জ্যামাাইকা মুসলিম সেন্টার-জেএমসি নিউইয়র্কে বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটি পরিচালিত সর্ববৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। মসজিদের নিয়মিত কর্মকান্ডের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছে আল মামুর স্কুল ও জামিয়া কুরানিয়া একাডেমী। এছাড়াও খন্ডকালীন ধর্মীয় শিক্ষার জন্য রয়েছে উইকএন্ড এবং সামার ইসলামিক স্কুল। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার-জেএমসিতে এবারের সামারে ছোট শিশুদের দেয়া ধর্মীয় শিক্ষা সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয় গত ২৮ আগষ্ট রোববার। পুরস্কার বিতরণীতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও শুভান্যুধায়ীরা। হোজাইফা মোহাম্মদ এর কন্ঠে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ছেলেদের দিকে শাহ এহসানুল ইসলাম, মাওলানা ওমায়ের ও মেয়েদের দিকে মির্জা আফিফা বেগ।

জেএমসি’র সেক্রেটারি আফতাব মান্নানের উপস্থাপনায় প্রথম পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ডাঃ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের শুভেচ্ছা জানান ডাঃ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। উইকএন্ড এবং সামারে ধর্মীয় শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে এব্যাপারে সবাইকে অধিকতর সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন ডাঃ রহমান। জেএমসি শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, বিশেষ অতিথি সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ এ খান এ পর্যায়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেন, স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা এবং ইসলামী সংস্কৃতি সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের সম্যক জ্ঞানদান না করতে পারলে পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ ধরে রাখা যাবে না। সন্তানদেরকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অভিভাবকদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন বক্তাগণ। তারা বলেন, আমেরিকায় ইসলাম ভীতির যে প্রবণতা চলছে এ থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে ইসলাম সম্পর্কে জানতে হবে এবং প্রতিবেশী সহ সমাজে ইসলামের সত্যিকার যে আদর্শ তার ব্যবহারিক প্রমাণ রাখতে হবে। বক্তাগণ অভিভাবকদেরকে তাদের নিজ নিজ সন্তানকে ধর্মীয় জ্ঞান ও শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে সামারের অবকাশকালীন সময়কে কাজে লাগানোর জন্য ধন্যবাদ জানান। তারা বলেন, ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা অত্যন্ত জরুরী। শুধু সামার নয়, উইকএন্ড এবং ইসলামী স্কুলে সন্তানদেরকে ভর্তি করতেও উৎসাহ দেন বক্তাগণ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উইকএন্ড ও সামার স্কুল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ। তিনি বলেন, আমাদের কোমলমতি শিশুদেরকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করা অত্যন্ত জরুরী। তা না হলে এমন একটা সময় আসবে যখন মসজিদে মুসল্লি খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাম্প্রতিককালে নিউইয়র্কে প্রার্থনাকারীর অভাবে অনেক চার্চ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ইমাম আবু জাফর বেগ। তিনি সামার স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন ও অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানান। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেএমসি পরিচালনা কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারী মোঃ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সদস্য মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন, অফিস কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহিদ খান ও শিক্ষক, শিক্ষিকাবৃন্দ।

বিভিন্ন গ্রুপে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে সার্টিফিকেট ও পুরস্কার বিতরণ করেন জেএমসি প্রেসিডেন্ট ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান, জেনারেল সেক্রেটারী আফতাব মান্নান, ভাইস প্রেসিডেন্ট মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ এ খান, জেএমসি’র কোষাধ্যক্ষ বাবুল মজুমদার, হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম, কর্নফুলি ট্যাক্স রিটার্নের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাশেম ও সামার স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ। কয়েকটি পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা কোরআন তেলাওয়াত ও হাদীস থেকে উল্লেখ সহ বিভিন্ন বিষয়ে অংশ নেয়। সামার ক্লাসে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছর জেএমসির সামার স্কুল প্রায় তিনশত ছাত্রছাত্রী নিয়ে শুরু হয়েছিল এবং ক্লাসে গড় উপস্থিতি ছিল ৩০০ জন। মোট ২২ জন শিক্ষক বিভিন্ন সেকশনে বিভক্ত হয়ে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেন। তাদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ছিলেন ৮ জন এবং নারী শিক্ষক ১৪ জন। প্রায় দু’মাসের সংক্ষিপ্ত সামার স্কুলে শিশুদের ইসলামী শিক্ষা ও নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পাঠক্রমের মধ্যে আচার-আচরণ, নৈতিক শিক্ষা, হাদিস, খ্যাতিমান ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী, যথাযথভাবে কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ শিক্ষা দেয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে দোয়া মুনাজাত করেন জেএমসির ইমাম ও উইকএন্ড স্কুলের প্রিন্সিপাল মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ।