মোহাম্মদ আজাদ : | বৃহস্পতিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন আগামী ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার। নিউইয়র্কে সকাল ৬টায় ভোটারদের জন্য ভোট কেন্দ্র খুলে দেওয়া হবে এবং কোনো বিরতি ছাড়াই ভোট গ্রহণ চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
পাশ্ববর্তী নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটে সকাল ৬টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে রাত আটটা পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন ভোটাররা। পেনসিলভেনিয়ায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে রাত আটটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। গত সপ্তাহে এক রিপোর্টে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের ভরাডুবির যে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছিল, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডেমোক্রেটদের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়েছে। বিপর্যয় ঠেকাতে ডেমোক্রেটরা তাদের শেষ ট্রাম্পকার্ড হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কলাকৌশল নির্ধারণের ‘মাষ্টার’ খ্যাত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে মাঠে নামিয়েছে। সিনেট নির্বাচনে ডেমোক্রেটরা যেসব স্টেটে পিছিয়ে রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা সেইসব স্টেটের ডেমোক্রেট প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। উইজকনসিন, নেভাদা, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া ও জর্জিয়ায় ডেমোক্রেটদের সঙ্গেরিপাবলিকানদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এমনকি এই আসনগুলো ডেমোক্রেটদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমস, সিয়েনা কলেজ, রয়টার্স, পলিটিকো, সিএনএন, কুইনিপ্যাকসহ সবগুলো পোলিং সংস্থার জরিপে দেখা যায় যে হাউজে ডেমোক্রেটদের পরাজয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। গত সোমবার পর্যন্ত সর্বশেষ জরিপগুলোর সূত্র অনুযায়ী হাউজে মোট ৪৩৫ আসনের মধ্যে রিপাবলিকানরা নিশ্চিতভাবে জয়ী হতে যাচ্ছে ২২৮ কংগ্রেসনাল আসনে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেকোনো দলের প্রয়োজন ২১৮ কংগ্রেসনাল আসন। ৩৩টি কংগ্রেসনাল আসন হচ্ছে ‘টস আপ’ বা ভাগ্য নির্ধারণী আসন। এই ৩৩টি টস আপ আসনের সবগুলো আসনেও যদি ডেমোক্রেটরা পায় তাহলে হাউজের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্রেটদের হাতে থাকছে না। গত সোমবার ব্লুমবার্গ নিউজের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ডেমোক্রেটরা কংগ্রেস পরাজয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সিনেটের মোট ১০০ আসনে মধ্যে এবার নির্বাচন হবে মোট ৩৫টি স্টেটে। বাকি আসনগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৪ সালে। সিনেটে বর্তমানে ডেমোক্রে ও রিপাবলিকানদের আসন সংখ্যা ৫০টি করে। বিভিন্ন জরিপ সংস্থার মতে সিনেটও ডেমোক্রেটদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। রিয়্যাল ক্লিয়ার পলিটিকসের সর্বশেষ জরিপে আগামী মঙ্গলবারের নির্বাচনে রিপাবলিকানরা জয়ী হতে যাচ্ছে ৪৮টি সিনেট আসনে এবং ডেমোক্রেটরা জয়ী হচ্ছে ৪৫টিতে। ৭টি আসন ‘টস আপ’ বা ভাগ্য নির্ধারণী। নিউইয়র্ক টাইমস, সিয়েনা কলেজ ও পলিটিকোর জরিপে বলা হয়েছে যে সিনেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। নিউইয়র্কের সিনেট নির্বাচনে সিনেটর চাক শ্যুমার খুব সহজে পার পেয়ে যাবেন। তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যা পিনিয়র অত্যন্ত দুর্বল প্রার্থী। একাধিক সংস্থার জরিপে সিনেটর শ্যুমার ২০ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।
নিউইয়র্কসহ ৩৬টি স্টেটে এবার গভর্নর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মোট ৫গটি স্টেটের মধ্যে বর্তমানে ২৮ স্টেটে রিপাবলিকান গভর্নর এবং ২২ স্টেটে ডেমোক্রেট গভর্নর রয়েছেন। নিউইয়র্কে গভর্নর পদে ডেমোক্রেট প্রার্থী ক্যাথি হকুল তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী লী জেলদিনের তুলনায় বেশ এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ সপ্তাহের জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে দুই প্রার্থীর জনপ্রিয়তা প্রায় সমান। ফাইভ থার্টিএইট সংস্থার গত সোমবার পর্যন্ত সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে ৪৫ শতাংশ ভোটার ক্যাথি হকুলকে এবং ৪৫ শতাংশ ভোটার লী জেলদিনকে সমর্থন করছেন। গভর্নর হকুলের জন্য আপ স্টেট নিউইয়র্কে প্রচারণা চালাতে এসেছেন সাবেক দুই ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা। গত সোমবার নিউইয়র্ক সিটি মেয়র গভর্নর হকুলের সঙ্গে কুইন্স বরোতে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান গভর্নর প্রার্থী জেলদিনের পক্ষে প্রচারণা চালাতে নিউইয়র্কে এসেছেন ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসেন্টিস।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র হুমকির মুখে : ওবামা
এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত ২৮ অক্টোবর জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে ওবামার। সেই জনপ্রিয়তা কাজে লাগাতে জর্জিয়ায় এক নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নেন তিনি। এ সময় নির্বাচনে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের ক্ষমতায় বসা ঠেকাতে সবাইকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান ওবামা। জর্জিয়ার আটলান্টা শহরতলিতে এই জনসমাবেশে জোর গলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুধু ডেমোক্র্যাট সদস্যদের নির্বাচিত করলেই হবে না; আমাদের ভালো মানুষকে নির্বাচিত করতে হবে। পরবর্তী নির্বাচনে দেখা যাবে, এমন সব মানুষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যাঁরা একসময় যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। আর তাঁরা যদি জয় পান, তাহলে ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা আমার জানা নেই।’ ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা।
এর পর থেকে তিনি নিজেকে অনেকটা আড়াল করে ফেলেন। জর্জিয়ায় ডেমোক্র্যাটদের প্রচারণা অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আগামী মাসের নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জর্জিয়ার বর্তমান সিনেটর ডেমোক্র্যাট সদস্য রাফায়েল ওয়ারনক পদ ধরে রাখতে লড়ছেন রিপাবলিকান সদস্য হার্শেল ওয়াকারের বিরুদ্ধে। অঙ্গরাজ্যটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সিনেটর ওয়ারনক। আর সাবেক ফুটবল তারকা ওয়াকারের পেছনে সমর্থন রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এই দুজনের জয়-পরাজয়ের ওপর নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কোন দলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সিনেটের নিয়ন্ত্রণ হারালে বাধার মুখে পড়তে পারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিভিন্ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। জর্জিয়ার পরবর্তী গভর্নর কে হচ্ছেন, তা নিয়েও তুমুল লড়াই হতে পারে। এই লড়াইয়ে রিপাবলিকান পার্টির ব্রায়ান কেম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট সদস্য স্টেসি আব্রামস। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুই কক্ষ কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নির্ধারণ করতে ইতিমধ্যে ভোট দেওয়া শুরু করেছেন মার্কিনরা। দেশজুড়ে গভর্নর নির্বাচনের ভোটাভুটিও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আরও কয়েক শ পদে কারা ক্ষমতায় আসছেন, তা জানা যাবে আগামী ৮ তারিখ।
Posted ১২:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh