বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া ফেডারেল কোর্টে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উসকানির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা হয়েছে। নাগরিক অধিকার আইনে মিসিসিপির ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেসম্যান ব্যানি থমসন ১৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলা করেন। মামলায় তাকে সমর্থন করেছেন জর্জিয়ার ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান হ্যাংক জনসন, নিউজার্সির কংগ্রেসম্যান বনি ওয়াটসন কোলম্যান। গত সপ্তাহে আমেরিকান সিনেট ট্রাম্পকে ইমপিচমেন্ট থেকে দায়মুক্তি দিলেও মঙ্গলবার গত ৬ জানুয়ারী ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাঁধানোর উস্কানি দেয়ার জন্য তাকে অভিযুক্ত করে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানিসহ হোয়াইট সুপ্রিমেসির দাবীদার দুটি শ্বেতাঙ্গ গ্রুপকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও জুলিয়ানি ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উস্কানি প্রদান করেছেন। এতে আরও বলা হয়েছে, তাদের এই কাজের সহযোগী হিসেবে ছিল ‘প্রাউড বয়েজ’ ও ‘ওথ কিপার্স’ নামের দুটি চরম ডানপন্থী সংগঠন। ক্যাপিটল হিলে কংগ্রেস যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল সার্টিফাই করছিল, তখন সহিংসতা ও ষড়যন্ত্র করে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন বিবাদীরা। সাবেক প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য ছিল তার সমর্থকদের মাধ্যমে দাঙ্গা ঘটিয়ে কংগ্রেসকে জো বাইডেনের পক্ষে ভোট সার্টিফাই করা থেকে বিরত রাখা ও বাধার সৃষ্টি করা।
বিবাদীদের এসব কর্ম ‘কু ক্লাক্স ক্লান অ্যাক্ট’ নামের আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। দাসপ্রথা-পরবর্তী সময়ে আমেরিকায় আইনটি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের হাত থেকে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ও আইনপ্রণেতাদের রক্ষা করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অফ কালারড পিপল কংগ্রেসম্যান থমসনের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
নীতির সংকটে রিপাবলিকানরা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনায় সিনেটে অভিশংসিত হওয়া থেকে রেহাই পেলেও যুক্তরাষ্ট্র ও রিপাবলিকান দলের ওপর থেকে এই ঘটনার ছায়া শিগগিরই সরছে না বলে মনে করছেন রিপাবলিকান নেতারা। বরং বিষয়টি নিয়ে মতবিভক্ত দলের ওপর এ ঘটনার রেশ দীর্ঘদিন থাকবে এবং সংকট তৈরি করবে বলেই আশঙ্কা তাঁদের। এরই মধ্যে এ বিষয়ে ট্রাম্পের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান এবং ভোট দেওয়া নিয়ে রিপাবলিকানদের মতবিরোধ সামনে চলে এসেছে। রায়ের পর এখন ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নিয়েও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে। ফলে ঘটনাটি যে দলের নীতিগত ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে, তা অনুমেয়। ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক রিপাবলিকান গভর্নর ল্যারি হোগান গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মতই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ ঘটনা শেষ হয়নি। এটি রিপাবলিকান দলের অন্তর্নিহিত শক্তির জন্য একটি সত্যিকারের লড়াই হতে যাচ্ছে।’
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সিনেটে অভিশংসন শুনানির রায়ে ৫৭-৪৩ ভোটে অব্যাহতি পান ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া সিনেটরদের মধ্যে সাতজন রিপাবলিকানও ছিলেন। তাঁদের একজন লুইজিয়ানার সিনেটর বিল ক্যাসিডি বলেছেন, তিনি মনে করেন দলের ওপর ট্রাম্পের প্রভাব ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাবে। তাঁদের নেতৃত্ব ভিন্ন দিকে যাবে। এই সাতজন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান রয়েছেন, যাঁরা এই ঘটনায় ট্রাম্পকে দোষী মনে করলেও ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশ্য সফল হতে না দেওয়া এবং দলের ভাঙন ঠেকানোসহ নানা দিক বিবেচনায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। যদিও পরে ট্রাম্পের সমালোচনা করতে ছাড়েননি তাঁরা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন সিনেটে রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল।
তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা যাবে না। তবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে ট্রাম্প কার্যকরভাবে ও নৈতিকভাবে ওই ঘটনায় উসকানি দেওয়ার জন্য দায়ী।’ আবার অনেক রিপাবলিকান রয়েছেন, যাঁরা এত কিছুর পরও শক্তভাবেই ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ধরে রেখেছেন। শনিবারের রায়ের পর ট্রাম্পের উচ্ছ্বাস এবং সামনে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার ইঙ্গিতকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন তাঁরা। যেহেতু অভিশংসন থেকে রক্ষা পেয়ে ট্রাম্প নির্বাচনে লড়ার সুযোগ অক্ষত রাখতে পেরেছেন, সেহেতু সামনে তাঁকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলেই তাঁদের অভিমত। তাঁদের একজন দক্ষিণ ক্যারোলাইনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, তাঁর দল ২০২২ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। আর এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আবার যে রিপাবলিকান নেতারা ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী, তাঁরা সংগত কারণেই দলে ট্রাম্প অধ্যায়ের ইতি ঘটানোর পক্ষে মত দিচ্ছেন। তাঁদের একজন সাবেক গভর্নর নিকি হেলি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ট্রাম্প সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার কার্যকারিতা হারিয়েছেন।’ সব মিলিয়ে ট্রাম্পের জন্য ভবিষ্যতে দলের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখা বেশ কঠিনই হতে পারে। রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল যে ট্রাম্পকে দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছেন, তা তাঁর বক্তব্যে এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। সূত্র : এএফপি।
Posted ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh