এ্যালিয়ান্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার-অ্যাসাল’র পঞ্চম মিডিয়া ডিনার অনুষ্ঠিত হয় গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায়, জ্যামাইকার থমাস বেরি প্লেস মিলনায়তনে। নিউইয়র্কের বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন নিউইয়র্ক স্টেট ও সিটির প্রভাবশালী জন প্রতিনিধিগণ। অ্যাসাল’র প্রতিষ্ঠাতা ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট মাফ মিসবাহউদ্দিন সঞ্চালনা করেন অনুষ্ঠানটি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল স্পিকার এড্রিন অ্যাডমস, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, সিনেটর জেসিকা রামোস, সিনেটর টবি এ্যান স্ট্যাভিসকি, সিনেটর জেনিফার রাজকুমার, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার ক্যাটেলিনা ক্রুজ, অ্যাসেম্বলি মেম্বার নাথালিয়া ফার্নান্দেজ, স্টিভ রাগা, স্থানীয় ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এর কাউন্সিল মেম্বার জেমস এফ জিনারো, ডেমোক্র্যাটিক ডিস্ট্রিক্ট লীডার বল্ডিও। অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে ক্যাথি হকুলকে গভর্নর নির্বাচিত করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাসাল’র ন্যাশনাল সেক্রেটারি মোঃ করিম চৌধুরী। এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্যে মাফ মিজবাহ উদ্দিন। তিনি অ্যাসাল’র প্রতিষ্ঠা এবং এর বিভিন্ন কর্মসূচী তুলে ধরেন। তিনি পরিচয় করিয়ে দেন নিউইয়কর্ স্টেট ও সিটির নেতৃবৃন্দকে। স্থানীয় মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ্য করেন।

কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস অ্যাসাল কুইন্স চ্যাপ্টারের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নব গঠিত কমিটির কর্মকর্তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ বাক্য পাঠ করান। এর আগে ডনোভান রিচার্ডস তার বক্তব্যে ভূয়সী প্রশংসা করেন অ্যাসাল’র বিভিন্ন কর্মকান্ডের। তিনি বলেন, অ্যাসাল নিউইয়র্কের বাংলাদেশী সহ সাউথ এশিয়ান আমেরিকানদেরকে মূলধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে নিউইয়র্কে বিভিন্ন পর্যায়ে সাউথ এশিয়ান নেতৃত্ব উঠে এসেছে এবং তা অব্যাহত থাকবে ভবিষ্যতে।

কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট বিগত ১৮ মাসে তার দায়িত্ব পালনকালে যে সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, কুইন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ কাউন্টি। তিনি বলেন, এখানে বসবাস করে ১৯০টি দেশে ৩৫০টি ভাষাভাষি জনগোষ্ঠি। তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবন মান উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, কুইন্সে জেএফকে এয়ারপোর্টে ১৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে।

এক নম্বর টার্মিনাল সম্পন্ন হলে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানান ডনোভান রিচার্ডস। তিনি বলেন, আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে অবশ্যই বিজয়ী করতে হবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীদেরকে। বিশেষ করে গভর্নর পদে ক্যাথি হকুলকে জয়ী করতে সবাইকে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহ্বান জানান ডনোভান রিচার্ডস। তিনি বলেন, রিপাবলিকান প্রার্থী জেলদিন বিজয়ী হলে সাধারণ মানুষ তাদের নায্য অধিকার হারিয়ে ফেলবে। আমাদের কোন দাবি দাওয়াকে জেলদিন গুরুত্ব দিবেন না বলে মন্তব্য করেন কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট।

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের স্পিকার এড্রিন অ্যাডামস বলেন, নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী কাউন্সিল মেম্বার সংখ্যা গরিষ্ঠ। এছাড়া এবারের সিটি কাউন্সিলে কোরিয়ান, বাংলাদেশী ও ভারতীয় আমেরিকানরা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশী কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফের কথা স্মরণ করেন। স্পিকার অ্যাসাল’র প্রশংসা করে বলেন, এই সংগঠন সাউথ এশিয়ানদেরকে নেতৃত্বে আসার পেছনে কাজ করছে। তিনি বলেন, যে কোন মূল্যে গভর্নর পদে ক্যাথি হকুলকে নির্বাচিত করতে হবে। বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে সামাজিক ন্যায় বিচার কায়েম করতেই ব্যালটের ব্যবহার করতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রভাবশালী এই জনপ্রতিনিধি।

অন্যান্য জন প্রতিনিধিগণও তাদের নিজ নিজ ডিস্ট্রিক্টে বাংলাদেশী সহ সাউথ এশিয়ান আমেরিকানদের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের প্রশংসা করেন। ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে আরো বক্তব্য রাখেন জমিলা উদ্দিন, নবগঠিত কুইন্স চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট কাজী ফরিদ আহমেদ, সেক্রেটারি হারজিত মিনাহাজ, প্রফেসর মহসিন পাটোয়ারী প্রমুখ।

আমন্ত্রিত বাংলাদেশী মিডিয়ায় সাংবাদিকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মাফ মিসবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, মিডিয়ার কারণেই বাংলাদেশী কমিউনিটি অতি দ্রুত রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠছে। বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটির আর্থ সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশী মিডিয়া। মিডিয়ার পক্ষ থেকে অ্যাসাল’কে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ ও ইউএসঅনলাইন নিউজের শাখাওয়াত হোসেন সেলিম। তারা অ্যাসালকে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে অ্যাসাল কর্মকান্ড এগিয়ে নিয়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। মধ্যবর্তী নির্বাচনে এক সপ্তাহ পূর্বে অ্যাসাল’র অনুষ্ঠানটি ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।