যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনকে বলা হয় ‘হানিমুন পিরিয়ড’। প্রথম একশ দিনে প্রেসিডেন্টের এজেন্ডা কি ছিল এবং এই একশ দিনে তিনি তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে কতটা সফল বা ব্যর্থ হলেন সে সম্পর্কিত একটি রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়। এ সময়ে নতুন প্রেসিডেন্টের কাজের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে একাধিক জরিপ রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়। গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন পূর্ণ হবে আগামী ৩০ এপ্রিল। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে জো বাইডেন কেমন করেছেন এ নিয়ে গত ২৯ মার্চ সোমবার এবিসি নিউজ একটি জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এবিসি নিউজ ও আইপিএসওএস এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপে বলা হচ্ছে যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কিন্তু তা সত্বেও তিনি করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ, বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেসব পদক্ষেপকে জোরাল সমর্থন দিয়েছে আমেরিকান জনগণ।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইমিগ্রেশন নীতি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতিমালাকে সমর্থন করেনি অধিকাংশ আমেরিকান। গত সপ্তাহে এবিসি নিউজ ও আইপিএসওএস এর উদ্যোগে যে জরিপটি পরিচালিত হয় তাতে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭২ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সীটক পন্থা অবলম্বন করছেন।

মার্চ মাসের প্রথম দিকে ১,৯ ট্রিলিয়ন ডলার রিলিফ প্যাকেজ পাস হওয়ার পর এই সংস্থা দুটির জরিপে বাইডেনের জনপ্রিয়তা ছিল ৬৮ শতাংশ। গত সপ্তাহের জরিপে মাত্র ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না। কোভিড ১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন যেভাবে বিলিবন্টন করা হচ্ছে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রতি চারজন উত্তরদাতার মধ্যে তিনজন। এখন পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান ভ্যাকসিন নিতে সক্ষম হয়েছেন। জরিপে ৫৩ শতাংশ রেজিষ্টার্ড রিপাবলিকানও বাইডেনের ভ্যাকসিন বন্টন ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথম একশ দিনে ১০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি ১০০ মিলিয়ন ডোজের মাত্রা দ্বিগুণ করে ২০০ মিলিয়ন ডোজে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রথম ১০০ মিলিয়ন ডোজ ইতোমধ্যে সরবরাহ শেষ হয়েছে। গত সোমবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভ্যাকসিন সম্পর্কে আরও বলেছেন যে কমপক্ষে ৯০ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক আমেরিকান ১৯ এপ্রিলের আগে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। তিনি বলেন, যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন তারা তাদের বাসস্থান থেকে পাঁচ মাইল দূরত্বের ভেতর ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। এর আগে ঘোষিত ১৭ হাজার ফার্মেসির পরিবর্তে এখন ৪০ হাজার ফার্মেসিতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে এবং গণহারে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য আরও ভ্যাকসিন সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে। এছাড়া গত সোমবার হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে যে প্রায় সকল প্রাপ্ত বয়স্ককে মে মাসের ১ তারিখের মধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া সম্পন্ন করা হবে।

করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র বিশ্বে অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। সর্বত্র চলছে মন্দাবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে জো বাইডেন যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন সেসব পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল ৬০ শতাংশ আমেরিকান। এখানে ৪০ শতাংশ আমেরিকান মনে করছেন যে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হবে। ৬০ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন নীতি নিয়ে যেভাবে কাজ করছেন তার প্রতি সমর্থন জানাননি বেশির ভাগ আমেরিকান। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে বর্তমানে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে ৫৩ শতাংশ আমেরিকান সমর্থন করেননি এবং বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে এটি একটি সংকট। ৪২ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন যে এটি একটি বড় সমস্যা, কিন্তু সংকট নয়। এখানে মাত্র ৪ শতাংশ রেজিষ্টার্ড রিপাবলিকান, ৫৪ শতাংশ স্বতন্ত্র ও ৩৫ শতাংশ রেজিষ্টার্ড ডেমোক্রেট মনে করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইমিগ্রেশন নীতি ভ্রান্ত। প্রেসিডেন্ট বাইডেন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতি নিয়ে যে ধরনের আইন প্রণয়ন প্রশ্নে যে ধরনের কথা বলছেন তার প্রতিও অধিকাংশ আমেরিকানের সমর্থন নেই। দুই সপ্তাহ আগে আটলান্টায় ৮ জন এবং গত সপ্তাহে কলোরাডোতে ১০ জনকে গুলি করে হত্যা করার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনকে অধিকতর কার্যকর আইনে পরিণত করার প্রয়োজনীয় সংশোধনীর কথা ঘোষণঅ করেন এবং এ ব্যাপারে তিনি নির্বাহী আদেশ জারি করার হুমকিও দেন। বাইডেনের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপের প্রতি ৮৬ শতাংশ রিপাবলিকান, ৫৬ শতাংশ স্বতন্ত্র ও ৩৭ শতাংশ ডেমোক্রেট সমর্থন করেননি।