বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
নিউইয়র্ক সিটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এমন ছয় শতাধিক ব্যক্তির মৃতদেহ এখনো ফ্রিজার ট্রাকগুলোতে পড়ে আছে বলে ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নালের এক রিপোর্টে জানা গেছে। ট্রাকগুলোতে সাময়িক মর্গ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সিটি অফিস অফ মেডিক্যাল এক্সামিনারের অফিস থেকে জানানো হয়েছে যে প্রায় ৬৫০টি মৃতদেহ ব্রুকলিনের ওয়াটারফ্রন্টের কাছে এই মর্গে রাখা হয়েছে। এর কারণ হলো অনেক মৃতের পরিবার লাশগুলো দাবী করেনি, আবার অনেকের পরিবারের পক্ষে মৃতের যথাযথ অন্তেষ্টিক্রিয়ার সামর্থ না থাকার কারণে তারা লাশগুলো নিয়ে যায়নি। মেডিকেল এক্সামিনার অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, ২৩০ টি মৃতের আত্মীয়স্বজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু আর্থিক অসামর্থ অনেক পরিবারকে লাশ নেয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, গত আট মাস যাবত যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস মহামারীর কবলে পড়েছে এবং এক কোটি বিশ লাখের বেশি রোগী সনাক্ত হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটিতে মহামারীতে ইতোমধ্যে প্রায় ২৫ হাজার লোক মারা গেছে, যার ২.৫ শতাংশ মারা গেছে গত সপ্তাহে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর। সিটি ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ জানিয়েছে যে এখন প্রতিদিন পাঁচশ’র বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, যা গত এপ্রিল মাসে গড়ে দৈনিক ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ১২শ’র বেশি।
সিটি ডিপার্টমেন্ট হেলথ এন্ড মেন্টাল হাইজিন এবং সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনেশন এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী মহামারীর শুরুর দিকে সিটির হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীর মধ্যে ৩০ শতাংশ মারা গেছে। রেফ্রিজারেটেড মর্গ ট্রাকগুলো তখন সিটিতে মৃতদেহ নিয়ে যেভাবে চলাচল করেছে তাতে সিটিবাসীর মাঝে অজানা আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল, যা এখনো অনেকের পক্ষে কাটিয়ে উঠা সম্ভ হয়নি। মর্গ ট্রাকগুলোই যেন তখন সিটির প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। এপ্রিল ও মে মাস ছিল ভয়াবহ। সিটির হার্ট আইল্যাণ্ডে একটি কবরের চিত্র ছিল অত্যন্ত করুণ, যেখানে বিগত দেড়শ বছর যাবত সাধারণত অজ্ঞাত বা দাবীদারহীন লাশ কবরস্থ করা হচ্ছে। সেখানে নিয়োজিত কর্মীরা গভীর গর্ত খুড়ে লাশগুলো গণকবরে যেনতেন প্রকারে মাটিচাপা দিয়েছে। এ ধরনের ছবি প্রচার মাধ্যমে দেখানোর পর অনেকে উপলব্ধি করেছে যে, নিউইয়র্কে মৃত্যু এক প্রান্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সিটি কর্তৃপক্ষ যে অধিক হারে স্বাস্থ্যখাতে ট্যাক্স নিয়ে থাকে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু সিটির কর্মকর্তারা যুক্তি দেখিয়েছেন যে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করার স্বার্থে তাদেরকে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করেছে।
মেয়র বিল ব্লাজিও গত এপ্রিলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন যে, তারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেন মৃতের কোন দাবীদারের। এটা শুধু কোভিড ১৯ এর বেলায় নয়, সকল অজ্ঞাত মৃতের ক্ষেত্রে তা সমভাবে প্রযোজ্য। তার মতে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহু লোক মারা যাচ্ছে, যাদের মধ্যে অনেক লাশ কেউ দাবী করছে না। সেকারণে হার্ট আইল্যাণ্ডে এমন ঘটনা ঘটছে।
অক্টোবর মাস পর্যন্ত হার্ট আইল্যাণ্ডের কবরস্থানে দুই হাজারের অধিক সংখ্যক মৃতকে কবরস্থ করা হয়েছে, যা ২০১৯ এ কবরস্থ লোকের দ্বিগুণের অধিক। ২০১৯ সালে সেখানে ৮৪৬ জনকে দাফন করা হয়েছে। সিটির পক্ষ থেকে মৃতের সৎকারের জন্য ৯০০ ডলারের সহায়তা গত মে মাসে ১,৭০০ ডলারে উন্নীত করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। নিউইয়র্ক স্টেট ফিউনারেল ডাইরেক্টরস এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী একটি লাশ প্রচলিত উপায়ে দাফন করতে প্রায় ৯,০০০ ডলার ব্যয় হয়। অপরদিকে মৃতকে দাহ করানোর জন্য ব্যয় হয় প্রায় ৬,৫০০ ডলার।
গত সপ্তাহে ব্রুকলিনের একটি ফিউনারেল হোম বন্ধ করা হয়েছে সেখানে রাখা ফ্রিজার ট্রাকে কয়েক ডজন মৃতদেহে পচন শুরু হয়েছিল বলে। কারণ তাদের মরচুয়ারিতে লাশ রাখার আর স্থান ছিল না। স্টেট হেলথ কমিশনার ফিউনারেল ডাইরেক্টরের লাইসেন্স বাতিল করেছেন এবং এন্্রু টি ক্লেকলে’র মরচ্যুয়ারি ব্যবসার রেজিষ্ট্রেশনও বাতিল করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভুতভাবে ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগে।
Posted ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh