বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০১ এপ্রিল ২০২১
ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর ডাইরেক্টর ড. রোচেলে ওয়ালেনেস্কি বলেছেন যে আমেরিকানরা যদি সঠিকভাবে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন, তাহলে দেশজুড়ে সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ শুরুর আশংকা রয়েছে। গত ২৯ মার্চ হোয়াইট হাউজকে দেওয়া এক করোনা ব্রিফিং এ রোচেলে ওয়ালেনেস্কি বলেন, ‘বেশিরভাগ আমেরিকান মনে করছেন যে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের জয় হয়ে গেছে। তবে বিষয়টি মোটেও তা নয়। তারা যদি সঠিকভাবে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন ও মাস্ক ব্যবহার না করেন,তবে এবার সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ দেখা দিতে পারে’। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত আরেকটি বিস্ফোরণ অপেক্ষা করে রয়েছে, আমি খুবই ভীত ও উদ্বিগ্ন’। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্নস্থানে করোনা সংক্রমণের হার আবারো বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিসি প্রধান। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহের থেকে এর আগের সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যাও আবার ধীরে ধীরে বাড়ছে’। যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই আক্রান্তের লাগাম যদি এখনি টেনে না ধরা যায়, তবে খুব শীঘ্রই ইউরোপের দেশগুলোর মতো যুক্তরাষ্ট্রেও সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে যাবে বলে সতর্ক করেন সিডিসি প্রধান।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সম্প্রতি সিডিসি প্রধানের সাথে সুর মিলিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে ও পাবলিক হেলথ প্রণীত করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক বাসিন্দাদের টিকার আওতায় আনার জন্য পর্যাপ্ত টিকা দেশটির কাছে থাকবে বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন। একই সাথে সকল বাসিন্দারা যেনো স্বাচ্ছন্দ্যে ও সহজে টিকা নিতে পারেন, সেজন্য তাদের বসবাসের স্থান থেকে পাঁচ মাইলের মধ্যে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। জো বাইডেন বলেন, ‘সিংহভাগ প্রাপ্তবয়স্ক বাসিন্দাদের ভ্যাকসিন পেতে মে মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। আগামী এপ্রিলের ১৯ তারিখের মধ্যেই ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনী টিকা পেয়ে যাবেন’। এর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছিলেন, আগামী মে মাসের মধ্যে সকল প্রাপ্তবয়স্ক বাসিন্দারা করোনার টিকা নিতে পারবেন। তবে টিকাদান কার্যক্রম গতিশীল হওয়ায় এবং টিকার উৎপাদন বাড়ায় কাক্সিক্ষত সময়ের থেকে আগেই বাসিন্দারা টিকা পেতে যাচ্ছেন। জো বাইডেন আরো জানান, যেসব ফার্মেসি টিকাদান কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে, সেগুলোর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ১৭ হাজার ফার্মেসি রাষ্ট্রীয় ভ্যাকসিন দান কর্মসূচির সাথে যুক্ত রয়েছে, সেই সংখ্যা ৪০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে। তিনি যোগ করেন, চলতি সপ্তাহে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩ মিলিয়ন ডোজ টিকা বিভিন্ন ভ্যাকসিন দান কেন্দ্রতে বিতরণ ও প্রয়োগ করা হবে। এর মধ্যে বেশিরভাগ টিকাই নতুন যারা আবেদন করেছেন, তাদের জন্য বরাদ্দ থাকবে।
তবে ভ্যাকসিন দান কার্যক্রম গতিশীল হলেও এখনই করোনার বিরুদ্ধে নিজেদের জয়ী ভাবতে নারাজ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে জয় পাওয়া থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে রয়েছি’। একই সাথে রাজ্যের গভর্নর, মেয়র এবং স্থানীয় নেতৃস্থানীয়দের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘দয়া করে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করুন। এটিকে রাজনীতির অংশ করবেন না’। ইতোমধ্যে বেশকিছু অঙ্গরাজ্যে পাবলিক হেলথ প্রণীত করোনার স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু অঙ্গরাজ্যে মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ‘আমরা এতোদিন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। আমাদের আরো যুদ্ধ বাকি রয়েছে। এখন আমাদের আরো শক্তভাবে লড়তে হবে’।
ব্যাপক ভ্যাকসিন সেবা সত্বেও ভাইরাস সংক্রমণে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার এই ঘটনায় স্বাস্থ্যসেবীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবীরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসা এখনো সুদূরপরাহত। তাই তারা জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
গত সাত দিনে যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ৬৫ হাজার লোককে নতুন করে সংক্রমিত হতে দেখা গেছে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দিনের গড় সংক্রমণ আগের সাত দিনের চেয়ে ১০ হাজার বেশি। জানুয়ারি মাসে তৃতীয় দফা সংক্রমণ বৃদ্ধির চেয়ে এই সংখ্যা কম। কিন্তু নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে উৎকণ্ঠা কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে লাখ লাখ লোককে টিকা দেওয়া হয়েছে। তারপরও নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভানিয়া, মিশিগানসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক অঙ্গরাজ্যে গত সাত দিনে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। করোনাকে প্রাণঘাতী রোগ উল্লেখ করে ২৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মহামারি মোকাবিলায় তাদের কাজ এখনো অনেক বাকি।
করোনার রূপান্তরিত ভাইরাস দ্রুত সংক্রমণ ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যসেবীরা। যুক্তরাজ্যে শনাক্ত ‘বি.১.১.৭’ নামের রূপান্তরিত ভাইরাস ফ্লোরিডা ও নিউজার্সিতে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। তৃতীয় দফা সংক্রমণের ঢেউ কমার পর আমেরিকার সর্বত্র একধরনের ঢিলেমি দেখা যায়। বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে স্বাস্থ্য সতর্কতা উঠিয়ে দেওয়া পর্যন্ত হয়। আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজন বাইরে বেরিয়ে পড়েছে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমলে ভিড় বাড়ছে। লোকজন অসতর্কভাবে চলাফেরা করছে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের চিকিৎসক আবড়ার ক্যারেন বলেছেন, সবকিছু উন্মুক্ত করে দিলে লোকজন বেরিয়ে পড়বে। এতে সংক্রমণ বাড়বে। সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকার মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষকে এখন পর্যন্ত পূর্ণ ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ লোককে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আরও অন্তত দুই মাস এভাবে টিকা দেওয়া হলে পরিস্থিতি ভালোর দিকে যেতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যসেবীরা। ২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনো প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের কাছাকাছি মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর দেশ আমেরিকায় তিনটি পৃথক ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ফাইজার ও মডার্নার টিকা দুই ডোজ করে নেওয়ার পর আরও তিন থেকে চার সপ্তাহ অপেক্ষা করে চলাচলের জন্য লোকজনকে বলা হচ্ছে। জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের ভ্যাকসিন আমেরিকার সর্বত্র ব্যাপকভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলোয় দ্রুততার সঙ্গে টিকা সরবরাহ করা হলেও অবকাঠামো ও লোকসংকটের কারণে টিকাদান ব্যাহত হচ্ছে। আগামী ১ মের আগেই আমেরিকার সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে পূর্ণ ডোজের জন্য আগামী জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অল্পবয়সীদের জন্য টিকা গ্রহণ ইতিমধ্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের পরিচালক ডা. ক্রিস্টোফার মারই বলেছেন, যারা চিন্তা করছে টিকা গ্রহণের পর একটা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, তাদের আরেকবার ভেবে দেখতে হবে। প্রথম পর্যায়ের প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্তি ঘটতে যাচ্ছে বলে এখনই মনে করার কোনো কারণ নেই। ক্রিস্টোফার মারই বলেছেন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে একমাত্র সুসংবাদ হলো যুক্তরাষ্ট্রে তিনটি টিকাই করোনার সব ধরনের রূপান্তরের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
Posted ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ এপ্রিল ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh