বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রে সার্বিকভাবে করোনা মহামারী কাটিয়ে উঠেছে, কিন্তু নিউইয়র্ক সিটিতে করোনাকালে যারা কর্মচ্যুত হয়েছিল, তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত পৌনে দুই লাখের বেশি নিউইয়র্কার তাদের চাকুরি ফিরে না পেয়ে বেকার জীবন কাটাচ্ছে অথবা খন্ডকালীন কোনো কাজ করার মাধ্যমে কোনোমতে দিন গুজরান করছে। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বড় বড় সিটি জরুরী অবস্থাকালীন চাকুরিচ্যুত লোকজনের পুন:কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যে হারে করেছে নিউইয়র্ক সিটির ক্ষেত্রে তা মন্থর। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মহামারীর অন্ধকার দিনগুলো কেটে গেছে, মানুষ মুখের ওপর থেকে মাস্ক খুলে ফেলেছে, যানবাহনেও এখন আর মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা নেই, টুরিজম স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে এসেছে, মিডটাউন ম্যানহাটানে রেস্টুরেন্টগুলো লাইন ধরে খাবার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। লোকজন অনুভব করছে যে তারা ২০১৯ এর অবস্থায় ফিরে এসেছে।
কিন্তু উপরকাঠামোর ভেতরেই যে সমস্যা তা অনেকেরই দৃষ্টির বাইরে রয়ে গেছে এবং তা হলো যারা মহামারীতে বেকার হয়েছিলেন তাদের সকলের চাকুরি ফিরে না পাওয়া। নিয়োগকর্তারা এখনো চেষ্টা করছেন যথাসম্ভব কম জনশক্তি কাজে লাগিয়ে তাদের মুনাফার পরিমাণ স্থির রাখতে অথবা মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানেই, বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট, পরিচ্ছন্নতার কাজের মতো শ্রমঘন কাজে যারা কাজ করছেন তাদের ওপর কাজের চাপ বেড়েছে। দু’দন্ড বিশ্রাম নেওয়ার ফুরসত পাচ্ছেন না তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যেকোনো সিটির চেয়ে নিউইয়র্কে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটক সমাবেশ ঘটে অনেক বেশি। পর্যটকদের সেবার সঙ্গে অনেক কাজের সম্পর্ক এবং পর্যটন সেবার অধিকাংশই বেসরকারি খাতে পরিচালিত হয়।
এসব ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে অনলাইনে কাজ করার সুযোগ না থাকা সত্বেও নিয়োগকর্তারা তাদের সাবেক কর্মীদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো তাগিদ অনুভব করছে না। এর ফলে কাজ ফিরে না পাওয়া লোকজনের যে দুর্ভোগ তা সীমাহীন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর মার্চ মাস থেকে ফেডারেল সরকার কর্মচ্যুত লোকদের যে সাময়িক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে তা তাদের কল্যাণে আসলেও এর বিপরীত চিত্র হচ্ছে, নিউইয়র্ক সিটিতে বাড়ি ভাড়া অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার বাড়ি ভাড়া সহায়তা প্রদান করলেও সেটিও ছিল সাময়িক স্বস্তি। যারা কাজ ফিরে পেয়েছে তারা হয়তো সংকট কাটিয়ে ওঠতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু যারা কাজ ফিরে পায়নি তারা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
পাবলিক পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর অ্যান আরবান ফিউচার এর এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর জেনাথন বাওয়েলস বলেছেন, এখানে মূল ক্ষতিটা হচ্ছে যে অনেক শিল্প রয়েছে, যাদের জনশক্তির চাহিদা রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা পুরোপুরি সামলে ওঠতে পারেনি।” করোনায় নিউইয়র্ক সিটি সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ সিটি এবং সবকিছু মিলিয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে ওঠতেও অন্য সিটির চেয়ে বেশি সময় লেগেছে। ২০২০ সালের মার্চে ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার দুই মাসের মধ্যে সিটির দশ লাখ লোক চাকুরি হারিয়েছিল, এত অধিক সংখ্যকের কর্মচ্যুতি আর কোথাও ঘটেনি। চাকুরির বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে টেকনোলজি, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে, কিন্তু সে তুলনায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগে কর্মসংস্থান আগের পর্যায়ে ফিরে আসেনি। পাবলিক স্কুলগুলো ছাড়া উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে সিটির কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা শুরু হয়নি বলে সেসব স্থানেও জনশক্তি নিয়োগ পিছিয়ে রয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে ২০১৯ সালে সিটিতে পর্যটক এসেছিল ৬৬.৬ মিলিয়ন, চলতি বছর তা ২০১৯ এর সংখ্যার অনুপাতে ৮৫ শতাংশ পর্যটকের আগমণ ঘটবে বলে সম্ভাবনা রয়েছে বলে সিটির ট্যুরিজম এজেন্সি এনওয়াইসি এন্ড কোম্পানি আভাস দিযেছে। তবে তাদের হোটেলে অবস্থানের মেয়াদ এবং কেনাকাটার জন্য ব্যয় দুটোই আগের তুলনায় হ্রাস পাবে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে এজেন্সি।
Posted ১:২৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh