মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১
বাইডেন প্রশাসন ইমিগ্র্যান্ট চিহ্নিতকরণ শব্দ হিসেবে ‘এলিয়েন’ শব্দ বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ প্রশাসন মনে করছে ইলিগ্যাল এলিয়েন শব্দটি ব্যবহার করা মানে হচ্ছে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি একটি অসম্মানজনক আচরণ। বাইডেন প্রশাসন গত সোমবার ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইস এবং কাস্টম এন্ড বর্ডার প্রটেকশন বা সিবিপিকে নির্দেশ দিয়েছে এখন থেকে আইস ও সিবিপি তাদের অপারেশনের ক্ষেত্রে ‘ইলিগ্যাল এলিয়েন’ শব্দটি আর ব্যবহার করতে পারবে না। ট্রাম্প প্রশাসন এলিয়েন শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করত আইসের এনডোর্সমেন্টের ক্ষেত্রে। ‘এলিয়েন’ শব্দটি অর্থ হচ্ছে ভিনগ্রহ থেকে আগত প্রাণী বিশেষ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রান্টদের ক্ষেত্রে এলিয়েন শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে। যখন কোন ব্যক্তি কোন কোম্পানিতে চাকুরীর আবেদন করে সেখানে ফর্মে লেখা থাকে আপনি কি যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেন? যদি না হয়ে থাকেন তাহলে এলিয়েন নাম্বার কত? চাকুরীর কোন ফর্মে এখন থেকে ‘এলিয়েন’ শব্দটি আর থাকবে না। এখন থেকে এলিয়েন শব্দটির পরিবর্তে বলা হবে ননসিটিজেন বা মাইগ্র্যান্ট। ইলিগ্যাল শব্দটিকে বলা হবে আনডকুমেন্টেড, অ্যাসিমেলেশন (আত্মীকরন) শব্দটিকে বলা হবে এন্ট্রিগ্রেশন বা অঙ্গীভূতকরণ। গত সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাইডেন প্রশাসন ‘আইস’ ও সিবিপিকে নির্দেশ দিয়েছে এখন থেকে ইলিগ্যাল এলিয়েন শব্দটি ব্যবহার না করতে। সংবাদ সূত্র থেকে জানা যায় ট্রাম্প প্রশাসন ইমিগ্র্যান্টদের ধরপাকড়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। যার ফলে ইমিগ্র্যান্টদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা তিরস্কার করে অসম্মানজনক এলিয়েন শব্দটি ব্যবহার করেছিল ব্যাপকহারে। বাইডেন প্রশাসন ইমিগ্র্যান্টদের মানবিক আচরণ ও সম্মান প্রদর্শন করে এলিয়েন শব্দটি বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
গত সোমবার বাইডেন প্রশাসন ‘এলিয়েন’ শব্দটি বাদ দেয়ার নির্দেশনা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে ফেডারেল ইমিগ্রেশন এবং আইসের কর্মকর্তাদের নিকট। মূলত নিদের্শনাটি পাঠানো হয়েছে আইস ও সিবিপি কর্মকর্তাদের নিকট। ফেডারেল সরকারের ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্টের দু’টি সংস্থা আইস ও সিবিপি কর্মকর্তাদের নিকট। ফেডারেল সরকারের ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্টের দু’টি সংস্থা আইস ও সিবিপি’র এসোসিয়েটেড লেবার ইউনিয়ন গত ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিল। বাইডেন প্রশাসন এলিয়েন শব্দটি বাদ দেয়ার বার্তায় বুঝানো হয়েছে লেবার ইউনিয়নকে তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে গত সোমবার কাস্টম এন্ড বর্ডার প্রটেকশনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিরয় মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রর ল’ এনফোর্সমেন্টের ক্ষেত্রে এলিয়েন শব্দটি বাদ দিয়ে আমরা একটি যুগপোযোগী দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। কাউকে গ্রেফতার করতে গেলে তার প্রতি সুন্দর আচরণ করেও গ্রেফতার করা যায়। তিনি বলেন, কাউকে গ্রেফতারের পর যখন আইস হেফাজতে রাখা হয় তখনও যাতে আটক ব্যক্তির প্রতি ভাল আচরণ করা হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ‘আইস’ এর এক্টিং ডাইরেক্টর টায়ি জনসন এ প্রসঙ্গে বলেন, বাইডেন প্রশাসন এলিয়েন শব্দটি বাদ দেয়ার যে নীতি অবলম্বন করেছে সেটা আইস ফিল্ড অফিস সহ সব কর্মচারীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে করে আইস এখন থেকে এনফোর্সমেন্ট করার সময় তাদের যোগাযোগের সাংকেতিক চিহ্ন হিসেবে এলিয়েন শব্দটি ব্যবহার না করে। কিছুদিন আগেও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও ফেডারেল জাজরাও এলিয়েন শব্দটি ব্যবহার করত। কারণ তখন সেটা ননসিটিজেনের অফিসিয়াল শব্দ ছিল ‘এলিয়েন’। এছাড়া পেট্রোল এজেন্ট ও আইস ঢালাওভাবে সোস্যাল মিডিয়াতে তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবহার করত। এরপর যারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকালে গ্রেফতার হত তাদের ক্ষেত্রেও ইলিগ্যাল ‘এলিয়েন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ইমিগ্র্যান্ট এডভোকেসী গ্রুপগুলো বর্তমান সময়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তার প্রশাসনের উপর বেশ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের ইলিগ্যাল এলিয়েন শব্দটি ব্যবহার নিষেধ করার এজেন্সীকেও ইমিগ্রেশন এডভোকেসি গ্রুপগুলো স্বাগত জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই ফেডারেল ইমিগ্রেশন ল’ এর সিটিজেনশীপ বিল থেকে এলিয়েন শব্দটি বাদ দেয়ার একটি প্রস্তাব কংগ্রেসে পাঠিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছিল এলিয়েন শব্দটি বাদ দিয়ে ননসিটিজেন শব্দটি ব্যবহার করার কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে যে একটা ‘কান্ট্রি অফ ইমিগ্র্যান্ট’ সেটা স্বীকার করে নেয়া। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিগুলোকে প্রচন্ডভাবে রাজনৈতিককরণ করে রিপাবলিকানদের চাপে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অনেক হার্ড লাইন থেকে সরে এসেছেন এবং অনেকটা ওবামা প্রশাসনের নীতিতে ফেরার চেষ্টা করছেন। এছাড়া কিছু লিবারেল ডেমক্র্যাট আইসকে বিলুপ্ত করে দেয়ার দাবি উঠিয়েছেন। উল্লেখ্য সাপ্তাহিক বাংলাদেশে গত মাসে ‘এলিয়েন’ শব্দটি বাদ দেয়া হচ্ছে মর্মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
Posted ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh