শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ | ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

তায়াক্কুল ঈমানের পরিপূর্ণতাকে প্রকাশ করে

জাফর আহমাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪

তায়াক্কুল ঈমানের পরিপূর্ণতাকে প্রকাশ করে

তায়াক্কুল অর্থ হচ্ছে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। আল্লাহর পথনির্দেশনার ওপর ব্যক্তির পূর্ণ আস্থা থাকা। সে মনে করবে আল্লাহ প্রকৃত সত্য সম্পর্কে পুর্ণ জ্ঞাত। তিনি নৈতিক চরিত্রের যে নীতিমালা, হালাল ও হারামের যে সীমারেখা এবং পৃথিবীতে জীবন যাপনেনের জন্য যেসব নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধান দিয়েছেন তাই সত্য ও সঠিক এবং সেসব মেনে চলার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত। দ্বিতীয়ত: মানুষের নির্ভরতা তার নিজের শক্তি, যোগ্যতা, মাধ্যম ও উপায় উপকরণ ব্যবস্থাপনা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের সাহায্য সহযোগীতার ওপর হবে না। তাকে একথা পুরোপুরি মনে রাখতে হবে যে, দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিটি ব্যাপারে তার সাফল্য প্রকৃতপক্ষে নির্ভর করে আল্লাহর তাওফীক ও সাহায্যের ওপর।

আর সে আল্লাহর তাওফীক ও সাহায্যের উপযুক্ত কেবল তখনই হতে পারে যখন সে তার সন্তুষ্টিকে লক্ষ্য বানিয়ে এবং তার নির্ধারিত সীমারেখাসমূহ মেনে কাজ করবে। তৃতীয়ত: ঈমান ও নেক কাজের পথ অবলম্বনকারী এবং বাতিলের পরিবর্তে ন্যায় ও সত্যের জন্য কর্মতৎপর। আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল হয়ে সে সেই সব লাভ, উপকার ও আনন্দকে পদাঘাত করবে যেই সব বাতিলের পথ অনুসরণ করলে সহজেই লাভ করা যায়। বরং তায়াক্কুলকারী ন্যায় ও সত্যের ওপর দৃঢ়পদ থাকার কারণে ক্ষতি, দু:খ,কষ্ট এবং বঞ্চনা তার ভাগ্যে নেমে আসবে জেনেও ধৈর্যের সাথে তা সহ্য করবে।

ঈমানের সাথে তায়াক্কুলের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। একটি ছাড়া অন্যটির পূর্ণতা পায় না। তায়াক্কুল ছাড়া যে ঈমান তা সাদামাটা স্বীকৃতি ও ঘোষণা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এই ধরণের ঈমানদার থেকে ইসলামের গৌরবময় ফলাফল অর্জিত হতে পারে না। প্রকৃত ঈমানদার সার্বক্ষণিক আল্লাহ ওপর নির্ভরশীল হবে। কারণ তায়াক্কুল গভীর ঈমান থেকেই সৃষ্টি হয়। এই ঈমান তাকে এ প্রেরণা যোগায় যে, তোমার সকল অবস্থা মহান আল্লাহ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। মহুর্তের জন্যও তিনি তোমাকে তাঁর পর্যবেক্ষণ থেকে দুরে রাখেন না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“যা-ই তোমাদের দেয়া হয়েছে তা কেবল দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের উপকরণ মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা যেমন উত্তম তেমনি চিরস্থায়ী তা সেই সব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং তাঁর উপর নির্ভর করে।”(সুরা শূরা:৩৬) এখানে আল্লাহর প্রতি ভরসাকে ঈমানের অনিবার্য দাবী এবং আখেরাতের সফলতার জন্য একটি জরুরী বৈশিষ্ট্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তায়াক্কুল কিভাবে করতে হয় তা শিক্ষা লাভের জন্য আমরা একজন মহিয়সী নারী, হযরত ইবরাহিম আ: এর প্রিয়তমা স্ত্রী, হযরত ইসমাইল আ: স্নেহময়ী মাতা, আল্লাহর একজন বিশেষ বান্দীহযরত হাজেরা আ: এর কাছে যেতে পারি। আপনারা সকলেই জানেন, আল্লাহর প্রতি তার অগাধ তায়াক্কুল বা নির্ভরশীলতা ও ধৈর্যশীলতাকে এতটাই ভালবাসেন যে, সারা পৃথিবীর মুসলমানদের জন্য সাফা-মারওয়ার সাঈকে হজে¦র একটি গুরুত্বপূর্ণ হুকুমে পরিণত করে দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,“নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমুহের অন্তর্ভুক্ত।”(বাকারাঃ১৫৮) একজন নি:সঙ্গ নারী জনমানবহীন এ মরভূমিতে কিভাবে আল্ল­াহর ওপর পূর্ণ ভরসা করেছিলেন, কিভাবে তিনি নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দিয়েছিলেন। কিভাবে তিনি শুস্ক ধূলি-ধুসর মরভূমি ও পাথরসমৃদ্ধ দুটো পাহাড়ে ছুটোছুটি করে আল্লাহর অনুগ্রহের তালাশ করেছিলেন। আমরা সকলের জানা আছে যে, হযরত ইব্রাহীম আ: তাঁর প্রানপ্রিয় পুত্র ইসমাঈল আ: ও প্রিয়তমা স্ত্রী হাজেরাকে আল্ল­াহ তা’আলার নির্দেশে এ নির্জন স্থানে রেখে যান। তবে এটিও মনে করার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই যে তিনি তাঁর স্ত্রী-সন্তানের ভালবাসা ছিল না। এটিও তাঁর প্রতি কতগুলো পরীক্ষার একটি। তিনি তাঁর সন্তান ও স্ত্রীকে কতটুকু ভালবাসতেন তা তাঁর দো’আ থেকে আমরা বুঝতে পারি। তিনি তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের দৃষ্টি সীমার বাইরে পাহাড়ের আড়ালে গিয়ে মহার রবের কাছে আবেদন করলেন,“হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তৃণলতাহীণ উপত্যকায় নিজের বংশধরের একটি অংশকে আপনার ঘরের কাছে অভিবাসিত করলাম। এ জন্য যে, তাঁরা যেন নামায কায়েম করে। তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফল-মূল দিয়ে তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দাও। যাতে তারা তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।” (সুরা ইব্রাহীম:৩৭)

অভিবাসিত মা হাজেরা তাঁর শিশুকে বুকে জড়িয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে এ অভিবাসনকে সšু‘ষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছিলেন। যখন তাদের পানি ও খাদ্য শেষ হয়ে গেল, তখন মা ও শিশু ক্ষুধা ও পিপাসায় কাতর হয়ে গেলেন। শিশু ইসমাঈলকে উপত্যকায় রেখে মা পানির জন্য সাফায় দৌঁড়ালেন, চারদিকে দৃষ্টি মেলে পানির সন্ধান পেলেন না। দৌঁড়ালেন মারওয়ায় সেখানেও পানির সন্ধান মেলেনি। এভাবে সাফা-মারওয়া ও মারওয়া-সাফা দু-পাহাড়ের মাঝে বেশ কয়েকবার দৌঁড়ানোর পর প্রিয় সন্তানের অবস্থা অবলোকন করার জন্য শিশুর কাছে এলেন। এসে দেখেন শিশুর অনতিদুরে মাটি ফুুঁড়ে আল্লাহর রহমতের বারিধারা প্রবলবেগে উতলে উঠছে। মা হাজেরা পানির উৎসের চারদিকে বাঁধ দিলেন এবং মশক পুড়ে শিশুকে পান করান এবং নিজেও পান করেন। এভাবে আল্ল­াহ তা’আলা তাঁর ধৈর্য ও নির্ভরশীলতার ফলস্বরূপ তাঁর দুঃখ, চিন্তা, কষ্ট ও দূর্ভাবনা দুর করে দিলেন। এখানে হযরত ইব্রাহিম আ: এর ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুলও প্রকাশিত হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানকে তৃণ-লতাহীন ধুুষর ও নির্জন মরুভূমিতে রেখে যান মুলত: আল্ল­াহর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল রেখেই। তিনি জানতেন তাঁর প্রভু এঁদের বিনাশ করবেন না। তাঁর এ নির্ভরশীলতা প্রকাশ পেয়েছে মহান প্রতিপালকের কাছে করা তাঁর দো’আ থেকে। দো’আটিতে তিনি বলেছেন, “তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফল-মূল দিয়ে তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দাও। যাতে তারা তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।”

মা হাজেরা এর আল্লাহর প্রতি নির্ভশীলতাকে এতটাই পছন্দ করলেন যে. এই নির্ভরশীলতা অনাগত মু’মিন-মুসলমানগণ যাতে নিজেদের মধ্যে অনুশীলন করতে পারে সে জন্য এই দু’টো পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়াদৌড়িকে আল্লাহ মু’মিনদের জন্য কর্তব্য হিসাবে ধার্য করেছেন।আল্লাহ তা’আলা বলেন,“নিশ্চয় সাফা ও মার

ওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ হজ্জ বা উমরাহ করে তার জন্য এই দু’পাহাড়ের মাঝখানে সাঈ করায় কোন গুনাহ নাই। আর যে ব্যক্তি স্চ্ছোয় ও সাগ্র্রহে কোন সৎ কাজ করে আল্লাহ তা জানেন এবং তার যথার্থ মর্যাদা ও মূল দান করবেন।”(সুরা বাকারা:১৫৮)
তাই এখানে প্রদক্ষিণকারী সম্মানিত মেহমানগণের গভীর দৃষ্টি ফেলতে হবে যে, আমরা কিসের জন্য এবং কি কারণে দৌড়াচ্ছি, সাফা থেকে মারওয়া-মারওয়া থেকে সাফা কেন এই কসরত? মুলত: এখান থেকে যে শিক্ষাটুকু আমাদের নিতে হবে, তাহলো আমরা আল্ল­াহর

রহমতের জন্য দৌড়াচ্ছি। যারা একান্তই আল্লাহর ওপর ভরসা করেন, তাদের জন্য এ দৌড়টুকু আল্ল­াহর ওপর নির্ভরশীলতাকে আরো বৃদ্ধি ও আরো সুদৃঢ় করে দিবে। এ পূণ্যময় স্মৃতি মন্থরকারী হৃদয় একমাত্র আল্লাহর জন্য উন্মুখ থাকবে, তার ভরসাস্থল হবে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা। তার যা কিছুর প্রয়োজন, তা আল্লাহকেই বলবে। সম্মানিত আল্লাহর মেহমানগণ যেন অত্যন্ত দারিদ্র ও বিনয়ের সাথে প্রদক্ষিণ করেন এবং মহান আল্লাহর নিকট নিজেদের অভাব, প্রয়োজন এবং অসহায়তার কথা পেশ করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও, আমি তাদের কাছেই আছি।

যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত, এ কথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে।”(সুরা বাকারা : ১৮৬) যদিও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে আমাদের বাস্তব চক্ষু দ্বারা দেখতে পাই না এবং ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভবও করতে পারি না, তথাপি তাঁকে দূরে মনে করা ঠিক নয়। আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক বান্দার অতি নিকটেই অবস্থান করেন। প্রত্যেক মানুষ ইচ্ছা করলে সব সময় তার কাছে আর্জি পেশ করতে পারে। এতে তিনি সবকিছু শুনেন। কারণ তিনি সামিউম বাছির বা শ্রবণকারী ও মহাদ্রষ্টা। এমন কি মনে মনে যা আবেদন করা হয় তাও তিনি শুনতে পান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ মনের গোপণ কথাও জানেন।”(সুরা ইমরানঃ১১৯) শুধুমাত্র শুনতে পান না বরং সে সম্পর্কে তিনি সিদ্ধান্তও ঘোষনা করেন।

মানুষ অজ্ঞতা ও মুর্খতার কারণে যে সমস্ত অলীক, কাল্পনিক ও অক্ষম সত্তাদের উপাস্য ও প্রভু গণ্য করে তাদের কাছে দৌড়ে যায়, অথচ তারা তার কোন আবেদন নিবেদন শুনতে পায় না। এবং আবেদনের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও তাদের নেই। আল্ল­াহ গভীর ও প্রখর দৃষ্টি সম্পন্ন। তিনি তার বান্দাদের কার্যাবলী, সংকল্প ইচ্ছা পুরোপুরি ভালোভাবেই জানেন। কারণ তিনি বাছিরুম বিল ইবাদ। তিনি লাতিফ বা সুক্ষ্মদর্শী। সুতরাং তায়াক্কুল একমাত্র তাঁর ওপরই করতে হবে এবং যা কিছুর প্রয়োজন তাকেই বলতে হবে।

Posted ১:৩৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রমজান ও জাকাত
রমজান ও জাকাত

(794 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.