ডা. এম জে শাহপলা | মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০২০
জ্বর, মাথা, ঘাড় ও চোখ লাল/ব্যথা এবং গলা ব্যথা, সর্দি বা কাশি, পেট ব্যথা, বমি, পেট খারাপ, পিঠে কোমরে ব্যথা, হাতে পায়ে মাংসপেশিতে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা, খাবারে ভয়াবহ অরুচি, নাকে গন্ধ না পাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি যে কোনো দুটো বা একটা সমস্যা থাকলে এ সময়ে ধরে নিতে হবে রোগী কোভিড-১৯ সাসপেক্টেড।
সারা বছর ঠাণ্ডা লেগে থাকা, যখন তখন শরীর ব্যথা হওয়া, বৃষ্টি হয়েছে বলে ঠাণ্ডা লাগা, ধুলার কারণে সর্দি হওয়া- এ ভেবে রোগকে অবহেলা করবেন না।
কোভিড-১৯ শরীরে ঢোকার পর সঙ্গে সঙ্গে রোগী মারাত্মক অসুস্থ হন না। সিম্পটম দেখা দেয়ার পর ৫-৬ দিন সময় পাওয়া যায়। শ্বাসকষ্ট হোক বা রক্ত জমাট বাঁধুক, তার আগে রোগী কয়েকদিন সময় পান, তখন কিছু সতর্কতা আর কিছু মেডিসিনে ভাইরাসের লোড কমাতে পারেন।
এই ৫-৬ দিনকে যারা অবহেলা করেছে বা পাত্তা দেননি, ভেবেছেন আমার করোনা হবে না, বা এগুলো সাধারণ জ্বর/পেট খারাপ, তারা পরবর্তীতে critically ill হয়ে গেছেন।
সিম্পটম দেখা দিলে টেস্ট করানোর চিন্তা বাদ দিন। করাতে পারলে অবশ্যই করাবেন। পজিটিভ পেলেই কি, নেগেটিভ পেলেই বা কি! বরং আনুষঙ্গিক অন্য টেস্টগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে করিয়ে ফেলতে পারেন। যেমন-
* Xray chest
* CBC & ESR
* CRP
* SGPT
* S creatinine
* S. Electrolytes
* S. Ferritin
* D dimer
* PT INR
* Urine R/M/E
* CT scan of chest (সম্ভব হলে)
এই টেস্টগুলোর মাধ্যমে আপনি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কিনা বা আক্রান্ত হলেও তা কতদূর ভয়াবহ, তা বোঝা যাবে। যদি জ্বরযুক্ত উপসর্গ থাকে, তবে NS1 for Dengue টেস্ট করিয়ে নেবেন।
যে কোনো উপসর্গ থাকুক, বা কোভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ থাকুক (উপসর্গযুক্ত ছাড়া), বাসায় থাকবেন। পরিচিত ডাক্তার বা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে ঘরে চিকিৎসা করবেন। ফেসবুকে ঘুরে বেড়ানো চিকিৎসা (মেডিসিন) নিজে নিজে চালাবেন না। আতঙ্কিত হবেন না ও হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করবেন না।
গরম পানিকে ছাড়বেন না। অল্প অল্প চুমুকে গরম পানি পান করবেন। এতে দুটো কাজ হবে। শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দিয়ে রক্ত ঘন বা কিডনি ইনসাল্টেড হবে না এবং গলায় ক্রমাগত গরম সেঁক এনশিওর করা যাবে।
সকালের রোদ কিছুটা গায়ে লাগাবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থার্মোমিটার দিয়ে তাপামাত্রা মেপে জ্বর পাবেন না। ৯৮-৯৯ ডিগ্রি ফা. থাকবে। জ্বর জ্বর বোধ হবে। মাঝে মাঝে দু’এক বেলা বা দু’এক দিন পরপর জ্বর থাকতে পারে। বিরতি দিয়ে জ্বর বারবার আসতে পারে। কারো কারো জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফা. এর ওপর যেতে পারে। ১০-১১ দিন ধরে হালকা জ্বর থেকে যেতে পারে।
পরিবারের অন্য সদস্যদের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রত্যেকের উপসর্গ আলাদা আলাদা হতে পারে। কারো জ্বর, কারো পেট খারাপ ইত্যাদি। এতজনের কোভিড-১৯ টেস্ট করানো হয়রানি ও ব্যয়সাধ্য। সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে বয়স্ক জন এবং উপসর্গ বেশি এমনজনের টেস্ট করাতে পারেন। তারা পজিটিভ হলে বাকিরাও পজিটিভ ধরে নেবেন।
পালস্ অক্সিমিটার কিনে বাসায় রাখতে পারেন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখার জন্য। গ্লুকোমিটারের চেয়েও ছোট একটা মেশিন এটা।
উপসর্গ দেখা দেয়ার পর বা পজিটিভ হওয়ার পর ৫-৬ দিন ধরে বাসায় বসে অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখবেন। স্যাচুরেশন ৯৩ শতাংশ কমে গেলে হসপিটালের কথা ভাববেন, তার আগে না।
সামান্য শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা (অক্সিজেন স্যাচুরেশন না কমলে) বাসায় বসেই করা সম্ভব। তাই ভয় পেয়ে হসপিটালে ঘুরে হয়রানী হতে যাবেন না।
অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে বাসায় রোগীর অক্সিজেন দেয়ার কথা ভাবা যায়। সিট খুঁজতে থাকবেন হসপিটালে। না হলে আতঙ্কিত রোগীর শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে যাবে।
বাসায় টেলিমেডিসিনের চিকিৎসায় আপনার ভাইরাসের লোড কমে যাবে। ভাইরাল লোড বেশি হলে রোগী ক্রিটিকাল হয়ে যায়।
কোভিড-১৯ টেস্টের জন্য সিরিয়াল দিয়ে রাখুন। সিরিয়াল অনেক পরে পাবেন। স্যাম্পল দেয়ার পর রেজাল্ট পেতে আরও দেরি হবে। ততদিনে আপনি হয়তো সুস্থ হয়ে যাবেন।
যারা বাইরে বের হচ্ছেন না, বাসায় থাকছেন, তারাও ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। যারা তিনমাস বাসায় বন্দি থাকার পরও আক্রান্ত হচ্ছেন, কেয়ারটেকার বা দারোয়ানের মাধ্যমে বা অনলাইনে বাজার করছেন, তারা বাজারের ব্যাগের মাধ্যমে ভাইরাস পাচ্ছেন। কাজেই ব্যাগ বা পণ্য পরিষ্কার করার উপায় মেনে চলুন।
বাসায় সন্দেহভাজন রোগী থাকলে মাস্ক পরুন এবং যতটা পারা যায় তাকে ও তার কেয়ারগিভারকে আলাদা রাখুন।
লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান ল্যাব মেডিসিন বিভাগ, সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতাল।
Posted ১০:১২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh