দীর্ঘ ২৩ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন নারীদের টেনিসে সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সেরেনা উইলিয়ামস। ইউএস ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে স্থানীয় সময় ৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) নিউইয়র্কে অস্ট্রেলিয়ার আজলা টমলজানোভিকের কাছে হেরে যাওয়ার পর এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ৪১ বছর বয়সী উইলিয়ামস এ মাসেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউএস ওপেন খেলে তিনি অবসরে যাচ্ছেন।

সেরেনার ২৩ বছর আগে শুরুটা হয়েছিল নিউ ইয়র্কে। ১৯৯৯ সালে ইউএস ওপেনে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে টেনিসের আঙিনায় নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। সময়ের পরিক্রমায় নিজেকে তিনি নিয়ে গেছেন কিংবদন্তিদের কাতারে। তার মোট মেজরের সংখ্যাও এখন ২৩। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষটাও তিনি খেললেন সেই নিউ ইয়র্কেই। ইউএস ওপেন দিয়ে টেনিসকে বিদায় জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের এই তারকা।

লস অ্যাঞ্জেলেসের এক দরিদ্র পরিবার থেকে সেরেনা এবং তার দিদি ভেনাসের উঠে আসা, গলিতে টেনিস খেলা এবং সেখান থেকে পকেটে একের পর এক গ্র্যান্ড স্ল্যাম থাকা, কৃষ্ণাঙ্গ হয়েও শ্বেতাঙ্গদের চোখে চোখ রেখে কথা বলা— এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যা থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া যায়। দুই বোনকে কাছ থেকে দেখেছেন আমেরিকা টেনিস সংস্থার কর্তা এবং সাবেক টেনিস খেলোয়াড় মার্টিন ব্ল্যাকম্যান। কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনযাপনে কতটা প্রভাব ফেলেছেন সেরিনা, সেটা উঠে এসেছে তার কথায়।

তিনি বলেছেন, কম্পটনের একটা দরিদ্র পরিবারে বড় হয়ে উঠেছিল সেরেনা আর ভেনাস। টেনিস খেলার মতো টাকাও ছিল না। অনেক বিনিয়োগ লাগত। তার ওপর বর্ণবিদ্বেষী আমেরিকান সমাজে খেলাটা ছিল মূলত শ্বেতাঙ্গদের। সেই কঠিন পরিস্থিতি পেরিয়ে আসা ওদের উত্থানের প্রথম ধাপ। ব্ল্যাকম্যানের সংযোজন, নিজে অ্যাফ্রো-আমেরিকান হয়ে ওদের সঙ্গে মিল খুঁজে পেতাম। ওদের আত্মবিশ্বাস দেখে অবাক হয়ে যেতাম। বাকিরা অবাক চোখে দেখত।

ব্ল্যাকম্যানের মতে, সেরেনার সবচেয়ে বড় গুণ আত্মবিশ্বাস। নিজের সঙ্গে আপস না করে, সামনে যা বাধা রয়েছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার আরেক নাম সেরেনা। শুধু কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে নয়, আমেরিকার স্পেনীয় ভাষাভাষি, বিভিন্ন দেশের অভিবাসী এমনকি সমকামীদের মধ্যেও এই আত্মবিশ্বাসের বীজ পুঁতে দিতে পেরেছেন সেরেনা। তার উত্থান বিশেষ ভাবে প্রভাব ফেলেছে সে দেশের কৃষ্ণাঙ্গদের ওপরে। সেরেনাকে দেখে টেনিস খেলতে এগিয়ে এসেছেন বহু কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের ছোট ছেলেমেয়েরা। দিন দিন তা বেড়ে চলেছে।

কানাডার কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় লেইলা ফের্নান্দেস বলেছেন, নারী টেনিস খেলোয়াড়দের সামনে একটা পথ দেখিয়েছে সেরেনা। কী ভাবে লক্ষ্য পূরণ করা যায়, কী ভাবে নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করা যায়, সেটা সেরেনার থেকেই শিখেছি।