বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
টেক্সাসের ম্যাকলিনের কাছে রিও গ্রান্ডে নদী পার হয়ে অথবা টেক্সাসের আরেকটি ছোট সীমান্ত শহর মিশনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী বিদেশিদের বর্ডার পেট্টল এজেন্টদের হাতে তুলে দিতে সহায়তা করছে স্থানীয় পুলিশ। হিডাগলো কাউন্টি শেরিফের অফিস বা টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট পাবলিক সেফটির পুলিশ সদস্যরাও অনুপ্রবেশকারী বিদেশি ধরতে বর্ডার পেট্টল এজেন্টদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রবেশকারী বিদেশিদের ঠেকাতে বা গ্রেফতার করতে স্থানীয়, স্টেট ও ফেডারেল নিরাপত্তার রক্ষীরা একযোগে টহল দিচ্ছে অথবা সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা কার্যকর করার ক্ষেত্রে স্থানীয় ও স্টেট পুলিশ সীমান্তে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে আইনগত বিতর্ক রয়েছে। কারণ ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় ফেডারেল দায়দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। স্থানীয় ও স্টেট পুলিশের প্রধান দায়িত্ব সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা এবং মাদক পাচার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু বর্তমানে সীমান্ত দিয়ে মাইগ্রেন্ট ও পাচারকারী অনুপ্রবেশ হার অনেক বেশি এবং তা থেমে নেই।
স্থানীয় পুলিশ ও ফেডারেল বর্ডার এজেন্টদের একত্রে কাজ করা সম্পর্কে ৩১ কাউন্টি টেক্সাস/সাউথ-ওয়েষ্টার্ন বর্ডার শেরিফ কোয়ালিশনের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ক্লিন্ট ম্যাকডোনাল্ড সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে বলেছেন, ‘তারা সবসময় একযোগে কাজ করে থাকে। তাছাড়া এখন পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, যখন কারও পক্ষে হাত গুটিয়ে রাখার উপায় নেই।’ গত মার্চ মাসে ফেডারেল বর্ডার এজেন্টরা ১৭২,৩৩১ অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে, যা ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ১০১,০২৮। গত মার্চে আটকের সংখ্যা ২০১৯ এর মার্চে আটককৃতের সংখ্যার চেয়ে ৭০ হাজার অধিক। তাছাড়া অভিভাবক ছাড়া স্বল্পবয়স্ক অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা গত বিশ বছরের মধ্যে যে কোনো সময়ের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছে।
ট্রেক্সাসের রিও গ্রান্ডে ভ্যালিতে অনুপ্রবেশকারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫০ বা ১০০ জনের গ্রুপে চলে আসে এবং সীমান্ত রক্ষীদের কাছে ধরা দেয়। তারা আশা করে যে বর্ডার এজেন্টরা যথাযথভাবে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নিয়ে কাজ করবে এবং কিছুদিন আটক রাখার পর ইমিগ্রেশন আদালতে শুনানির জন্য তলব করার পূর্ব পর্যন্ত তাদেরকে ছেড়ে দেবে। বর্ডার এজেন্টরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আটক করার পর যখন ডিটেনশন সেন্টারে পাঠায় তখন শেরিফের অধীনস্থা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা অনুপ্রবেশকারীরা কারও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির উপর দিয়ে সন্দেহভাজন লোকদের গতিবিধির জন্য অভিযোগ করলে শেরিফের পুলিশরা এসে যাদেরকে পাকড়াও করে তাদের অধিকাংশ বিদেশি ও আশ্রয়প্রার্থী; অন্যান্য কিছু থাকে যারা মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক পাচারকারী। বর্ডার শেরিফরা ইমিগ্রেশন অফিসারদের ভূমিকা পালন করতে না চাইলেও তারা প্রকারান্তরে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের আটক করার মাধ্যমে বর্ডার পেট্টল এজেন্টদেরকেই সহায়তা করছে। কারণ স্থানীয় পুলিশ সদস্য সংখ্যার চেয়ে সীমান্ত এলাকায় ফেডারেল ইমিগ্রেশন অফিসারের সংখ্যা অতি নগন্য।
পেন স্টেট ল এর প্রফেসর এবং সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন রাইটস ক্লিনিকের ডাইরেক্টর শোভা শিবপ্রসাদ ওয়াদিয়া বলেছেন, আমেরিকান সংবিধান অনুযায়ী ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা কার্যকর করা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ফেডারেল এজেন্টদের দায়িত্ব। স্থানীয় কমিউনিটি এগ্রিমেন্ট অথবা ফেডারেল সরকারের সঙ্গে চুক্তির অধীনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর্তব্য আরোপিত হয় স্থানীয় এজেন্সিগুলোর উপর এবং অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী বিদেশিদের সম্পর্কে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাাদের অবহিত করা, এমনকি সীমান্তের অপর পাশে অন্য দেশের ভূখন্ডে যদি এমন আভাস পাওয়া যায় যে কিছু লোক সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য সুযোগের অপেক্ষা করছে, সে সম্পর্কে ফেডারেল এজেন্টদের সতর্ক করা তাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অতএব তারা ইমিগ্রেশন আইন কার্যকর করার ক্ষুদ্র একটি অংশে সহায়তা করতে পারে। যেহেতু তাদেরকে ইমিগ্রেশন আইনের জটিল দিকগুলো জানার বা ইমিগ্রান্টদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না, সেজন্য তারা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্তপক্ষকে জানানোই সুবিধাজনক বলে মনে করে। প্রফেসর শোভা ওয়াদিয়া আরও বলেন, স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, যদিও তা পুরোপুরি ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার।
তবে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশকে জড়িত করার বড় ঝুঁকি হচ্ছে তারা ইমিগ্রান্টদের স্থানীয় কমিউনিটিতে অবস্থানের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় ইমিগ্রান্ট কর্তৃক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে অথবা ইমিগ্রান্টদের আটক করার জন্য ফেডারেল ইমিগ্রেশন এজেন্টরা স্থানীয় কমিউনিটিতে হানা দিয়ে অহেতুক একটি ভীতির পরিবেশ গড়ে তুলছে। বর্ণবাদী আবহ সৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে।
Posted ৪:৫৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh