| বৃহস্পতিবার, ০৫ মে ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন জটিলতা বেডেই চলেছে এবং এ সমস্যার যে আশু সমাধান হবে সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। রিপাবলিকানরা এ সমস্যাকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টার জন্য দায়ী করছে ডেমোক্রেটদের এবং এ ব্যাপারে ডেমোক্রেটদের যেকোনো ত্রুটি ও ফঁকফোকরকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছে, যাতে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ইমিগ্রেশন ইস্যুকে বড় ধরনের নির্বাচনী ইস্যুতে পরিণত করা যায়, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নির্বাচনী অভিযানেও করেছিলেন। তারা সর্বশেষ পরিসংখ্যান দিয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর এক বছরেই ১০ লাখের অধিক বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করেছে এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ ইমিগ্রান্ট সংখ্যা বেড়ে দেড় কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এবং অবৈধ ইমিগ্রান্টদের জন্য এক বছরে আমেরিকান করদাতাদের ব্যয় হয়েছে আনুমানিক ৯.৪ বিলিয়ন ডলার। গত প্রায় দেড় দশক যাবত অবৈধ ইমিগ্রান্টের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ উল্লেখ করা হলেও রক্ষণশীল সংস্থাগুলো এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলছেন যে সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে অবৈধ ইমিগ্রান্ট সংখ্যা স্থির থাকে কীভাবে? কারণ প্রতিনিয়ত সীমান্ত অতিক্রমকারী বিদেশির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিপোর্টেশনের তুলনায় অনুপ্রবেশকারী সংখ্যা সবসময় অধিক।
ফেডারেশন অফ আমেরিকান ইমিগ্রেশন রিফম- এফএআইআর এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের পেছনে রাষ্ট্রের ব্যয়ের বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে যে অবৈধ ইমিগ্রান্টরা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ১৫২.৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক বোঝা চাপিয়েছে এবং এজন তারা কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও দায়ী করেছে স্বল্প বেতনে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের কাজে নিয়োগ করার জন্য এবং এজন্য বাইডেন প্রশাসনের ইমিগ্রেশন নীতিকে দায়ী করে আরও বলেছে যে এর ফলে অসংখ্য বেকার আমেরিকান কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হয়ে বেকার জীবন কাটাচ্ছে। তারা ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন নীতির প্রশংসা করে বলেছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সীমান্ত থেকেই ইমিগ্রান্টদের দ্রুত বহিস্কার করার নীতি গ্রহণ করেছিলেন দু:খজনকভাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করার সেই নীতি থেকে সরে আসা হয়েছে। ফলে সামগ্রিক ইমিগ্রেশন নীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সংস্থাটি আরও বলছে যে বাইডেন প্রশাসন ইমিগ্রেশন এন্ড কাষ্টমস এনফোর্সমেন্ট এর কর্তব্য পালন বিলোপ করেছে. যা প্রকারান্তরে অবৈধ ইমিগ্রেশনকে উৎসাহিত করেছে এবং ইমিগ্রেশন নীতি যে ঢিমে-তেতালা গতিতে চলছে তা ইমিগ্রান্টদের অ্যামনেস্টি দেওয়ার নামান্তর এবং জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
এফএআইআর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাইডেন আমলের এক বছরে বন্যার পানির মত অবৈধ বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছে, যার মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশি। শুধু তাই নয় যেসব অবৈধ ইমিগ্রান্টের ওপর ডিপোর্টেশন আদেশ রয়েছে তারা তা লংঘন করলে যে জরিমানা ধার্য করার বিধান ছিল তা বাতিল করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে এবং ইমিগ্রান্টদের অবৈধ অবস্থানকে কার্যত আইনসম্মত করেছে বলে রক্ষণশীলরা অভিযোগ তুলছে। ২০১৭ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নির্বাহী আদেশে ডিপোর্টেশন আদেশ লঙ্ঘনকারীকে প্রথম দিনেই ৩ হাজার ডলার এবং পরবর্তী প্রতিদিনের জন্যে ৫০০ ডলার করে জরিমানার বিধি করেছিলেন। সে অনুযায়ী, ২০১৯ সালে আইস কর্তৃক গ্রেফতার হওয়া ডিপোর্টেশন আদেশ প্রাপ্ত একজন আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টের জরিমানা হয়েছিল ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭৭ ডলার। যদিও জরিমানার ১১ শতাংশও আদায় করা সম্ভব হয়নি। কারণ, আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টরা এত বিপুল পরিমাণের অর্থ পাবে কোথায়? কিন্তু এ জরিমানা সার্বিকভাবে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ ছিল। বর্তমান প্রশাসন তা বাতিল করায় অবৈধ ইমিগ্রান্টরা কোনো ধরনের চাপ অনুভব করে না এবং তাদের মত যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চায় তাদেরকে উৎসাহিত করে। রক্ষণশীলরা এ অবস্থার অবসান চায়, পক্ষান্তরে ডেমোক্রেটরা ইমিগ্রেশন নীতির ব্যাপক সংস্কার আনতে সচেষ্ট। ইমিগ্রেশন সমস্যা যত দ্রুত নিরসন হয় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ততই কল্যাণকর।
Posted ৭:২১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ মে ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh