শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ১ ভাদ্র ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

তাগুতের অনুসারীরা পথভ্রষ্ট

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫

তাগুতের অনুসারীরা পথভ্রষ্ট

আল্লাহ তা’আলা বলেন,“প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রাসুল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগুতের বন্দেগী পরিহার করো। এরপর তাদের মধ্যে থেকে কাউকে আল্লাহ সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং কারোর ওপর পথভষ্টতা চেপে বসেছে। তারপর পৃথিবীর বুকে একটু ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।”(সুরা নাহল:৩৬)তাগুত শব্দটি তগা বা তাগাউন মূল শব্দ থেকে নির্গত। এর শাব্দিক অর্থ হলো, সীমা অতিক্রম করা, ভাবার্থে অত্যাচার করা যেমন: তগাল হাকিম: অত্যাচারী শাসক, যে সীমা অতিক্রম করেছে। তগাল বাহরু: সমুদ্র উদ্বেলিত: উত্তেজিত হয়ে ওঠে উপত্যকা প্লাবিত হয়েছে, তার পানি সীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। তাগুত এর বহুবচন হলো তাওয়াগুত। আভিধানিক অর্থে এমন প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে তাগুত বলা হবে, যে নিজের বৈধ অধিকারের সীমানা লঙঘন করেছে। কুরআনের পরিভাষায় তাগুত এমন এক বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভু ও খোদা হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে। আল্লাহর মোকাবেলায় বান্দার প্রভুত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় আছে। প্রথম পর্যায় বান্দা নীতিগতভাবে তার শাসন কর্তৃত্বকে সত্য বলে মেনে নেয় কিন্তু কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে। একে বলা হয় ফাসেকী।

দ্বিতীয় পর্যায়ে সে আল্লাহর শান কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে নিজের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় অথবা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী ও দাসত্ব করতে থাকে। একে বলা হয় কুফরী। তৃতীয় পর্যায়ে সে মালিক ও প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে তার রাজ্যে এবং প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। যেমন ফিরাউন একজন তাগুত ছিল। এই শেষ পর্যায়ে যে বান্দা পৌঁছে যায় তাকেই বলা হয় তাগুত। কোন ব্যক্তি এই তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোন দিন সঠিক অর্থে আল্লাহর মু’মিন বান্দা হতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “দীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেয়া হয়েছে।এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে, যা কখনো ছিন্ন হয় না। আর আল্লাহ শোনেন ও জানেন।”(সুরা বাকারা: ২৫৬) তাগুতের অনুসারী আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একটি তাগুতের শৃংখলে আবদ্ধ হয় না বরং তাগুত তার ওপর ঝেঁকে বসে। প্রধান তাগুত শয়তান এই সমস্ত ব্যক্তিদের সামনে প্রতিদিন নতুন নতুন আকাশ কুসুম রচনা করে তাদেরকে মিথ্যা প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে রাখে। দ্বিতীয় তাগুত হচ্ছে, মানুষের নফস। এই নফস তাকে আবেগ ও লালসার দাস বানিয়ে জীবনের আঁকাবাঁকা পথে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। এ ছাড়া বাইরের জগতে আরো অসংখ্য তাগুত ছড়িয়ে রয়েছে। স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার, বংশ, গোত্র, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতিজন, সমাজ, জাতি, নেতা, রাষ্ট্র, দেশ, শাসক ইত্যাদি সবকিছুই মানুষের জন্য মূর্তিমান তাগুত। এদের প্রত্যেকেই তাকে নিজের স্বার্থের দাস হিসাবে ব্যবহার করে। মানুষ তার এই অসংখ্য প্রভুর দাসত্ব করতে করতে এবং এদের মধ্যে থেকে কাকে সন্তুষ্ট করবে আর কার অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করবে এই ফিকিরের চক্করে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়। তাগুতের অনুসারীদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পরিচয় আল্লাহ তা’আলা নিম্নের আয়াতে দিয়েছেন, “তুমি তাদেরকে দেখোনি, যাদেরকে কিতাবের জ্ঞান থেকে কিছু অংশ দেয়া হয়েছে এবং তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা জিবত ও তাগুতকে মানে আর কাফেরদের সম্পর্কে বলে, ঈমানদারদের তুলনায় এরাই তো অধিকতর নির্ভুল পথে চলছে?”(সুরা নিসা:৫১)

ইবনে কাইয়েম রাহি: পাঁচটি মূল তাগুতের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা: এক, শয়তান: মহান আল্লাহ থেকে বিতাড়িত বা অভিশপ্ত শয়তান হলো, মানুষের জন্য প্রধান ও নাম্বার এক তাগুত। সে মানুষকে বিভ্রান্তির দিকে আহবান জানায়। সে মানুষকে আলোর পথ থেকে সরিয়ে এনে অন্ধকারে নিক্ষেপ করে। অবিশ্বাস, নাস্তিকতার মাধ্যমে তাকে জাহান্নামের অধিকারী বানায়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ও সহায়। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুত। সে তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। এরা আগুনের অধিকারী। সেখানে থাকবে এরা চিরকালের জন্য।”(সুরা বাকারা:২৫৭)

দুই, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উপাসনা করে এবং তাতে সন্তুষ্ট থাকে আর যার উপাসনা করে সেও সন্তুষ্ট হয়। লোকেরা আল্লাহর পরিবর্তে যার উপাসনা করে, সে একজন তাগুত। তিন, যে ব্যক্তি দাবী করে যে, তার অদৃশ্যের জ্ঞান আছে সেও একজন তাগুত। কারণ সে আল্লাহর জ্ঞানে ভাগ বসায়। আল্লাহু আল্লামুল গুয়ুব, আল্লাহ সর্বশক্তিমান আল্লাহ ব্যতীত কেউ অদুশ্যের জ্ঞান রাখে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তাদেরকে বলো, আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানেনা কবে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে।”(সুরা নামল:৬৫) সুতরাং যারা কোন ব্যক্তিকে অদৃশ্যের জ্ঞান আছে বলে বিশ্বাস করে, কিন্তু সেই ব্যক্তি কখনো বলে যায়নি যে, আমার কাছে অদৃশ্যের জ্ঞান আছে। তবে অনুসারীরাই তাগুত বলে বিবেচিত হবে।

চার, যে মানুষকে নিজের ঈবাদাতের জন্য ডাকে। এটি কিছু সুফী সাধকের অনুসারী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তিরা করে যারা আল্লাহর বান্দাদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিজেদেরকে দেবত্বের মর্যাদা দেয়। যারা মানুষকে এ ধারণা দেয় যে, তারা লাভ ও ক্ষতি উভয় করতে পারে তারাই তাগুত।

পঞ্চম, যে ব্যক্তি সর্বশক্তিমান আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা শাসন পরিচালনা করে, সে একজন তাগুত। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, হে নবী! তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা এই মর্মে দাবী করে চলেছে যে, তারা ঈমান এনেছে সেই কিতাবের প্রতি যা তোমার ওপর নাযিল করা হয়েছে এবং এই সব কিতাবের প্রতি যেগুলো তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছিল কিন্তু তারা নিজেদের বিষয়সমূহ ফায়সালা করার জন্য ‘তাগুতের’ দিকে ফিরতে চায়, অথচ তাদেরকে তাগুতকে অস্বীকার করার হুকুম দেয়া হয়েছিল? শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে সরল সোজা পথ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রিয়ে যেতে চায়।”(সুরা নিসা:৬০) এখানে তাগুত বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন শাসককে বুঝানো হয়েছে যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য কোন আইন অনুযায়ী ফয়ষালা করে এবং এমন বিচার ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার আনুগত্য করে না এবং আল্লাহর কিতাবকে চুড়ান্ত সনদ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না। কাজেই যে আদালত তাগুতের ভ’মিকা পালন করছে, নিজের বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালার জন্য তার কাছে উপস্থিত হওয়া যে একটি ঈমান বিরোধী কাজ এ ব্যাপারে আয়াতটির বক্তব্য সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। আর আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের প্রতি ঈমান আনার অপরিহার্য দাবি অনুযাযী এ ধরণের আদালতকে বৈধ আদালত হিসাবে স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানোই প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। কুরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহ প্রতি ঈমান আনা ও তাগুতকে অস্বীকার করা, এ দু’টি বিষয় পরস্পরের সাথে অংগাঅংগীভাবে সংযুক্ত এবং এদের একটি অন্যটির অনিবার্য পরিণতি। আল্লাহ ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করাই হচ্ছে সুস্পষ্ট মুনাফেকী। আল কুরআনে বলা হয়েছে,“যারা আল্লাহ নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচার-ফায়সাল করে না তারা কাফের।”

(সুরা মায়েদা:৪৪) একই সুরার ৪৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে “তারা জালিম” এবং ৪৬ আয়াতে বলা হয়েছে ,“তারা ফাসিক”। সুতরাং যারা তাগুত তারাই কাফির, জালিম ও ফাসিক। সৃতরাং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার প্রধান দাবী হলো, তাঁর নাযিলকৃত কিতাব অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা ও শাসন কার্য পরিচালনা করতে হবে এবং সমগ্র জীবন ব্যবস্থায় তাগুতকে অস্বীকার করতে হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রাসুল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগুতের বন্দেগী পরিহার করো।”(সুরা নাহল:৩৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,“তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যাদেরকে কিতাবের জ্ঞান থেকে কিছু অংশ দেয়া হয়েছে এবং তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা জিবত ও তাগুতকে মানে আর কাফেরদের সম্পর্কে বলে, ঈমানদারদের তুলনায় এরাই তো অধিকতর নির্ভুল পথে চলছে।”(সুরা নিসা:৫১) এখানে জিবত মানে অসত্য, অমূলক, ভিত্তিহীন ও অকল্যাণকর জিনিস। ইসলামের পরিভাষায় যাদু, টোনা, টোটকা, ভাগ্য গণনা, জ্যোতিষ, তন্ত্রমন্ত্র ইত্যকার কুসংস্কার ও অন্যান্য যাবতীয় কাল্পনিক বানোয়াট কথা ও ক্রিয়াকর্মকে জিবত বলা হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে,“পশুর ধ্বনি থেকে আন্দাজ ভালো-মন্দ অর্থ গ্রহণ করা, মাটির ওপর পশুর পদচিহ্ন থেকে সৌভাগ্য মূলক ভালো-মন্দ ধারণা নেয়া এবং এই ধরনের কাল্পনিক আন্দাজ অনুমানভিত্তিক সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য চিহ্নিত করার বিভিন্ন পদ্ধতি জিবত এর অন্তরভ’ক্ত।”

উল্লেখিত আলোচনা ও আল কুরআনের আয়াতের আলোকে যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিল করা কিতাব বা আইন অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা বা শাসন কার্য পরিচালনা না করে বরং মানুষের মস্তিস্ক তৈরী আইন অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করে সে-ই প্রকৃত তাগুত। পক্ষান্তরে যারা সন্তুষ্ট চিত্তে সেই সব বিচার-ফয়সালা ও শাসন কার্য মেনে নেবে তারা তাগুতের অনুসারী। ফিরাউন নিজেকে ‘আনা রাব্বুকুমুল আ’লা’ ‘আমি তোমাদের সর্বোচ্চ রব’ দাবী করেছিল। ফলে ফিরাউন তাগুত আর দেশের যারা তার এ দাবী মেনে নিয়েছিল, তারা তাগুতের অনুসারী। আল্লাহ তা’আলা মুসা আ; কে নির্দেশ দিলেন, ‘ফিরাউনের কাছে যাও, সে তাগুত হয়ে গেছে।” সুতরাং কোন শাসক যদি মানুষের তৈরী আইন-কানুন দ্বারা দেশ পরিচালনা করে তবে তাগুতের অনুসারীর তকমা থেকে নিজেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য অবশ্যই এই শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধনে নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

Posted ১:১২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(805 বার পঠিত)

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.