শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন বাইডেন

বাংলাদেশ ডেস্ক :   |   বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০

জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। ঝুলে থাকা রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় জয় পেয়ে হোয়াইট হাউসের দুয়ার খুলে যায় তার। এ রাজ্যের ২০টি ভোট যোগ হলে তার ইলেকটোরাল কলেজ ভোট দাঁড়ায় ২৮৪টিতে।

জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৭০টি। পরে নেভাদাতেও জয় পান বাইডেন, ইলেকটোরাল ভোট গিয়ে ঠেকে ২৯০টিতে। তখনও ওয়াশিংটন সময় সকাল ১০টা তিন রাজ্যে ভোট গণনা চলছিল। সে সময় পর্যন্ত বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইলেকটোরাল ভোট ২১৪টি। এই জয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস গড়লেন বাইডেন। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পপুলার ভোট পাওয়ার ইতিহাসও সৃষ্টি করেন ৭৭ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট। তিনি পপুলার ভোট পেয়েছেন (ফল ঘোষণা না হওয়া তিন রাজ্যের হিসাব অন্তর্ভুক্ত নয়) সাত কোটি ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ৫৭০টি। সে পর্যন্ত ট্রাম্প পেয়েছেন সাত কোটি ছয় লাখ এক হাজার ৯৬৮ ভোট। বাইডেনের জয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। এর মধ্য দিয়ে দেশটির ইতিহাসে প্রথম কোনো নারী ও প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ এ আসনে বসলেন। ফল ঘোষণা নিয়ে চার দিন ধরে রুদ্ধশ্বাস সময় কাটছিল মার্কিনিদের। বিশ্বও তাকিয়ে ছিল এর দিকে। ট্রাম্পের নানা অভিযোগ ও তার দল রিপাবলিকানদের নানা কার্যকলাপে বাড়ছিল উত্তেজনাও।


পেনসিলভানিয়ার ফল ঘোষণা করা হলে সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন বাইডেন সমর্থকরা। তারা রাস্তায় নেমে এসে নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। অভিনন্দন জানান নতুন রাষ্ট্রপ্রধানকে। বিশ্বনেতারাও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাইডেনকে। এ ফল আসার পর একই টুইটে আমেরিকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জো বাইডেন। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিশ্রুতি আমি আপনাদের দিচ্ছি, আপনি আমাকে ভোট দিন বা না দিন, আমি হব সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট। আমার ওপর যে আস্থা আপনারা রেখেছেন, তার প্রতিদান আমি দেব।’ তবে এ ফল মানতে পারেননি ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা। পরাজয় মানবেন না ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তাকে (বাইডেন) মিথ্যা বিজয়ী হিসেবে দেখানো হচ্ছে। গণমাধ্যম তাকে কেন বিজয়ী হিসেবে উপস্থাপন করছে সেটা বুঝছি না, সত্যটা তুলে ধরা হচ্ছে না। তবে কেন বাইডেন মিথ্যা জয়ের পিছনে ছুটছে সেটা আমরা জানি। নির্বাচন শেষ হতে এখনও অনেক বাকি।

এর আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে বাইডেনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করেছে মার্কিন তথ্য ও ডাটা বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডিসিশন ডেস্ক’। সংস্থাটি জানায়, ‘গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পেনসিলভানিয়াতে বাইডেনের জয় নিশ্চিত। সুতরাং বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়াও নিশ্চিত।’ নির্বাচনী ফলাফল সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে সংস্থাটির ব্যাপক সুনাম রয়েছে। ডিসিশন ডেস্কের এ ঘোষণার পর থেকেই বাইডেন সমর্থকরা রাস্তায় নেমে নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। বিপরীতে ট্রাম্প সমর্থকরা বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট মেনে নিতে রাজি নন জানিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন বিভিন্ন রাজ্যে। তারা বলেন, বাইডেন চীনের এজেন্ট। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে দেশ রসাতলে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়।


ধীরগতিতে ভোট গণনা চললেও গণনা যত এগিয়ে যাচ্ছিল ততই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছিলেন জো বাইডেন। ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর কী করবেন পেনসিলভানিয়ার ফল ঘোষণার আগেই সে কথা জানিয়েও দেন তিনি। অপর দিকে হোয়াইট হাউসে অনেকটাই একা হয়ে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেনসিলভানিয়ার ফল ঘোষণার আগেই পদত্যাগ করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার। গুঞ্জন উঠেছে, হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারাও তাকে এড়িয়ে চলছেন। সারা দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অভিযোগ করেই যাচ্ছেন ট্রাম্প। বলছেন, ভোট কারচুপি হয়েছে। যদিও এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ এখনও দেখাতে পারেননি তিনি। ট্রাম্প হলেন ১৩তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারলেন না। এছাড়া গত ২৫ বছরের ইতিহাসে তিনি তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি দ্বিতীয় মেয়াদে পা রাখতে পারলেন না হোয়াইট হাউসে।

ঐক্যবদ্ধ আমেরিকা গড়ার অঙ্গীকার


প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিভাজনের রাজনীতিকে সরিয়ে আমেরিকাকে ঐক্যবদ্ধ করার অঙ্গীকার করলেন তিনি। নির্বাচনের ফল ঘোষিত হওয়ার পরে গতকাল ভোরে নিজ শহর ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে বিজয়-ভাষণ দেন তিনি। সেখানেই তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। একই মঞ্চে তার রানিংমেট ও নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেন, ‘আমি প্রথম হলেও এ পদে শেষ মহিলা নই’। পাশাপাশি, এদিন ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত পলিসি ডকুমেন্টে জানানো হয়েছে, ‘১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে’। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি ও ভারতীয়রাও।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর পর সমর্থকদের উদ্দেশে ডেলাওয়্যারে বিজয়-ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বাইডেন। বাংলাদেশ সময় রোববার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ তার সেই ভাষণের আগে মঞ্চে ওঠেন নতুন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। বিজয়-ভাষণে বাইডেন বলেন, করোনা পরিস্থিতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বেহাল অর্থনীতি উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিভাজন সরিয়ে দেশকে একজোট করাই তার লক্ষ্য। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, বিশ্বের দরবারে আমেরিকাকে ফের সম্মানজনক স্থানে পৌঁছে দিতে তিনি বদ্ধপরিকর। ৪৬তম প্রেসিডেন্ট পদ দখল করার পর বাইডেন মনে করিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকাকে এক দেশ হিসাবেই দেখেন তিনি। ডেমোক্র্যাটদের দলীয় নীল রঙের প্রাধান্য বা রিপাবলিকানদের লাল রঙ, কোনওটাকেই গুরুত্ব দিতে নারাজ বাইডেন। বরং আমেরিকাকে এক রাষ্ট্র হিসাবে দেখার কথা বলেছেন তিনি। বাইডেনের কথায়, ‘লাল বা নীল রাজ্য নয়, আমার নজরে রয়েছে শুধুমাত্র আমেরিকা।’ সেই সঙ্গে বর্ণবৈষম্য, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ফলে বিভাজনের দেয়াল সরিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজের অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।

সমর্থকদের উল্লাসের মাঝে সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে বাইডেন বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এটাই সময় এবং আমেরিকার ক্ষত সারানোরও পালা এসেছে। বিদ্বেষকে পেছনে ফেলে ফের এক হওয়ার সময় এসেছে।’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই আমেরিকায় ঘটে গেছে জর্জ ফ্লয়েড খুনের মতো ঘটনা। ওই ঘটনাকে ঘিরে আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বেই বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলন দেখা গিয়েছিল। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা হতে দেখা গেছে, দেশের বহু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট পেয়েছেন বাইডেন। এদিন ভাষণে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেশের অ্যাফ্রো-আমেরিকানদের ধন্যবাদ। আপনারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবার আমি আপনাদের পাশে থাকব।’

এদিন বাইডেনের আগে ভাষণ দেন কমলা। মহিলা হিসাবে প্রথম হলেও তিনি যে সর্বশেষ নন, সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘হতে পারে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে আমিই প্রথম মহিলা। কিন্তু আমিই শেষ নই’। নির্বাচনে তার এবং বাইডেনের জয়কে ‘ঐতিহাসিক’ বর্ণনা করে কমলার মন্তব্য, ‘আজ রাতে প্রতিটি ছোট্ট মেয়ে দেখতে পাচ্ছে, এটি (আমেরিকা) একটি সম্ভাবনাময় দেশ’। তার দাবি, এক শতক আগে আমেরিকার মহিলাদের ভোটাধিকার প্রাপ্তির মাধ্যমে যে নতুন ধারার সূচনা হয়েছিল, তা এত তাড়াতাড়ি শেষ হবে না। দেশ গড়ার কাজে অ্যাফ্রো-আমেরিকান নারীর অবদান যে প্রায়শই এড়িয়ে যাওয়া হয়, সে কথাও কমলার ভাষণে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আজ তাদের সংগ্রাম এবং দৃঢ়সংকল্পের প্রতিফলন ঘটিয়ে দেখতে চাই কী কী ভার কমানো যায় এবং আমি তাদের গড়ে তোলা পথেই এগিয়ে চলেছি।’ গণতান্ত্রিক পথে যাতে আরও মানুষের যোগদান থাকে, সে উদ্দেশ্যেও তার সমর্থকেরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন কমলা। তার মন্তব্য, ‘আমেরিকা প্রস্তুত। সেই সঙ্গে জো বাইডেন এবং আমিও।’

এদিকে, বাইডেন শিবিরের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি পলিসি ডকুমেন্ট প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের পরই মার্কিন কংগ্রেসে নতুন অভিবাসী সংশোধনী আইন পাশ করানোর কাজ শুরু করে দেবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। যার লক্ষ্য হবে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির আধুনিকীকরণ এবং পরিবারভিত্তিক নাগরিকত্ব প্রদান। একই পরিবারের সদস্যদের একত্রিত রাখার লক্ষ্যে আমরা প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে মার্কিন নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। এর মধ্যে ৫ লাখেরও বেশি ভারতীয়।’ এর ফলে আমেরিকায় প্রতি বছর অন্তত ৯৫ হাজার অভিবাসী স্থায়ীভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পেতে পারেন।

উল্লেখ্য, ট্রাম্পকে হারানোর পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে নানা নজির গড়েছেন ৭৭ বছরের জোসেফ রবিনেত বাইডেন জুনিয়র। আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বয়সি প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন তিনি। সেই সঙ্গে ১৯৯২ সালের পর তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি একবার পদে থাকা কোনও প্রেসিডেন্টকে হারালেন। শেষবার এমনটা করেছিলেন বিল ক্লিনটন। ১৯৯২ তে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশকে পরাস্ত করেছিলেন তিনি। বাইডেনের পাশাপাশি কমলার জয়ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রথম অ্যাফ্রো-আমেরিকান-এশীয় হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি। সূত্র : রয়টার্স, এপি।

বাইডেনের জয়ের নেপথ্যে যে পাঁচ কারণ

প্রায় ৫০ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং প্রেসিডেন্ট হতে কয়েক দশকের প্রতীক্ষার পর শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউজে যাচ্ছেন জো বাইডেন। ভয়াবহ এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও এ সংকটকালীন পরিস্থিতিই তাকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ডেলাওয়ারের গাড়ি বিক্রেতার ছেলে বাইডেনের জয়ের পেছনের পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সেগুলো হচ্ছে :

কোভিড, কোভিড, কোভিড : বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল সম্ভবত নভেল করোনাভাইরাস। মহামারীটি ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মার্কিনের জীবন বধের পাশাপাশি ২০২০ সালে আমেরিকান জনজীবন ও রাজনীতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনের শেষ দিনগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছিলেন বলেও মনে হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের শেষ সপ্তাহে উইসকনসিনে এক নির্বাচনী সভায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ফেইক নিউজগুলোতে সবসময় দেখা যায় শুধু কভিড, কভিড, কভিড।’
গত মাসে পিউ রিসার্চের একটি জরিপে উঠে এসেছিল, করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণে আস্থার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের থেকে ১৭ শতাংশীয় পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন বাইডেন। মহামারী ও পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয় ট্রাম্পকে নির্বাচনের দৌড়ে পেছনে ফেলে দিয়েছে। অনেক আমেরিকান তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মহামারী নিয়ে তার মনোযোগের অভাব, বিজ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ঝোঁক, নীতিমালা পরিচালনা ও বামপন্থী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার নিয়ে উদ্বেগ ছিল।

কম কিন্তু কার্যকর বার্তা প্রদান : রাজনৈতিক জীবনে বাইডেনের কথা বলতে গিয়ে বেধে যাওয়া, অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ফেলাসহ নানা সমস্যায় পড়া নিয়ে খ্যাতি ছিল। ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তার প্রথম ও ২০০৭ সালে দ্বিতীয় দৌড়েও কম কথা বলার প্রবণতা দেখা গেছে। ওভাল অফিসের জন্য তার তৃতীয় এ দৌড়ে কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছিলেন। তবে খুব কম হওয়ায় সেগুলো কোনো ইস্যুতে পরিণত হয়নি। আর এবারে বড় গল্প ছিল করোনাভাইরাস মহামারী, জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে। আর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এমনিতেই প্রচার সীমাবদ্ধ করতে হয়েছিল। এ বিষয়গুলো বাইডেনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়।

আর যে-ই হোক ট্রাম্প নয় : নির্বাচনের আগের সপ্তাহে বাইডেনের প্রচার শিবির টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে একটি চূড়ান্ত বার্তা তুলে ধরেছিল। বাইডেন জানিয়েছিলেন, এ নির্বাচনটি আমেরিকার আত্মাকে রক্ষার লড়াই এবং বিগত চার বছরের বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ। এ স্লোগানের পেছনে অবশ্য একটি সাধারণ গণিত কাজ করেছে। বাইডেন দাবি তুলেছিলেন, ট্রাম্প জনগণকে বিভক্তকারী প্রচণ্ড রাগী বা হিংস্র প্রকৃতির। কিন্তু আমেরিকান জনগণ একজন শান্ত ও স্থির মনোবলের নেতৃত্ব চায়। আর বাইডেনের বিজয়ী বার্তাটিও ছিল, তিনি ট্রাম্প নন। ডেমোক্র্যাটরা দুই প্রার্থীর মধ্যে পছন্দ করার পরিবর্তে ট্রাম্পকে নিয়ে একটি গণভোট তৈরি করতে সফল হয়েছেন।

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন : খোদ ডেমোক্র্যাট শিবিরের নানা চাপের পরও বাইডেন মধ্যপন্থী কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। সর্বজনীন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, নিখরচায় কলেজ শিক্ষা ও সম্পদের কর ফিরিয়ে আনতে তিনি অস্বীকার করেছিলেন। এটা তাকে সাধারণ নির্বাচনী প্রচারের সময় মধ্যপন্থী ও বিপর্যস্ত রিপাবলিকানদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তবে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাইডেন বামপন্থীদের মতের সঙ্গে মিলেছিলেন। এটাই সম্ভবত তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করেছিল। যদিও এটা জ্বালানি শিল্পবেষ্টিত সুইং স্টেটগুলোতে বাইডেনের ঝুঁকি তৈরি করেছিল।

বেশি অর্থে বাইডেনের প্রচার : এ বছরের শুরুর দিকেও বাইডেনের প্রচার শিবিরের অর্থভাণ্ডার খালি ছিল। তহবিল সংগ্রহে ট্রাম্প থেকে অনেক পিছিয়ে থেকে লড়াই শুরু করেন। এপ্রিলে বাইডেন প্রচারাভিযানের জন্য তহবিল সংগ্রহে মনোযোগ দেন এবং অক্টোবরের শুরুর দিকে ট্রাম্পের চেয়ে ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারেরও বেশি নগদ অর্থ জমা হয়। যদিও অর্থই সবকিছু নয়। চার বছর আগেও ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ক্লিনটনের অনেক বড় প্রচার তহবিল ছিল। তবে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি প্রচার কমিয়ে দেয়। আর এ সময় আমেরিকানরা বাড়িতে থেকে গণমাধ্যমে অনেক বেশি সময় ব্যয় করা শুরু করে। এ সুযোগে বাইডেনের নগদ অর্থ তাকে গণমাধ্যমের সাহায্যে ভোটারদের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। মহামারীতে সরাসরি প্রচারের বিকল্প সুযোগ করে দেয় অর্থ আর বাইডেন এ সুবিধাটিই গ্রহণ করেছিলেন। বিবিসি অবলম্বনে

advertisement

Posted ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.