বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
‘খেয়াল’ না বলে ‘খামখেয়াল’ বলাই বোধ হয় সঙ্গত। যুক্তরাষ্ট্রের এক নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার তার দৈর্ঘ তিন ইঞ্চি বৃদ্ধির সার্জারি করানোর জন্য ৭৫,০০০ ডলার ঋণ নিয়ে সার্জারি সম্পন্ন করিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত তাকে প্রতি মাসে ১,২০০ ডলার কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করা হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে চল্লিশোর্ধ বয়সী ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে জন লাভডেল, যিনি অনলাইন ব্যাংক ‘সোফি’ থেকে ঋণ গ্রহণ করেন, এর অতিরিক্ত আর কোনো পরিচয় জানানো হয়নি লোকটির। মানুষের শারীরিক অবয়ব দীর্ঘ করার সার্জারি করার এক প্রৃতিষ্ঠান দ্য লিম্বপ্লাস্টিক্স ইন্সটিটিউট তিন থেকে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত দৈর্ঘ বৃদ্ধি করার এ ধরনের সার্জারির জন্য ৭০,০০০ ডলার থেকে ১৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত ফি নেয়। জন লাভডেল জিকিউ ম্যাগাজিনকে বলেছেন, পৃথিবী দীর্ঘ মানুষের কদর করে। অতএব আমি আমার পা তিন ইঞ্চি লম্বা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েক মাস ধরে চালানো এই যন্ত্রণাদায়ক সার্জারি করিয়েছি।’ সার্জারির আগে তার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট সাড়ে ৮ ইঞ্চি, যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষ মানুষের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চির চেয়ে সামান্য কম। তিনি দীর্ঘ হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার পর এই সুযোগ কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কে কতটা দীর্ঘ হতে চায় তার ওপর নির্ভর করে সার্জারির ব্যয়, যা ৭০ হাজার ডলার থেকে দেড় লাখ ডলারের মধ্যে। তিনি তিন ইঞ্চি দীর্ঘ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ব্যয় হয় ৭৫ হাজার ডলার। তিনি বলেন, কেউ যদি দীর্ঘাকৃতির মানুষ হয়, তাহলে লোকজন তার দিকে ফিরে তাকায়। সার্জারি করার পর আমি যখন জিমে যাচ্ছি, লোকজন আমার দিকে তাকাচ্ছে।
জন লাভডেল দীর্ঘ হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারেন ফেসবুক থেকে যে কেভিন দেবিপ্রসাদ এ ধরনের সার্জারি করেন। উত্তর আমেরিকায় পা দীর্ঘ করার এ ধরনের কয়েকজন সার্জনের মধ্যে তিনি একজন। ২০১৬ সালে তিনি নেভাদা স্টেটের লাস ভেগাসেন কাছে ‘লিম্বপ্লাস্টিক ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং করোনা মহামারী চলাকালে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা তুঙ্গে ওঠেছিল বলে দেবিপ্রসাদ জিকিউ ম্যাগাজিনকে জানান। তিনি জানান, পা দীর্ঘ করা কসমেটিক সার্জারির অংশ, যা এখন সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। যদিও প্রক্রিয়াটি কষ্টকর, কিন্তু প্রতি বছর শত শত লোক এই ধরনের সার্জারি করাচ্ছেন। এ সার্জারি কষ্টকর, এবং দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও আছে অনেক, কিন্তু কয়েক ইঞ্চি উচ্চতা বাড়াতে অনেকেই এই কষ্ট ও ঝুঁকি নিচ্ছেন অবলীলায়।
জিকিউ ম্যাগাজিনের মতে, সার্জারির প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিবরণই যথেষ্ট মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টিকর, সার্জন প্রথমে রোগীর উরুর হাড় ভেঙ্গে কাটেন বা ভেঙে ফেলেন এবং তাতে পরিবর্তনযোগ্য ধাতব পেরেক প্রবেশ করান। যে একটি ম্যাগনেটিক রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে পেরেকগুলোকে তিন মাস ধরে প্রতিদিন একটু একটু করে বৃদ্ধি করা হয়। হাড়ের বৃদ্ধি মন্থর এবং ধীরে ধীরে হাড় লম্বা হয় ও পা সুস্থ হতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। দেবিপ্রসাদ বলেন: “যার সার্জারি করানো হয় তার মধ্যে এক ধরনের মানসিক শৃঙ্খলা থাকতে হবে, অনেকটা ম্যারাথনের প্রশিক্ষণের মতো।” তিনি একথাও জানান যে এই সার্জারি করানো লোকদের মধ্যে বহুসংখ্যক হাইটেক কর্মী আছেন, যারা গুগল, আমাজন, মাইক্রোসফট ও ফেসবুকের মত বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
জন লাভডেলেরও আগে সার্জারি করিয়ে উচ্চতা বৃদ্ধি করেছেন নিউইয়র্কের স্যাম বেকার।
তার বয়স যখন ১৬ বছর, হাইস্কুলের দেখলেন, তার সহপাঠীরা সবাই ধীরে ধীরে তার চেয়ে লম্বা হয়ে গেছে। কলেজে যাওয়ার পর দেখলেন ছেলেদের চেয়ে তো বটেই – অনেক মেয়ের চেয়েও তিনি অনেক খাটো। খাটো ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরা প্রেম করতে চায়না। এমনকি কম উচ্চতার জন্য স্বাভাবিকভাবে কারো সঙ্গে সেভাবে মিশতেও পারতেন না তিনি। স্যামের বয়স যখন ৩০ বছর, তিনি জানতেন তার উচ্চতা বৃদ্ধির বয়স চলে গেছে, কিন্তু তবুও তার একটা আশা ছিল যে হয়তো তিনি আরো খানিকটা লম্বা হবেন। তিনি ২০১৫ সার্জারি করান ২০১৫ সালে। তার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, যা সার্জারির পর দাঁড়ায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। তার মতে, উচ্চতা মানুষের জীবনের ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। অনেক মেয়েই তাদের চেয়ে খাটো ছেলেদের সঙ্গে প্রেম করতে চায় না। সবচেয়ে কষ্টকর যে কথাটা আমার মাথায় ঘুরতো তা হলো আমি হয়তো জীবনে কাউকে বিয়ে করতেই পারবো না। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, ইতালি, তুরস্ক এমনকি ভারতসহ ১২টিরও বেশি দেশে পা লম্বা করার সার্জারি হচ্ছে এখন। কেউ কেউ ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতা বৃদ্ধি করতে পেরেছেন। বিবিসি এ নিয়ে বেশ কিছু দেশের ক্লিনিকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি বছর এ ধরনের ১০০ থেকে ২০০টি সার্জারি হচ্ছে। অপারেশন হচ্ছে। অন্য দেশগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম -প্রতি বছর ২০ থেকে ৪০টি। দিন দিন এর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে।
Posted ২:৩৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh