগত জীবের বর্ণনার জন্যই প্রযোজ্য। ত্রিশের দশকে প্রকাশিত সায়েন্স ফিকশন গল্পে ভিন্ন গ্রহ থেকে আগত জীব ও যানের কথা আসতে থাকে এবং পরবর্তী সময়ে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। ‘এলিয়েন’ শব্দটির সঙ্গে মানুষ আরো বেশি পরিচিত হয়ে ওঠতে থাকে পঞ্চাশের দশক থেকে “ফরবিডেন প্ল্যানেট”, “দ্য থিং ফ্রম অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড”, ইত্যাদি মুভি মুক্তি পাওয়ার সময় থেকে।
আমেরিকার ইমিগ্রেশন কোডে বৈধ ইমিগ্রান্টদের ক্ষেত্রে, এমনকি যারা গ্রীনকাডধারী অথবা নাগরিকত্বও হাসিল করেছেন, তাদের সনাক্তকরণের অনিবার্য অংশ হিসেবে রয়েছে “এলিয়েন নম্বর”। গ্রীনকার্ড, ন্যাচারালাইজেশন সার্টিফিকেটেও উল্লেখ থাকে নয় ডিজিটের “এলিয়েন নম্বর”। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় এই শব্দটি প্রবেশ করেছে একশ’ বছরেরও আগে। ১৮৮০’র দশকে যখন যুক্তরাষ্ট্র চাইনিজ, ইহুদি, ইটালিয়ান ইমিগ্রান্টদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করছিল, তখন “এলিয়েন” শব্দটির প্রয়োগ শুরু করে। ইমিগ্রান্টদের এ ধরনের অমর্যাদাকর একটি শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আপত্তি উঠেছে। কিন্তু শব্দটি বাতিল করা হয়নি। বাইডেন প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছে ইমিগ্রেশন কোডে “এলিয়েন” শব্দটির স্থলে “ননসিটিজেন” এবং “ইলিগ্যাল এলিয়েন” এর স্থলে “আনডকুমেন্টেড ননসিটিজেন” অথবা “আনডকুমেন্টেড ইনডিভিজুয়্যাল” শব্দ প্রতিস্থাপনের।
ইমিগ্রান্টদের সনাক্ত করার জন্য “এলিয়েন” শব্দটি আপত্তিকর, অপমানকর ও বর্ণবাদী হিসেবে বর্ণনা করা হলেও এই শব্দ প্রয়োগের বিরুদ্ধে জোরালো উদ্যোগ নেয়া হয়নি দীর্ঘদিন। ১৯৭০ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) এর আইন বিভাগের এক ল্যাটিনো ছাত্র তার গবেষণা নিবন্ধে উল্লেখ করেছিলেন যে তাদেরকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত “ওয়েটব্যাক” (বিঃনধপশ) শব্দের পরিবর্তে “ইলিগ্যাল এলিয়েন” শব্দটি বরং কম বর্ণবাদী। আমেরিকানরা টেক্সাস সীমান্ত বরাবর রিও গ্রান্ডে নদী পেরিয়ে জামাকাপড় ভেজা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারীদের ক্ষেত্রে ‘গালি’ হিসেবে ব্যবহার করতো। ওই বছর ল্যাটিনো ছাত্রদের একটি দল লস এঞ্জেলেস টাইমসকে অনুরোধ জানায় “ওয়েটব্যাক” এর পরিবর্তে “ইলিগ্যাল এলিয়েন” শব্দ ব্যবহার করার জন্য। এই কৌশল কাজে লাগে এবং ১৯৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট রিগ্যান অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বৈধ করতে অ্যামনেষ্টি ঘোষণা করার পর “ইলিগ্যাল এলিয়েন” শব্দটির সাধারণ প্রয়োগ হ্রাস পেতে থাকে এবং “ইলিগ্যাল ইমিগ্রান্ট” শব্দ ব্যবহৃত হতে থাকে। তা সত্ত্বেও ইমিগ্রেশন কোড হিসেবে বিদেশিদের সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে “এলিয়েন” শব্দটিই রয়ে গেছে। সত্তর ও আশির দশক জুড়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রবল আন্দোলন ছিল যে, কোন মানুষই অবৈধ হতে পারে না।
Posted ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh